উসুল আল ফিকহ

অনুবাদঃ মুহাম্মাদ আসিম উল্লাহ ইবন মুহিব

সংশোধন ও পুনঃনিরীক্ষণঃ আবু হাযম মুহাম্মাদ সাকিব চৌধুরী বিন শামস আদ দীন আশ শাতকানী

সংজ্ঞা (تعريفه):

উসুল আল ফিকহ – এর সংজ্ঞা দুভাবে বোঝা যায়ঃ

প্রথমতঃ

এক একটি করে অর্থাৎ ‘উসূল’ (أصول) শব্দটির এবং ‘ফিকহ’ (فقه) শব্দটির বর্ণনা হতে।

উসুল (الأصول) হল আসল (أصل) শব্দের বহুবচন। আর তা হচ্ছে সেটি যার উপর অপর কিছু স্থাপিত। আর এ থেকেই দেয়ালের আসল’ যা হচ্ছে এর ভিত্তি।  আর একটি গাছের আসল (أصل) হচ্ছে তা যা হতে এর শাখা-প্রশাখার উদ্গম ঘটে। যেভাবে সুমহান আল্লাহ বলেনঃ

أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلاً كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاء

তুমি কি দেখ না, আল্লাহ কিভাবে উপমা বর্ণনা করেছেনঃ পবিত্র সুন্দর বাক্য হলো পবিত্র বৃক্ষের মত। তার আসল বা শিকড় মজবুত এবং শাখা আকাশে উত্থিত। সূরা ইব্রাহীম (১৪:২৪)

‘ফিকহ’ এর ভাষাগত অর্থ হল বুঝশক্তি বা বুঝবৃত্তি (الفهم)। যেভাবে সুমহান আল্লাহর বক্তব্যেঃ

وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي ۝  يَفْقَهُوا قَوْلِي

এবং আমার জিহবা থেকে জড়তা দূর করে দিন। যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। সূরা ত্বা-হা (২০:২৭-২৮)

এর ইস্তিলাহী (اصطلاح) বা প্রথাগত অর্থ হলঃ

معرفة الأحكام الشرعية العملية بأدلتها التفصيلية

বিস্তারিত দলিল সহকারে শারিয়াতের আমলসংক্রান্ত হুকুমসমূহের বুঝ।

‘মারিফাহ’ (معرفة) শব্দের উদ্দেশ্য হল জ্ঞান(العلم, আল-ইলম) এবং অনুমান(الظن, আয-যন)। কেননা, ফিকহ এর হুকুমসমূহ কখনো নিশ্চিত বিশ্বাসের (يقين , ইয়াকীন) উপর স্থাপিত, আর কখনো অনুমানের(الظن) উপর স্থাপিত;  যা অনেক ফিকহের মাসআলাতে বিদ্যমান।

‘আল-আহকাম আস- শরীয়াহ’ (الاحكام  الشرعية) বা ‘শরীয়াহর হুকুম’ এর উদ্দেশ্য হলঃ শারীয়াত হতে নিরূপিত হুকুমসমূহ। যেমন ওয়াজিব এবং হারাম। সুতরাং এ থেকে বের হয়েছে বুদ্ধিভিত্তিক হুকুমসমূহ; যেমন আংশিক হতে পরিপূর্ণ বড়। এ থেকে আরও বার হয়ে গিয়েছে প্রকৃতি বিষয়ক হুকুমসমূহ যেমন যদি আবহাওয়া শান্ত থাকে তবে সে ক্ষেত্রে শীতের রাতে শিশির পরার বিষয়টি।

‘আল-আমলিয়্যাহ’ (العملية)– শব্দের উদ্দেশ্য হল যা ই’তিকাদ বা বিশ্বাসের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। যেমনঃ সালাত ও যাকাত। সুতরাং এ হতে বের হয়েছে যা কিছু ই’তিকাদ বা বিশ্বাসের সাথে সংশ্লিষ্ট। যেমনঃ তাওহীদ এবং এবং আল্লাহর নাম ও তাঁর গুণাবলী সম্পর্কে জানা। সুতরাং এগুলোর কোন কিছুকেই পরিভাষাগতভাবে ফিকহ বলা হয় না।

‘আল- আদিল্লাহ আত তাফসিলিয়্যাহ’ (ادلتها التفصيلية) এর উদ্দেশ্য হলঃ ফিকহ এর দলিল যা ফিকহ এর বিস্তারিত বিষয়াদির সাথে সংযোজিত। সুতরাং এ হতে বার হয়ে গিয়েছে উসুল উল ফিকহ, কেননা এর ভিতর অনুসন্ধান কেবলমাত্র সাধারণীকৃত ফিকহের দলিলের উপর হয়ে থাকে।

দ্বিতীয়তঃ

এই বিশেষ শাস্ত্রের নামানুসারে বর্ণনার মাধ্যমে। সুতরাং একে বর্ণনা করা হয় এভাবেঃ

علم يبحث عن أدلة الفقه الإجمالية، وكيفية الاستفادة منها، وحال المستفيد

ফিকহের সাধারনীকৃত দলিল হতে লব্ধ জ্ঞান (العلم) এবং এর থেকে কিভাবে কল্যাণ অর্জন করা যায় এবং কল্যাণ অর্জনকারীর অবস্থা।

আল-ইজমালিয়্যাহ (الاجمالية) বা সাধারনীকৃতের অর্থ হল সাধারনিকৃত কাইদাহ (القاعدة) সকল। যেমনঃ কোন আদেশের অর্থই তার ওয়াজিব হওয়া আর কোন বিষয় সঠিক হবার অর্থই তা আদায় করা। সুতরাং এ হতে বার হয়ে গিয়েছে বিস্তারিত দলিল (التفصيلية)। সুতরাং কোন কাইদাহর উদাহরণ দেওয়ার স্বার্থ ব্যতীত উসুলুল ফিকহে এর উল্লেখ করা হয় না।

‘আল কাইফিয়্যাত উল- ইস্তিফাদাতা মিনহা’(كيفية لاستيقادة منها) (কিভাবে কল্যাণ অর্জন করা যায়) এর উদ্দেশ্য হলঃ এ বুঝ যে কিভাবে কেউ শারীয়াতের হুকুমসমূহ এর দলিল সমূহ হতে কল্যাণ লাভ করে – তা বিভিন্ন শব্দাবলীর হুকুম সমূহ এবং এদের দলিল সমূহের ব্যপারে পড়ালেখার মাধ্যমে। আর তা ‘আম (عام), খাস (خاص), মুতলাক (مطلق), মুকায়্যিদ (مقيد), নাসিখ(ناسخ), মানসুখ(منسوخ), এবং অন্যান্য সকল হতে[1]। আর এই কল্যাণ অর্জনকারী এ সকলের বুঝের মাধ্যমে কল্যাণ লাভ করে ফিকহের হুকুম সমূহ জানবার মাধ্যমে এর দলিল সমূহ হতে।

‘হাল আল-মুস্তাফিদ’ (حال المستفيد) (কল্যাণ অর্জনকারীর অবস্থা) এর উদ্দেশ্য হলঃ কল্যাণ অর্জনকারীর অবস্থা সম্পর্কিত বুঝ; আর তিনি হচ্ছেন (প্রকৃতপক্ষে) মুজতাহিদ। তাঁকে কল্যাণ অর্জনকারী নামকরণ করা হয় তিনি নিজে কল্যাণ অর্জন করেন হুকুমসমূহের ব্যপারে এর দলিল সমূহ হতে, যাতে তিনি ইজতিহাদের স্তরে পৌঁছাতে পারেন। সুতরাং উসুলুল ফিকহে মুজতাহিদ, ইজতিহাদের শর্তসমূহ, হুকুমসমূহ এবং এ প্রকার অন্যান্য বিষয়ের বুঝ অনুসন্ধান করা হয়।

উসুল আল ফিকহ এর উপকারীতাঃ

নিশ্চয়ই উসুল আল ফিকহ একটি সুমহান শাস্ত্র, এর গভীর গুরুত্বের কারণে খুবই প্রতিদান লাভমূলক একটি শাস্ত্র। আর এর কল্যাণ অর্জন করা হয় যাতে এর দ্বারা এ ক্ষমতা অর্জন করবার মাধ্যমে যাতে সঠিক এবং নিশ্ছিদ্র ভিত্তির উপর শারীয়াতের হুকুমসমূহ এর দলিল সমূহ হতে বাহির করা যায়।

প্রথম যিনি এই শাস্ত্রকে একটি স্বতন্ত্র শাস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তিনি হলেনঃ ইমাম আশ- শাফঈ মুহাম্মদ ইবন ইদ্রিস, আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন। এরপর অন্য অনেক উলামা এ বিষয়ে তাকে অনুসরণ করেছেন আর অনেক সংখ্যক বই পুস্তক রচনা করেছেন, যা কিছু বিভিন্ন গদ্য- পদ্য রচনায়, ছোট বড় আয়তনে প্রকাশিত, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা একে পেয়েছি নিজস্ব স্বত্বায় এবং বৈশিষ্টে।

 

স্বত্বাধিকারী © www.darhadith.com

Share: