প্রশ্নঃ ব্যবহারকৃত স্বর্ণালংকারে কি যাকাত দিতে হবে, যদি তা নিসাব পরিমাণ হয়?
*উত্তর* ঃ যাকাত দিতে হবে।
✅ আবদুল্লাহ ইবনু শাদ্দাদ ইবনুল হাদ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা *নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকট গেলে তিনি বললেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এসে আমার হাতে রূপার বড় আংটি দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে ‘আয়িশাহ! এটা কি? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার উদ্দেশে সাজসজ্জার জন্য আমি এটা বানিয়েছি। তিনি বললেন, তুমি কি এগুলোর যাকাত দাও? আমি বললাম, না, অথবা আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন। তিনি বললেন, তোমাকে (জাহান্নামের) আগুনে নিয়ে যেতে এটাই যথেষ্ট।*[1]
সহীহ। বইঃ সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), অধ্যায়ঃ ৩/ যাকাত (كتاب الزكاة), হাদিস নম্বরঃ ১৫৬৫
[1] হাকিম (১/৩৮৯) ইমাম হাকিম বলেন : এ হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ, তবে তারা এটি বর্ণনা করেননি। ইমাম যাহাবী তার সাথে একমত পোষণ করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
✅ ‘আমর ইবনু শু‘আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত। *একদা এক মহিলা তার কন্যাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলো। তার কন্যার হাতে দু‘টি মোটা স্বর্ণের কঙ্কন ছিলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এর যাকাত দাও? সে বললো, না। তিনি বললেনঃ তুমি কি এতে সন্তুষ্ট যে, মহান আল্লাহ এর বিনিময়ে ক্বিয়ামাতের দিন তোমাকে আগুনের দু’টি কঙ্কন পরিয়ে দিবেন? বর্ণনাকারী বলেন, সে তৎক্ষণাত তা খুলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে রেখে দিয়ে বললো, এ দু‘টি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের জন্য।*
হাসান। বইঃ সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), অধ্যায়ঃ ৩/ যাকাত (كتاب الزكاة), হাদিস নম্বরঃ ১৫৬৩
তিরমিযী (অধ্যায় : যাকাত, অনুঃ গহনার যাকাত, হাঃ ৬৩৭, ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি অনুরূপ বর্ণনা করেছেন মুসান্না ইবনু সাব্বাহ ‘আমর ইবনু শু‘আইব হতে, মুসান্না ইবনু সাববাহ এবং ইবনু লাহী‘আহ দু’জনেই হাদীসে দুর্বল), নাসায়ী (অধ্যায় : যাকাত, অনুঃ গহনার যাকাত, হাঃ ২৪৭৮), আহমাদ (হাঃ ৬৬৬৭) শায়খ আহমাদ শাকির বলেন : এর সানাদ সহীহ। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
🌈 *কেউ যদি ১ বছর পর্যন্ত খাঁটি সোনা ৮৫ গ্রাম বা রুপা ৫৯৫ গ্রাম বা সম পরিমাণ ক্যাশ টাকার মালিক হয় তাকে যাকাত দিতে হবে শতকরা ২.৫%।*
=========================
*স্বর্ণ বা ক্যাশ টাকার যাকাত* 1⃣
🔴 *খাদ্য শস্যের যাকাত❓* 2⃣
*যে শস্য শুধুমাত্র বৃষ্টির পানি অথবা শুধুমাত্র কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় না। বরং কিছু অংশ বৃষ্টির পানিতে এবং কিছু অংশ কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়, সে শস্যের যাকাত বের করার নিয়ম হল , যদি বৃষ্টির পানির পরিমাণ বেশী হয় তাহলে العشر অর্থাৎ দশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে। আর কৃত্রিম সেচের পরিমাণ বেশী হলে نصف العشر অর্থাৎ বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে। আর যাদি অর্ধাংশ বৃষ্টির পানিতে এবং অর্ধাংশ কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় তাহলে ثلاثة أرباع العشر অর্থাৎ দশ ভাগের তিন-চতুর্থাংশ যাকাত দিতে হবে। অর্থাৎ কারো ২০ মণ ধান উৎপন্ন হওয়ার জন্য বৃষ্টির পানির পরিমাণ বেশী হলে তার দশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ দুই মণ যাকাত দিতে হবে। আর কৃত্রিম সেচের পরিমাণ বেশী হলে বিশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ এক মণ যাকাত দিতে হবে। আর অর্ধাংশ বৃষ্টির পানি ও অর্ধাংশ নিজের সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হলে তার দশ ভাগের তিন-চতুর্থাংশ অর্থাৎ এক মণ বিশ কেজি যাকাত দিতে হবে। ইবনু কুদামা (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কোন মতভেদ আছে বলে আমার জানা নেই।*[1]
[1]. ইবনু কুদামা, শারহুল কাবীর ২/৫৬৩ পৃঃ; মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৬/৭৮ পৃঃ; ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমাহ ৯/১৭৬ পৃঃ; ফিকহুস সুন্নাহ ১/৩৫৪ পৃঃ; নায়লুল আওতার ৪/২০১ পৃঃ; ইউসুফ কারযাবী, ফিকহুয যাকাত ১/৩৩৩ পৃঃ।
=========================
🔴 *খাদ্য শস্যের যাকাত❓* 2⃣
*৮টি খাতে যাকাত পাওয়ার যোগ্য কারা❓* 4⃣
[১] ফকীর
(২)মিসকীন
[৩] যাকাত আদায়ের কাজে নিযুক্ত কর্মচারীদের জন্য
[৪], যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য (যাদের মধ্যে মুসলিম হওয়ার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে)
[৫], দাসমুক্তিতে
[৬] ঋণ ভারাক্রান্তদের জন্য
[৭], আল্লাহ্র পথে জিহাদকারী
[৮] মুসাফিরদের জন্য।
রেফারেন্স ঃ( সুরা তওবা-৬০)
=============÷÷÷==========
*৮টি খাতে যাকাত পাওয়ার যোগ্য কারা❓* 4⃣
*অভাবী আত্মীয়কে যাকাত* 3⃣
✅ *অভাবী নিকটাত্মীয়কে যাকাত দেওয়ার বিধান*✅
কোন নিকটাত্মীয় প্রকৃতপক্ষে যাকাতের হকদার হলে তাকে যাকাত দেওয়া যাবে। এমনকি এতে দ্বিগুণ ছওয়াব অর্জিত হবে।
*সালমান ইবনু আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘মিসকীনকে ছাদাক্বাহ্ দিলে একটি ছাদাক্বাহ্ হয়। কিন্তু সে যদি রক্ত সম্পর্কীয় নিকটাত্মীয় হয়, তবে নেকী দ্বিগুণ হয়। (১) ছাদাক্বার নেকী (২) আত্মীয়তা রক্ষার নেকী’*।[1]
[1].মুসনাদে আহমাদ হা/১৬২৭৭; তিরমিযী হা/৬৫৮; মিশকাত হা/১৯৩৯; আলবানী, সনদ সহি
*অভাবী আত্মীয়কে যাকাত* 3⃣🌀
✅ *পশুর যাকাত* –5⃣
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ✅ *ত্রিশটি গরুর যাকাত (দিতে হবে) একটি এক বছরের এড়ে বাছুর অথবা বকনা বাছুর।*
✅ *চল্লিশটি গরুর যাকাত (দিতে হবে) একটি দুই বছরের বাছুর।*
(তিরমিজী৬২২,
ইবনুমাজাহ১৮০৪)
==========================
✅ *পশুর যাকাত* –5⃣
✅ যে সকল সম্পদে যাকাত ফরজ:
১. স্বর্ণ= সর্বনিম্ন ৮৫ গ্রাম
২. রৌপ্য= সর্বনিম্ন ৫৯৫ গ্রাম
৩. নগদ অর্থ। ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্য অথবা ৮৫ গ্রাম স্বর্ণের যে দাম হয় সে পরিমান নগদ ক্যাশ থাকলে তাতে যাকাত দিতে হবে-চাই তা নিজের কাছে জমা থাকুক অথবা ব্যাংকে সংরক্ষিত থাকুক।
উল্লেখ্য যে, ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্যের বর্তমান বাজার দর প্রায় ২,৬০০০/ টাকা। (কিন্তু সময়ের ব্যবধানের দামের ক্ষেত্রে কমবেশি হতে পারে)
সুতরাং এ পরিমান টাকা কারো কাছে এক বছর জমা থাকলে তাতে যাকাত দেয়া ফরজ। অবশ্য ইচ্ছে করলে ৮৫ গ্রাম স্বর্ণের দামও ধরা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ আরও বেশি হবে।
৪. ব্যবাসায়িক পণ্য
৫. জমিন থেকে উৎপাদিত রবিশষ্য (যেগুলো শুকিয়ে সংরক্ষণযোগ্য) যেমন, ধান, গম, শরিসা, ভু্ট্টা ইত্যাদি অথবা ফলফলাদি (যেগুলো শুকিয়ে সংরক্ষণযোগ্য), যেমন খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি।
৬. গবাদী পশু (নির্দিষ্ট পরিমান সাপেক্ষে)
⛔ যে সকল জিনিসে যাকাত নেই:
বসবাসের জন্য বসত ভিটা, ঘর-বাড়ি, ফসলের জায়গা-জমি, বাড়ির ব্যবহারিক আসবাবপত্র, ব্যবহারের জন্য গাড়ি, ভাড়ার জন্য বাস, ট্রাক, লঞ্চ ইত্যাদি পরিবহন, ভাড়ার জন্য তৈরিকৃত আবাসিক বিল্ডিং বা দোকান, নিজস্ব দোকান, দোকানের জায়গা ও ফার্নিচার (তবে দোকানের পণ্যের যাকাত দিতে হবে) ইত্যাদি। এগুলোতে যাকাত নেই।
🔰 পুকুরের মাছেও যাকাত নেই। তবে মাছ বিক্রয়ের অর্থ যদি নিসাব পরিমান হয় তাহলে তাতে যাকাত দিতে হবে।
🔰 কাঁচামাল-যেমন, শাক-সবজি, আম, কাঠাল, লিচু ইত্যাদি ফলমূলে যাকাত নেই। তবে এগুলো বিক্রয়ের অর্থ নিসাব পরিমান হলে তাতে যাকাত দিতে হবে।
🔰 অনুরূপভাবে দোকান, আবাসিক বিল্ডিং, বাস-ট্রাক ইত্যাদিতে যাকাত নাই। কিন্তু এগুলো থেকে প্রাপ্ত ভাড়া নিজের অন্যান্য অর্থের সাথে যুক্ত করে নিসাব পরিমান হলে যাকাত বের করতে হবে।
🔰 জায়গা-জমি, গবাদী পশু ও বিল্ডিং ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয় করলে সেগুলো ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে যাকাত দিতে হবে।
আল্লাহু আলাম
▪▪▪▪▪▪
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব