মূলঃ শাইখ মুহাম্মাদ বিন জামীল যাইনু
ব্যাখ্যা সংকলনঃ আবু হাযম মুহাম্মাদ সাকিব চৌধুরী বিন শামস আদ দীন আশ শাতকানী
স্বত্বাধিকারীর অনুমতিদাতাঃ যুলফিকার ইবরাহীম মেমোন আল আথারী।
ব্যাখ্যা সংকলনঃ
আকিদাহ ও ফিকহের সম্পর্ক
الفقه (আল ফিকহ)
শাব্দিক অর্থঃ শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন বলেন,
আল ফিকহ এর শাব্দিক অর্থঃ فهم (ফাহম, অর্থ বুঝ)। আর এর মধ্যে রয়েছে আল্লাহর বাণীঃ
وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي
এবং আমার জিব হতে গিট উম্মুক্ত করে দিন। (২০ঃ২৭)
يَفْقَهُوا قَوْلِي
যাতে তারা আমার বক্তব্য বুঝতে পারে। (২০ঃ২৮)
(الأصول من علم الأصول, মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন, পৃষ্ঠা ৯, দার তাইবাহ)
ইস্তিলাহী অর্থঃ শাইখ আবুল মা’আলী আব্দুল মালিক বিন আব্দুল্লাহ বিন ইয়ুসুফ বিন মুহাম্মাদ আল জুওয়াইনি বলেন,
معرفة الأحكام الشرعية التي طريقها الإجتهاد
ফিকহ হচ্ছে শারীয়াগত হুকুম সমূহের معرفة (মা’রিফাহ), যার(অর্থাৎ মা’রিফাতের) তরীকা হচ্ছে ইজতিহাদ।
(شرح الورقات في أصول الفقه, আব্দুল্লাহ বিন সালেহ আল ফাওযান, পৃষ্ঠা ২১, মাক্তাবাতু দারুল মিনহাজ)
শাইখ আব্দুল্লাহ বিন সালেহ আল ফাওযান বলেন,
معرفة (মা’রিফাহ) তে রয়েছে দু প্রকারঃ ال يقين (আল ইয়াকিন) এবং الظن (আধ ধান্ন)।
ال يقين (আল ইয়াকিন)ঃ যা কিছুকে বুঝা হয় সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা দানকারী বুঝ হিসেবে। যেমন এই মা’রিফাহ যে (ওয়াজিব) সালাত পাঁচটি, যিনা করা হারাম।
الظن(আধ ধান্ন)ঃ যা কিছুকে বুঝা হয় সবচাইতে সম্ভাবনাময় দিকের উপর। যেমন ফিকহের অনেক মাস’আলাতে। যেমন এই মা’রিফাহ যে সালাতুল ওয়িতর সুন্নাহ অধিকাংশ উলামাদের মতে।
(شرح الورقات في أصول الفقه, আব্দুল্লাহ বিন সালেহ আল ফাওযান, পৃষ্ঠা ২২, মাক্তাবাতু দারুল মিনহাজ)
শাইখ মুহাম্মাদ বিন আলী বিন মুহাম্মাদ আশ শাওকানী বলেন,
العلم بالأحكام الشرعية, عن أدلة التفصيلية بالإستدلال
(ফিকহ হচ্ছে) শারীয়াতের আহকামের দ্বারা জ্ঞান, বিস্তারিত দলিল সহকারে, দলিল প্রদানের মাধ্যমে।
বলা হয়ঃ
التصديق بأعمال المكلفين التي تقصد لا لإعتقاد
মুকাল্লিফ (অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্বারা ইবাদাত পালনকারী) দের আমল দ্বারা সত্যায়ন, যা প্রত্যাশিত, যা আকিদাহ এর উদ্দেশ্যে নয়।
বলা হয়ঃ
إعتقاد الأحكام الشرعية الفرعية عن أدلتها التفصيلية
শারীয়াতের শাখাজনিত হুকুম সমূহের ব্যপারে ই’তিকাদ যা বিস্তারিত দলিলের মাধ্যমে।
(إرشاد الفحول, মুহাম্মাদ বিন আলী বিন মুহাম্মাদ আশ শাওকানী, পৃষ্ঠা ৪২, খন্ড ১, দারুস সালাম)
শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন আহকামের সংজ্ঞায় মুকাল্লিফ দের আমলের সাথে এর সম্পর্ক প্রসঙ্গে বলেন,
মুকাল্লিফ দের আমল এর সাথে সম্পর্কের অর্থঃ যা মুকাল্লিফ দের আমলের সাথে সম্পর্কযুক্ত, হোক তা কথা বা কাজ, হোক তা কিছু করবার বা তরক করবার।
(شرح أصول من علم الأصول, মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন, পৃষ্ঠা ৪৩, দার ইবনুল জাওযী))
শাইখ আব্দুল্লাহ বিন সালেহ আল ফাওযান বলেন,
تكليف (তাকলিফ) এর শাব্দিক অর্থ কোন কিছুর সাথে সম্পৃক্ত যাতে কষ্ট রয়েছে। আর ইস্তিলাহি অর্থঃ কোন কিছুকে অনুসন্ধান যাতে কষ্ট রয়েছে।
(شرح الورقات في أصول الفقه, আব্দুল্লাহ বিন সালেহ আল ফাওযান, পৃষ্ঠা ২৫, মাক্তাবাতু দারুল মিনহাজ)
শাইখ আব্দুল্লাহ বিন সালেহ আল ফাওযান শাইখ আল জুওয়াইনীর আহকামের সংজ্ঞায় মুকাল্লিফের কাজ সম্পর্কে বলেন,
এর উদ্দেশ্যঃ বাহ্যিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গের দ্বারা সংঘটিত সকল প্রকার কাজ, যদিও তা এমন কাজ হয় সমাজ-সংস্কৃতিতে সাধারণভাবে প্রচলিত বক্তব্যের বিরোধী হয়। আর এটি তাদের যাতগত বৈশিষ্ট্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত বিষয় সমূহকে বাহির করে দিয়েছে, আর সেটি এখানে উদ্দেশ্য নয়। যেভাবে আল্লাহ বলেছেন,
وَلَقَدْ خَلَقْنَاكُمْ ثُمَّ صَوَّرْنَاكُمْ
এবং নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের সৃষ্টি করেছি এর পর তোমাদের রূপ দিয়েছি। (৭ঃ১১)
এবং এর দ্বারা বাহির হয়ে গিয়েছে যা কিছু ই’তিকাদের সাথে সম্পর্কিত। সুতরাং এ ইসতিলাহে এটি হুকুম নয়।
আর মুকাল্লিফে দু প্রকার রয়েছেঃ
১। এ মূহুর্তে মুকাল্লিফঃ এর দ্বারা বুঝানো হয় প্রত্যেক বালিগ ও আক্কেলদার ব্যক্তি।
২। যে এ মূহুর্তে মুকাল্লিফ নয়ঃ কিন্তু তাও সে মুকাল্লিফের স্তুরের অন্তর্ভূক্ত। এর দ্বারা বুঝানো হয় বয়সে ছোট এবং উম্মাদকে। সুতরাং এদের দুজনের প্রত্যেকে মুকাল্লিফের স্তরে রয়েছে। কিন্তু তাদের উপর তাকলিফ করবার বিপক্ষে কোন বাধাপ্রদানকারী কারণ রয়েছে। আর তা বয়সে ছোট হওয়া (সংকলকঃ অথবা পাগলামি)। আর তাদের আক্কেল এ কারণে অনুপস্থিত। আর যদি এ বাধাপ্রদানকারী কারণের অপসারণ ঘটে, তবে তার উপর তাকলিফের হুকুম প্রবর্তিত হবে।
(شرح الورقات في أصول الفقه, আব্দুল্লাহ বিন সালেহ আল ফাওযান, পৃষ্ঠা ২৫, মাক্তাবাতু দারুল মিনহাজ)
শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন ফিকহের সংজ্ঞায় বলেন,
معرفة الأحكام الشرعية العملية بأدلتها التصيلية
শারীয়াতের আমলসংক্রান্ত হুকুম সমূহের ব্যপারে মা’রিফাহ যা বিস্তারিত দলিলের মাধ্যমে।
(الأصول من علم الأصول, মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন, পৃষ্ঠা ৯, দার তাইবাহ)
শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন العملية (আল আমালিয়্যাহ, অর্থ আমলসংক্রান্ত) এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ
এটি তা যা ই’তিকাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়, যেমন সালাত ও যাকাত, ইত্যাদি। সুতরাং এ থেকে বাদ পড়েছে তা কিছু যা ই’তিকাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত, যেমন আল্লাহর একত্ববাদ এবং তাঁর নাম সমূহ, তাঁর গুণাবলীর ব্যপারে বুঝ, এ সকল কিছুকে ইসতিলাহে ফিকহ বলা হয় না।
(الأصول من علم الأصول, মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন, পৃষ্ঠা ৯, দার তাইবাহ)
শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন নিজের বইয়ের নিজের উপরোক্ত লাইনের ব্যাখ্যায় নিজেই বলেন,
কিন্তু শারীয়াতে এবং ভাষায় একে ফিকহ বলা হয়। কখনো বলা হয় ইস্তিলাহে কোন তর্ক নেই যদি তা শারিয়ার বিরোধী না হয়। তাই যতক্ষণ তা শারীয়ার বিরোধী না হয়। অর্থাৎ ফকিহগণ বলেন, আমরা বিশ্বাস করি তাওহীদের জ্ঞান ফিকহের মধ্য হতে, কিন্তু আমাদের ইস্তিলাহ এই যে ফিকহ এই প্রকারের মধ্যে জ্ঞানের মাস’আলার একটি বিশেষ প্রকার, সেক্ষেত্রে আমরা তাদের অস্বীকার করিনা।
কিন্তু আমরা তাদের বলি, নিশ্চয়ই তাওহীদের জ্ঞান বরঞ্চ বড় ফিকহ। কেননা ফিকহ হচ্ছেঃ আল্লাহর অস্তিত্ব বিষয়ে ফিকহ, তাঁর নাম এবং গুণাবলী বিষয়ে ফিকহ, তাঁর কর্ম বিষয়ে, তাঁর হুকুম বিষয়ে। সুতরাং এ সকলকেই ফিকহ নামকরণ করা হয়।
আর আল্লাহর ব্যপারে বুঝ – তাঁর নাম সমূহ, তাঁর গুণাবলী সমূহ – সকল বিষয়ের চাইতে বড়। এ কারণেই উলামাবৃন্দ একে নামকরণ করেছেন الفقه الأكبر(আল ফিকহ আল আকবর, অর্থাৎ বৃহত্তম ফিকহ)। আর এর উপরেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম এর বক্তব্যঃ
من يرد الله بن خيرا يفقهه في الدين
আল্লাহ যার সম্পর্কে উত্তম ইচ্ছা করেন, তাকে তিনি দীনের ফিকহ দান করেন।
(বুখারী কিতাবুল ইলম, বাব আল্লাহ যার সম্পর্কে উত্তম ইচ্ছা করেন, তাকে তিনি দীনের ফিকহ দান করেন, হাদিস ৭১)
(মুসলিম কিতাবুয যাকাত, বাব প্রশ্ন করবার ব্যপারে মানা, হাদিস ১০৩৭)
(شرح أصول من علم الأصول, মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উথাইমীন, পৃষ্ঠা ৩০-৩১, দার ইবনুল জাওযী)
শাইখ আব্দুর রাহমান বিন নাসির আস সা’দি “আল্লাহ যার সম্পর্কে উত্তম ইচ্ছা করেন, তাকে তিনি দীনের ফিকহ দান করেন” হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,
আর দীনের ফিকহে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে উসুল উল ঈমান, ইসলামের শারীয়াত এবং হুকুমসমূহ, ইহসানের হাকিকত, সুতরাং দীনের মধ্যে এ তিনটির প্রত্যেকটি রয়েছে। যেভাবে জিবরীলের হাদিসে এসেছে, যখন তিনি নবী ﷺ কে জিজ্ঞেস করলেন ইসলাম, ঈমান এবং ইহসান সম্পর্কে, আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম জবাব দেন এদের সংজ্ঞা দেবার মাধ্যমে। তখন তিনি ঈমানকে বর্ণনা দিলেন এর ছয়টি উসুল দিয়ে, ইসলামকে বর্ণনা দিলেন এর পাঁচটি কায়িদা দিয়ে, আর ইহসানের বর্ণনা দিলেন এভাবে,
ان تعبد الله كأنك تراه, و إن لم تكن تراه, فإنه يراك
আপনি আল্লাহকে ইবাদাত করবেন এমন করে যেন আপনি তাঁকে দেখতে পান, আর যদিও আপনি তাঁকে দেখতে না পান, নিশ্চয়ই তিনি আপনাকে দেখতে পারছেন।
সুতরাং এতে প্রবেশ করেছে আকিদাহ, সালাফদের মাযহাব সম্পর্কে বুঝ এবং এতে বাহ্যিক এবং আন্তরিকভাবে একমত হওয়া, বিরোধীদের মাযহাব এবং কিতাব ও সুন্নাহর বিরোধিতাকারীদের ব্যপারে বর্ণনা সমূহ সম্পর্কে জ্ঞান। এবং এতে প্রবেশ করেছেঃ ফিকহের জ্ঞান – উসুল ও শাখাপ্রশাখা, ইবাদাতের হুকুম সমূহ, মু’আমালাতের হুকুম সমূহ, অপরাধ জনিত বিষয়াদি ইত্যাদি। এবং এতে রয়েছে ঈমানের হাকিকতের ব্যপারে বুঝ, আল্লাহর কিতাব এবং সুন্নাহ নির্দেশিত পথ এবং সে অনুযায়ী চলা।
এমনিভাবে এতে প্রবেশ করেছে সে সকল পথে জ্ঞানার্জন করা যা দীনের ফিকহ বুঝতে সাহায্য করে, যেমন আরবী ভাষাজ্ঞান এবং এর শাখাপ্রশাখা সমূহ।
সুতরাং যার আল্লাহ কল্যাণ করতে চান, তিনি তাকে এ সকল বিষয়ে ফিকহ বা বুঝ দান করেন, এবং এ বিষয়ে তাওফীক দান করেন।
এবং এই হাদিসের ফিকহ এই নির্দেশ করে যে এ সকল জ্ঞান হতে সম্পূর্ণরূপে বিমূখ হয়, সে ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই আল্লাহ তার ব্যপারে কল্যাণ চান নি, নিশ্চিতভাবে তাকে বঞ্চিত করেছেন সে সকল উপায় হতে যা দিয়ে কল্যাণ অর্জন করা যায় ও যার দ্বারা আনন্দ তথা সাফল্য অর্জন করা যায়।
(بهجة قلوب الأبرار, আব্দুর রাহমান বিন নাসির আস সা’দি, পৃষ্ঠা ২৫)
(সংকলকঃ লক্ষ্য করুন উলামাবৃন্দ আকিদাহ কে ফিকহের অন্তর্ভূক্ত বললে একে ফিকহুল আকবর বা বড় ফিকহ বলে তাকলিফি বা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কাজ হতে পৃথক করেছেন।)
শাইখ আবুল হারিথ নাদির বিন সায়িদ আল মুবারাক উপরোক্ত ফিকহের সংজ্ঞায় আল আমালিয়্যাহ শব্দটির ব্যাখ্যায় বলেন,
আমল সংক্রান্ত যেমন সালাত, যাকাত, ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদি। সুতরাং এ থেকে বেড়িয়ে গিয়েছে আমল সংক্রান্ত বিষয় যেমন তাওহীদ, আখলাকের বিষয় যেমন সত্যবাদী হওয়ার আবশ্যিকতা, আমানত রক্ষার আবশ্যিকতা, ইত্যাদি। সুতরাং এ সকলকে উসুলিগণের ইস্তিলাহে ফিকহ বলা হয় না।
(أصول الفقه المهمة, মূল আব্দুর রাহমান বিন নাসির আস সা’দি, টীকা শাইখ আবুল হারিথ নাদির বিন সায়িদ আল মুবারাক, পৃষ্ঠা ৪৩, দার ইবনু হাযম)
(সংকলকঃ লক্ষ্য করবেন শাইখ আবুল হারিথ তাওহীদ, আখলাককেও আমল সংক্রান্ত বিষয় বলেছেন। এর কারণ হচ্ছে এ সকল বিষয়ের সাথে অন্তরের কথা এবং কাজ সম্পৃক্ত। ইনশা আল্লাহ ঈমান পর্বে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হবে।)
(সংকলকঃ আল্লাহ তার কিতাবে দীনের বুঝের সাধারণ অর্থে সকল ক্ষেত্রে ফিকহ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। লক্ষ্য করুন নিচের উদাহরণ তিনটিঃ
আল্লাহ বলেন,
وَمَا كَانَ الْمُؤْمِنُونَ لِيَنفِرُواْ كَافَّةً فَلَوْلاَ نَفَرَ مِن كُلِّ فِرْقَةٍ مِّنْهُمْ طَائِفَةٌ لِّيَتَفَقَّهُواْ فِي الدِّينِ وَلِيُنذِرُواْ قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُواْ إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ
আর মু’মিনদের জন্যে এটা সমীচিন নয় যে সবাই একত্রে বের হয়ে পড়ে। সুতরাং এমন কেন করা হয় না যে, তাদের প্রত্যেকটি বড় দল হতে এক একটি ছোট দল বহির্গত হয়, যাতে তারা দীনের ব্যপারে ফিকহ বা বুঝ অর্জন করতে পারে এবং যাতে তারা তাদের নিজ কওমদের ভীতি প্রদর্শন করতে পারে যখন তারা ওদের নিকট প্রত্যাবর্তন করে, যাতে তারা সতর্ক হয়। (৯ঃ১২৩)
আল্লাহ আরও বলেন,
وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالإِنسِ لَهُمْ قُلُوبٌ لاَّ يَفْقَهُونَ بِهَا
আমি বহু জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্যে, তাদের হৃদয় রয়েছে কিন্তু তা দিয়ে তারা বুঝতে পারে না। (৭ঃ ১৭৯)
আল্লাহ আরও বলেন,
قَدْ فَصَّلْنَا الآيَاتِ لِقَوْمٍ يَفْقَهُونَ
নিশ্চয়ই আমি চিহ্ন সমূহ বর্ণনা করলাম, সে কওমের প্রতি যারা বুঝতে পারে। (৬ঃ৯৮))
শাইখ সালেহ বিন মুহাম্মাদ বিন নুহ আল ফাল্লানী বলেন,
ফকিহ শব্দটি সালাফদের নিকট … বরঞ্চ তাঁর ব্যপারে প্রযোজ্য যিনি কিতাব, সুন্নাহ সাহাবাদের আথার, তাদের পরবর্তী উম্মতের উলামাদের ব্যপারে জ্ঞানার্জন করেছেন। আর যে ব্যস্ত থেকেছে লোকের মতের মধ্যে এবং তা থেকেই দীন, মাযহাব গ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর কিতাব এবং রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাত, সাহাবাদের, তাবিয়িদের বিচারাদি ও আথার তার পিছন হতে ছুঁড়ে ফেলেছে, তার ব্যপারে সাধারণভাবে ফাকিহ নামটি ব্যবহ্রত হয় না, বরং সে মূলত মনানুসরণকারী, পক্ষপাতী।
(إيقاظ همم أولي الأبصار, সালেহ বিন মুহাম্মাদ বিন নুহ আল ফাল্লানী, পৃষ্ঠা ২৮)
শাইখ ইবনুল কায়্যিম আল জাওযিয়্যাহ বলেন,
বরং সালাফেরা ফিকহ শব্দটিকে কখনোই ব্যবহার করতেন না যতক্ষণ না তা আমলের সাথে সংশ্লিষ্ট হত। যেমন, সা’দ ইবনু ইব্রাহীম কে জিজ্ঞেস করা হল মদিনার সবচাইতে বড় ফিকহ সম্পন্ন ব্যক্তি সম্পর্কে। তিনি বললেন, তাঁদের মধ্যে সবচাইতে আল্লাহভীরু যিনি।
(مفتاح دار السعادة, ইবনুল কায়্যিম আল জাওযিয়্যাহ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩১৯)
আকিদাহর স্থান
আকিদাহ এর স্থান শুধুই অন্তর, এবং সঠিক আকিদার প্রতিফলন ঘটে মানুষের সৎ কাজের মাধ্যমে। অনেকেই আকিদার ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে দীনের বিশ্বাস এবং কাজের সবটাকেই আকিদা বলে দাবী করে বসেন, কিন্তু এটি ভূল। কেননা ই’তিকাদকে তাকলিফি আমল থেকে পৃথক হিসেবে গণ্য করা হয়। যার ফলে অনেক উলামা আকিদা এবং ফিকহকে আলাদা করে বর্ণনা করেছেন। আবার যারা আকিদাহকে ফিকহ এর অন্তর্গত বলে দাবী করেছেন, তারাও আকিদার সাথে তাকলিফি কাজের পার্থক্য করেছেন। এ বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি।
আমরা এর আগে আকিদার সংজ্ঞায় পেয়েছি তাওহীদ সহ অন্তরের ভিতর সকল ইবাদাত আকিদার অন্তর্গত, কেননা ঈমানের ছয়টি রুকনের বিশ্বাস অংশই আকিদার প্রধান ভিত্তি। আর আকিদা অন্তরের বাণী এবং এর ফলস্বরূপ ইবাদাত অন্তরের কাজ।
শাইখ আবুল ফিদা ইসমাঈল বিন উমার বিন কাথীর নিম্নোক্ত তাফসীর পেশ করেনঃ
لَّيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّواْ وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَالْمَلآئِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَى حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّآئِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُواْ وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاء والضَّرَّاء وَحِينَ الْبَأْسِ أُولَئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ
তোমরা যে তোমাদের মুখমণ্ডল পূর্ব বা পশ্চিমে প্রত্যাবর্তিত কর তাতে আল বির (আল্লাহ ভীতি, পরহেযগারিতা) নেই, বরং আল বির (হচ্ছে তার গুণ) যে ব্যক্তি আল্লাহ, শেষ দিন বা কিয়ামাত, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। এবং তাঁরই ভালবাসা অর্জনের জন্যে আত্মীয়, ইয়াতিম, দরিদ্র, পথিকগণ, ভিক্ষুকদের ও দাসত্ব হতে মুক্তি দিতে ধন-সম্পদ দান করে, আর সালাত কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, আর তাদের দেওয়া অঙ্গীকার পূর্ণকারী, আর যারা অভাবে-ক্লেশে-রোগব্যধিতে-যুদ্ধে ধৈর্যশীল। এরাই হচ্ছে তারা যারা সত্যায়ন করেছে, আর তারাই হচ্ছে মুত্তাকী (ধর্মভীরু) (২ঃ১৭৭)
أُولَئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا (এরাই হচ্ছে তারা যারা সত্যায়ন করেছে) এর অর্থ এরাই তারা যারা যাদের এ সকল গুণ দ্বারা গুণান্বিত করা হয়েছে, এরাই হচ্ছে তারা যারা তাদের ঈমানে সত্যায়ন করেছে। কেননা তারা সত্যায়ন করেছে আল ঈমান আল কালবী কে (অন্তরের) কথা এবং কাজের মাধ্যমে।
(تفسير القرأن العظيم, আবুল ফিদা ইসমাঈল বিন উমার বিন কাথীর, পৃষ্ঠা ৪৪, দার ইবনুল জাওযী)
এ বিষয়ে ঈমান পর্বে বিস্তারিত আসছে ইনশা আল্লাহ।
স্বত্বাধিকারী © www.darhadith.com।