আল্লাহর নিকট হেদায়েত লাভের দশটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দুআ (আরবি টেক্সট, বাংলা উচ্চারণ ও অনুবাদ সহ)

হাদিসে কুদসি: আবু যর আল গিফারি রা. থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহর নিকট থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,

يَا عِبَادِي! كُلُّكُمْ ضَالٌّ إلَّا مَنْ هَدَيْته، فَاسْتَهْدُونِي أَهْدِكُمْ.
“হে আমার বান্দাগণ, আমি যাকে হেদায়েত (সঠিক পথের সন্ধান) দিয়েছি সে ছাড়া তোমরা সকলে পথভ্রষ্ট। সুতরাং তোমরা আমার কাছে হেদায়েত চাও আমি তোমাদেরকে হেদায়েত দান করব।” (সহিহ মুসলিম)
সে কারণে মহান রবের দরবারে আমাদের হেদায়েত বা সঠিক পথের সন্ধান চাওয়া করা খুব বেশি প্রয়োজন। কারণ তিনি সুপথ না দেখালে আমরা নিশ্চিতভাবে পথভ্রষ্ট, ধ্বংস প্রাপ্ত এবং অন্ধকারের অতল তলে হারিয়ে যাব। (আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করুন)।

নিম্নে কুরআন-সহিহ হাদিস থেকে হেদায়েত প্রার্থনা এবং হেদায়েত পাওয়ার পর তার উপর অবিচল থাকা সংক্রান্ত অতি গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত দশটি দুআ উপস্থাপন করা হল:

◈ দুআ: ১
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ
“হে আল্লাহ, আমাদেরকে সরল পথ দেখাও।” (সূরা ফাতিহা: ৬)

◈ দুআ: ২
اللَّهُمَّ إِنِي أَسْأَلُكَ الهُدَى، وَالتُّقَى، وَالعفَافَ، والغنَى‎
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস আলুকাল হুদা ওয়াত-তুকা ওয়াল আ’ফাফা ওয়াল গিনা।
অর্থ: “হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে সুপথ, আল্লাহ ভীতি,  চরিত্রের নির্মলতা ও অভাব মুক্তির প্রার্থনা করছি।” (সুনানে তিরমিযী, হাদিসটি সহিহ)

◈ দুআ: ৩
اللَّهُمَّ أَلْهِمْنِي رُشْدِي، وَأَعِذْنِي مِنْ شَرِّ نَفْسِي
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আলহিমনী রুশদী, ওয়া আয়িজনী মিন শাররি নাফসী।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমাকে হেদায়েত দান করো এবং আমার নফসের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করো।”
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুসাইন ইবনে আলী (রা.)-কে দুটি বাক্য দ্বারা দুআ করতে শিখিয়েছিলেন।
(সুনানে তিরমিজি। অবশ্য এ হাদিসটিকে শাইখ আলবানি রহ. জঈফ বলেছেন [জঈফুল জামে/৪০৯৮] তবে কোনও দুআ ভালো অর্থবোধক হলে তা জইফ সনদে বর্ণিত হলেও কোনও সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ- যেখানে নিজের ইচ্ছেমত দুআ করার সুযোগ আছে)

◈ দুআ: ৪

رَبِّ أَعِنِّي وَلاَ تُعِنْ عَلَىَّ وَانْصُرْنِي وَلاَ تَنْصُرْ عَلَىَّ وَامْكُرْ لِي وَلاَ تَمْكُرْ عَلَىَّ وَاهْدِنِي وَيَسِّرِ الْهُدَى لِي

উচ্চারণ:  রাব্বি আ’য়িননী ওয়ালা তু’য়িন আ’লাইয়া। ওয়ানসুরনি ওয়ালা তানসুর আ’লাইয়া। ওয়ামকুর লী ওয়ালা তামকুর আ’লাইয়া, ওয়াহদিনী ওয়া ইসসিরিল হুদা লী।


অর্থ: ‘‘হে আমার রব, আমাকে সাহায্য করো এবং আমার বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করো না। আমাকে সহযোগিতা করো এবং আমার বিরুদ্ধে কাউকে সহযোগিতা করো না। আমার জন্য কৌশল এঁটো, আমার বিরুদ্ধে কৌশল এঁটো না। আমাকে হেদায়েত দান করো, আমার জন্য হেদায়েতের পথ সহজতর করো এবং যে ব্যক্তি আমার উপর অত্যাচার ও সীমা লঙ্ঘন করে তার বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করো। [সুনানে ইবনে মাজাহ- অধ্যায়: ২৮/ দোয়া, পরিচ্ছেদ: ২৮/২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুআ-সহিহ]

◈ দুআ: ৫

‏ اللَّهُمَّ رَبَّ جِبْرَائِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَافِيلَ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ اهْدِنِي لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ إِنَّكَ تَهْدِي مَنْ تَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ ‏‏ ‏

“হে আল্লাহ, জিবরিল, মিকাইল ও ইসরাফিলের প্রভু, আসমান-জমিনের মালিক, দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সবকিছুর ব্যাপারে সম্যক অবগত, আপনার বান্দারা যে সব বিষয়ে মতবিরোধ করছে আপনি তাতে ফয়সালা করেন। হকের যি বিষয়ে মতবিরোধ দেখা যায় সে বিষয়ে  আপনার অনুমতিক্রমে আমাকে সঠিক পথ দেখান। নিশ্চয় আপনি যাকে ইচ্ছা তাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন।” (সহিহ মুসলিম)

◈ দুআ: ৬
اَللّٰهُمَّ اهْدِنِيْ وَسَدِّدْنِيْ – اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْهُدٰى وَالسَّدَادَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাহদিনী ওয়া সাদ্দিদনী, আল্লাহুম্মা ইন্নী আস-আলুকাল হুদা ওয়াস সাদাদ।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমাকে হেদায়েত দান কর, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত কর। হে আল্লাহ! তোমার নিকট হেদায়েত ও সঠিক পথ কামনা করছি।”
[সহিহ মুসলিম]

◈ দুআ: ৭
اللَّهُمَّ ثَبِّتْنى وَاجْعَلْهنى هَادِيًا مَهْدِيًّا
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাব্বিতনি ওয়াজ’আলনী হাদিয়াম মাহদিয়া।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমাকে স্থির রাখুন ও হিদায়েত কারী ও হিদায়েত প্রাপ্ত বানান ” [সহিহ মুসলিম]

◈ দুআ: ৮

اللهمَّ اهْدِني فيمن هديتَ, وعافِني فيمن عافيتَ, وتولَّني فيمن توليتَ, وبارِكْ لي فيما أعطيتَ, وقِنِي شرَّ ما قضيتَ, فإنك تقضي ولا يُقْضَى عليك, وإنَّهُ لا يَذِلُّ من واليتَ, ولا يَعِزُّ من عاديتَ, تباركتَ ربنا وتعاليتَ, لا مَنْجَا منك إلا إليكَ

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাহদিনী ফী মান হাদাইত।
ওয়া-ফিনী ফীমান আ’-ফাইত।
ওয়া তাওয়াল্লানী ফী-মান তাওয়াল্লাইত।
ওয়া বা-রিকলী ফী মা আত্বাইত।
ওয়া ক্বিনী শাররা মা-ক্বায্বাইত।
ফাইন্নাকা তাক্বয্বী অলা য্যুকয্বা আলাইক। ইন্নাহু লা য়্যাযিল্লু মাঁউ ওয়া-লাইত। ওয়া লা য়্যাইয্‌যু মান আ’-দাইত। তাবা-রাকতা রাব্বানা ওয়া তাআ’লাইত। লা মানজা মিনকা ইল্লা ইলাইক।

অর্থ: “হে আল্লাহ! তুমি যাদেরকে হেদায়েত করেছ, আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত কর। তুমি যাদেরকে নিরাপদ রেখেছ আমাদেরকে তাদের দলভুক্ত কর।
তুমি যাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছ, আমাদেরকে তাদের দলভুক্ত করো।
তুমি আমাদেরকে যা দিয়েছ তাতে বরকত দাও।
তুমি যে অমঙ্গল নির্দিষ্ট করেছ তা হতে আমাদেরকে রক্ষা করো। নিশ্চয় তুমিই ফয়সালা করো; তোমার ওপরে ফয়সালা করার কেউ নেই। তুমি যার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছ, সে কোনও দিন অপমানিত হবে না এবং তুমি যার সাথে শত্রুতা করেছ, সে কখনো সম্মানিত হতে পাবে না। হে আমাদের রব, তুমি বরকতময় ও সুমহান। তোমার পাকড়াও থেকে বাঁচার উপায় নাই তোমার আশ্রয় ছাড়া।”
হাসান বিন আলি রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বিতর সলাতে বলার জন্য এ দুআটি শিখিয়েছেন।”
[তিরমিযী, ইরওয়াউল গালীল গ্রন্থে (হা/ ৪২৯), শাইখ আলবানি এটিকে সহীহ বলেছেন]

◈ দুআ: ৯ (হেদায়েত লাভের পর অন্তরের বক্রতা হতে মুক্তি চাওয়ার দুআ)

‎رَبَّنَا لاَ تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ
উচ্চারণ: রব্বানা-লা-তুযিগ্ কুলূবানা- বা’দা ইয্ হাদাইতানা-অহাবলানা-মিল্ লাদুনকা রহমাহ , ইন্নাকা আন্তাল্ ওয়াহহা-ব।
অর্থ: “হে আমাদের রব, আপনি হিদায়েত দেয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন।”

◈ দুআ: ১০ (হেদয়েত পাওয়ার পর তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার দুআ)
اللَّهُمَّ مُصَرِّفَ القُلُوبِ صَرِّفْ قُلُوبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ
উচ্চারণ: “ইয়া মুসাররিফাল কুলুব সাররিফ কুলুবানা আলা ত্ব-আতিক।”
অর্থ: “হে হৃদয়সমূহের পরিবর্তনকারী, আমাদের হৃদয়গুলোকে আপনার আনুগত্যের দিকে ঘুরিয়ে দিন।” (সহিহ মুসলিম)
‎يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِى عَلَى دِينِكَ
উচ্চারণ: ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুব, সাব্বিত কলবি আ’লা দীনিক।
অর্থ: “হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর সুদৃঢ় করে দাও।” (তিরমিযি, সহিহুল জামে/৭৯৮৭)
▬▬▬▬◈◍◈▬▬▬▬
সংকলনে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

Share: