জিহাদের নামে যারা আত্মহনন করে, তারা মূলত শয়তানের অনুসারী
জিহাদের নামে যারা আত্মহনন করে, তারা মূলত শয়তানের অনুসারীশায়খ সালিহ ইবন ফাওযান আল-ফাওযান
অনুবাদঃ আবূ মুআয সুহাইল বিন সুলতান
সৌদি আরবের জেষ্ঠ্য আলেমগণের কাউন্সিল এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য সম্মানিত শায়খ সালিহ ইবন ফাওযান আল-ফাওযান তাদেরকে মূলতঃ শয়তানের অনুসারী বলে উল্লেখ করেছেন যারা আত্মহত্যার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জিহাদ করছে বলে দাবী করে।
এই সমস্ত অপকর্মের সাথে যারা জড়িত, তারা কখনও কোন বিশেষজ্ঞ আলেমের শরণাপন্ন হয়নি বা সম্মানিত আলেমগণের নিকট হতে কোন জ্ঞান লাভ করেনি। তার পরিবর্তে তারা নিজেদেরকে মূল মুসলিম সমাজ থেকে পৃথক করে গোপণে ঐ লোকদের সঙ্গ দেয় যারা সবচেয়ে ‘নিকৃষ্ট মানুষের’ ন্যায় ঘৃণ্য অপকর্ম করে। অতঃপর তারা বিভিন্ন ব্যক্তির মগজ-ধোলাই করতে থাকে যতক্ষণ না তাদের অন্তরে সাধারণ মানুষের প্রতি চরম শত্রুতা বিদ্বেষ সঞ্চার করে এবং এই ধরণের জঘন্য আক্রমন চালায়। তারা মুসলিমদের কাফের গণ্য করে এবং হত্যা করে, ভবন উড়িয়ে দেয় নির্বিচারে হত্যা করে শিশু-বৃদ্ধ, পুরুষ-নারী, মুসলিম এবং অমুসলিম, যারা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও শান্তিপূর্ণ বাঁচার অধিকার (VISA লাভের মাধ্যমে) নিয়ে ইসলামিক রাষ্ট্রে প্রবেশ করে। আর এসবই ঘটে এই ধরণের নষ্ট মতবাদ ও ভ্রষ্ট আদর্শের কারণে।
এইটা তাদের করুণ পরিণতি যারা পথহারা দুশ্চরিত্র লোকের হাত ধরে সফলতার পথে চলতে চায়। শেষ জমানার বিভিন্ন ফিৎনা ও পরীক্ষা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই ধরণের আহ্বানকারী ও প্রচারকারীর ব্যাপারে সাবধান বাণী উচ্চারণ করে বলেন,
نَعَمْ دُعَاةٌ إِلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوْهُ فِيْهَا
<হাঁ, তখন জাহান্নামের দিকে আহবানকারীদের উদ্ভব ঘটবে। যারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে তাকেই তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে।>
[সহীহ বুখারী:: অধ্যায়ঃ ৬১/ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য :: হাদিস নম্বরঃ ৩৬০৬ | 3606 ]
*******************************************************
উপরোক্ত হাদীসটি ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম সংগ্রহ করেছেন।
হুযাইফাহ ইবনু ইয়ামান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন আর আমি তাঁকে অকল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম; এই ভয়ে যেন আমি ঐ সবের মধ্যে পড়ে না যাই। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা জাহিলীয়্যাতে অকল্যাণকর অবস্থায় জীবন যাপন করতাম অতঃপর আল্লাহ আমাদের এ কল্যাণ দান করেছেন। এ কল্যাণকর অবস্থার পর আবার কোন অকল্যাণের আশঙ্কা আছে কি? তিনি বললেন, হাঁ, আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ঐ অকল্যাণের পর কোন কল্যাণ আছে কি? তিনি বললেন, হাঁ, আছে। তবে তা মন্দ মেশানো। আমি বললাম, মন্দ মেশানো কী? তিনি বললেন,
قَوْمٌ يَهْدُوْنَ بِغَيْرِ هَدْيِيْ تَعْرِفُ مِنْهُمْ وَتُنْكِرُ
{এমন একদল লোক যারা আমার সুন্নাত ত্যাগ করে অন্যপথে পরিচালিত হবে। তাদের কাজে ভাল-মন্দ সবই থাকবে।}
আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, অতঃপর কি আরো অকল্যাণ আছে? তিনি বললেন,
نَعَمْ دُعَاةٌ إِلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوْهُ فِيْهَا
{হাঁ, তখন জাহান্নামের দিকে আহবানকারীদের উদ্ভব ঘটবে। যারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে তাকেই তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে।}
আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এদের পরিচয় বর্ণনা করুন। তিনি বললেন,
هُمْ مِنْ جِلْدَتِنَا وَيَتَكَلَّمُوْنَ بِأَلْسِنَتِنَا
{তারা আমাদেরই সম্প্রদায়ভুক্ত এবং কথা বলবে আমাদেরই ভাষায়। }
আমি বললাম, আমি যদি এ অবস্থায় পড়ে যাই তাহলে আপনি আমাকে কী করতে আদেশ দেন? তিনি বললেন,
تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِيْنَ وَإِمَامَهُمْ
{মুসলিমদের দল ও তাঁদের ইমামকে আকঁড়ে ধরবে।}
আমি বললাম, যদি মুসলিমদের এহেন দল ও ইমাম না থাকে? তিনি বলেন,
فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا وَلَوْ أَنْ تَعَضَّ بِأَصْلِ شَجَرَةٍ حَتَّى يُدْرِكَكَ الْمَوْتُ وَأَنْتَ عَلَى ذَلِكَ
{তখন তুমি তাদের সকল দল উপদলের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করবে এবং মৃত্যু না আসা পর্যন্ত বৃক্ষমূল দাঁতে আকঁড়ে ধরে হলেও তোমার দ্বীনের উপর থাকবে।}
(বুখারী ৩৬০৭, ৭০৮৪, মুসলিম ৩৩/১৩ হাঃ ১৮৪৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৩৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৪৫)
*******************************************************
এ-ই হচ্ছে এখনকার প্রকৃত অবস্থা যা শুধু রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর বাণীকেই সুনিশ্চিত করছে। যখন এই লোকগুলো বিপথে আহ্বানকারীদের সাথে একই কাতারে দাঁড়ায়; তখন বিভ্রান্তকারী পথভ্রষ্ট প্রচারক অন্যদেরকে ভুল পথে তথা জাহান্নামের পথে ঠেলে দেয়। মুসলিম বা অমুসলিম সকলেই তাদেরকে নিন্দা করে এবং তাদের কাজকে ঘৃণা করে। তাদের হীন অনুসারী বা ভ্রান্ত মতাদর্শী ব্যতীত কেউই তাদের কার্যকলাপকে সমর্থন করেনা।
আত্মহত্যার মাধ্যমে আক্রমনের বিষয়টি সুনিশ্চিতভাবে একটি বড় ফিতনা এবং শয়তানী অপকর্ম। এটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে মুসলিমগণ খুবই সতর্কতার সাথে এই বিষয়াদি বুঝবেন এবং কোন কিছু করতে তাড়াহুড়া করবেন না। কেউ এই বিষয়ে দ্বিধান্বিত হলে বিষয়টির স্বচ্ছ-সঠিক ব্যাখ্যার জন্য ধর্মীয় জ্ঞান-সম্পন্ন আলেমের নিকট জিজ্ঞেস করবেন অতঃপর সঠিক পথের জন্য মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে হবে। এমন জঘন্য পথে আহ্বানকারী বাহ্যিকভাবে সদাচারী, ধর্মপরায়ণ এবং ইসলাম ধর্মকে সম্মান করলেও তার প্রকৃত অবস্থা ও তার পরিচয় না জেনে শুধু সরল বিশ্বাসে তাকে সঙ্গ দেয়া উচিৎ নয়।
যে কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে যদি তাকে বাহ্যিকভাবে সৎ ও সত্যবাদীও মনে হয় কিন্তু ধর্মীয় বিষয়ে যদি হয় অজ্ঞ, তবে তার দিকে দ্রুত ধাবিত হওয়া উচিৎ নয়, তার প্রকৃত অবস্থা, তার চরিত্র ও আচরণ না জেনে তার উপর আস্থা ও নির্ভরতা স্থাপন করা আদৌ সমীচীন নয়। এমন হীন কর্মযজ্ঞ ঘটে যখন তার ব্যাপারে বিবিধ বিষয়াদি না জেনে অথবা ধর্মীয় প্রজ্ঞাপূর্ণ সদুপদেশ না শুনে তাকে বিশ্বাস করা হয়। তড়িৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কর্মচঞ্চলতা, ধর্মীয় অজ্ঞতা, মন্দ লোকের সংসর্গ, তাদের উপর বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন এবং মুসলিম সমাজ ও তাদের আলেমগণ হতে সম্পর্কচ্যুতি ইত্যাদি কারণের ফলস্বরুপ এ ধরণের গোষ্ঠী গড়ে উঠে।
এ ধরণের লোকজন (Suicide Bombers) সবসময় ধর্মীয় পড়াশুনা এবং বিশেষজ্ঞ আলেমগনকে এড়িয়ে চলে এবং ধীরে ধীরে হীন চক্রান্তে জড়িয়ে পড়ে। একই ভাবে তারা নিজেদেরকে নিজ পরিবার, নিজ ঘর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
তাই এটা বিশেষভাবে সকল মুসলিম যুবকদের জন্য বাধ্যতামূলক যে তারা এ ধরণের নিকৃষ্ট ব্যক্তি ও তাদের কর্মকান্ড দেখে শিক্ষা গ্রহণ করবে; কেননা সফল ব্যক্তি তারাই যারা অন্যের কাজকর্ম থেকে নিজের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করে। এই ধরণের ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিৎ যে আমাদেরকে অবশ্যই ধর্মীয় সীমারেখার মধ্যেই থাকতে হবে, এবং মুসলিম সম্প্রদায়ভূক্ত হয়ে হক্বপন্থী আলেমদের সাথে থাকতে হবে, তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন ও বিমূখ হওয়া যাবে না ।
>>>>>Special Courtesy:- dararqam.com<<<<<