নারীদের হিজাব ফ্যাশন বনাম ইসলাম :
=============================
মুসলিম নারীরা হিজাব পরিধান করে সত্য, ন্যায়, পরিমার্জিত, শালীন, সুন্দর ও কল্যাণময় অবস্থান ধরে রাখার মাধ্যমে আল্লাহর হুকুম পালন করে আসছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে আমাদের দেশে নামাযীর সংখ্যা বাড়ালেও যেমন বাড়েনি আল্ল¬াহকে ভয় করে নামায পড়ার মতো মানুষের সংখ্যা, তেমনি হিজাব পরিধানকারীর সংখ্যা বাড়লেও আল্লাহকে ভয় করে প্রকৃত হিজাব পরিধানকারীর সংখ্যা খুবই কম। এই পর্দা পালনের নামে চলছে যেমন খুশি তেমন সাজো অবস্থা। সমাজে বোরকার অপব্যবহার এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, টাইট-ফিটিংয়ের কারণে অর্থাৎ শরীরের সাথে এমনভাবে লেপটে থাকে যারা বোরকা পরে না তাদের হার মানায়। এ হিজাব লেটেস্ট ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। চলছে বোরকাতে অধিক কারুকার্য লাগানো ও টাইট ফিটিংয়ের প্রতিযোগিতা।
অথচ আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে বলেন :
﴿يَا بَنِىْ آَدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِىْ سَوْآَتِكُمْ وَرِيْشًا﴾
“হে বানী আদম! তোমাদের লজ্জাস্থানগুলো ঢাকার এবং সৌন্দর্য বিধানের উদ্দেশে আমি তোমাদের জন্য পোশাক নাযিল করেছি।” (সূরাহ্ আল আ‘রাফ ২৬)
বিশ্ববিখ্যাত আলিম শাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ) তাঁর বিখ্যাত ‘হিজাবুল মারআতিল মুসলিমাতি ফিল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ’ গ্রন্থে জিলবাবের (চাদরের) বর্ণনা দিয়েছেন এরূপ যে,
(১) জিলবাব এতটা সৌন্দর্যমণ্ডিত যেন না হয় যে, চাদর নিজেই যীনাত (সাজসজ্জা) হয়ে বসে,
(২) তা ঢিলেঢালা হওয়া উচিত। এমন আটসাট যেন না হয় যাতে শরীরের গঠন প্রকৃতি পরিলক্ষিত হয়।”
ইমাম জাস্সাস্ (রহ.) বলেন : “সুশোভিত রঙিন কারুকার্যমণ্ডিত বোরকা পরিধান করে বের হওয়াও নিষিদ্ধ।”
এসব লেটেস্ট ধরনের পর্দাকে ‘ফ্রান্স বোরকা বলা হয়। কারো কারো এর ভিতর দিয়ে চুলের গোছা দেখা যায়, গলদেশ অনাবৃত থাকে কিংবা পায়ের অর্ধেকটা শুধু ঢাকা থাকে। আবার অত্যাধিক ফিটিংও থাকে যা পরিধান করলে নারীর দেহের গঠন ও আকৃতি ফুটে উঠে। আবার অনেকে এমন হিজাব পরে যার নিচের অংশ খুবই ঢিলেঢালা কিন্তু হাত ও বক্ষদেশের উপর এমনই ফিটিং থাকে যা দ্বিতীয় চামড়ার ন্যায় লেগে থাকে। এ ধরনের সকল পোশাকই বেপর্দার শামিল।
হাদীসে প্রকৃত হিজাবের পরিচয় :
উসামাহ্ বিন যায়দ (রাযি.) বলেন, দেহিয়া কালবী রসূল (সঃ)-কে যে সকল কাপড় উপহার দিয়েছিলেন সেগুলোর মধ্য থেকে একটা মোটা মিসরীয় কা‘বাতি কাপড় তিনি আমাকে উপহার দেন পরিধান করার জন্য। রসূল (সঃ)- আমাকে বলেন, কী ব্যাপার তুমি কা‘বাতি কাপড়টি পরিধান করনি কেন? আমি বললাম, হে আল্ল¬াহর রসূল! আমি কাপড়টি আমার স্ত্রীকে প্রদান করেছি। তখন তিনি বললেন, তুমি তাকে নির্দেশ দিবে, সে যেন কাপড়টির নিচে একটি (সেমিজ জাতীয়) আলাদা কাপড় পরিধান করে, কারণ আমি ভয় পাই যে, এ কাপড়টি তার হাড়ের আকৃতি বর্ণনা করবে।
(আহমাদ, আল-মুসনাদ ৫/২০৬, হাসান)
তাবি‘ঈ হিশাম ইব্ন উরওয়াহ্ বলেন, তাঁর চাচা মুনযির ইব্নু যুবায়র ইব্ন আওয়াম ইরাক থেকে ফিরে এসে তাঁর আম্মা আসমা বিনতু আবূ বাক্র সিদ্দীক (রাযি.)-কে পারস্যের মারভ ও কোহেস্তান অঞ্চলের মূল্যবান কাপড় উপহার প্রদান করেন। তখন আসমা (রাযি.)-এর চক্ষু অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তিনি হাত দিয়ে কাপড়গুলো স্পর্শ করে বলেন, উফ! তার কাপড়গুলো তাকে ফিরিয়ে দাও। এতে মুনযির খুবই কষ্ট পান। তিনি বলেন, আম্মাজান! এ কাপড়গুলো স্বচ্ছ বা পাতলা নয় যে, নিজের চামড়ার রঙ প্রকাশ করবে। তিনি বলেন, কাপড়গুলো (দেহের রঙ) প্রকাশ না করলেও তা (অতি মোলায়েম হওয়ার কারণে দেহের আকৃতি) বর্ণনা করবে। (ইবনু সা‘দ আত-তাবাকাতুল কুবরা ৮/২৫২; আলবানী, জিলবাব পৃষ্ঠা ১২৭, হাঃ সহীহ)
পর্দার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো শরীরের আবেদনময়ী অঙ্গ ও সৌন্দর্য ঢেকে রাখা। পর্দার পোশাক এমন পাতলা হবে না যাতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ফুটে উঠে। প্রসিদ্ধ তাবি‘ঈ ‘আলকামার আম্মা বলেন, [আয়িশাহ্ (রাযি.)-এর ভাতিজী] হাফসাহ্ বিনতু ‘আব্দুর রহমান ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) এর গৃহে প্রবেশ করে। হাফসার মাথায় একটি পাতলা ওড়না ছিল, যার নিচে থেকে তার গ্রীবাদেশ দেখা যাচ্ছিল। আয়িশাহ (রাযি.) ওড়নাটি ছিড়ে ফেলেন এবং তাকে একটি মোটা কাপড়ের ওড়না পরিধান করতে দেন।
(মালিক আল- মুওয়াত্তা ২/৯১৩, আলবানী, জিলবাব পৃষ্ঠা ১২৬)
উপরোল্লে¬খিত হাদীসগুলো থেকে এটাই বুঝা যায় যে, পর্দার পোষাক আঁটসাঁট ও স্বচ্ছ হবে না। অতএব, যে পর্দা পরিধান করলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফুঁটে উঠে সে হিজাব পরিধান করা আর না করা একই সমান। অথচ আফসোসের বিষয়, আমাদের সমাজের অনেক নারী হিজাবের নামে যা পরে তা হিজাবের প্রকৃত হক তো তারা আদায় করেই না, বরং তারা গুনাহে শামিল হচ্ছে।