ফজর – আসরের এবং এশার সালাতের ফজিলত

● আমরা যখন সহীহ্ হাদিস পড়ি তখন এই বিষয়টি আমাদের সকলেরই বিষেশ ভাবে বোধগম্য হয় যে – মহান আল্লাহ্ (সুবঃ) প্রধান হুকুম (সালাত) এবং এই (সালাত) আমাদের জন্য শ্রেষ্ঠ ইবাদত। আর এই শ্রেষ্ঠ ইবাদতের মাঝে ০৫ ওয়াক্ত সালাতের মধ্যে হাদিসে ০২ এবং (এশা) ওয়াক্ত সালাতের বেশী গুরুত্বারোপ করা হয়। তার মানে এই নয় যে বাকি ০২/০৩ ওয়াক্তের গুরুত্ব কম! সালাত ০৫ ওয়াক্ত ০৫ ওয়াক্তই পরিপুর্নভাবে আদায় করতে হবে। হাদিসে যেই দুই ওয়াক্ত সালাতের বিষেশ গুরুত্বারোপ করা হয় তা হচ্ছে (ফজর – আসর) রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন
আরবি হাদিস
{ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻣُﻮﺳَﻰ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ : ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ، ﻗَﺎﻝَ : « ﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﺒَﺮْﺩَﻳْﻦِ ﺩَﺧَﻞَ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔَ » . ﻣﺘﻔﻖٌ ﻋَﻠَﻴْﻪِ}
বাংলা অর্থ
আবূ মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি দুই ঠাণ্ডা নামায পড়ে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [১]
রাসুলুল্লাহ (সা) অন্য হাদিসে বলেন আবূ যুহাইর ‘উমারাহ ইবনে রুআইবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে (অর্থাৎ ফজরের ও আসরের নামায) আদায় করবে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।” (মুসলিম) [২]
● রাসুলুল্লাহ (সা) এক হাদিসে (ফজরের) সালাতের মর্যাদা বর্ননা করতে গিয়ে বলেন – জুন্দুব ইবনে সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়ল, সে আল্লাহর জামানত লাভ করল। অতএব হে আদম সন্তান! লক্ষ্য রাখ, আল্লাহ যেন তোমাদের কাছে কোনোভাবেই তার জামানতের কিছু দাবী না করেন।” (মুসলিম) [৩]
● আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে (ফজর ও আসর) এই দুই সময়েই আমাদের আমল পৌছানোর দায়িত্বরত ফেরেশতাদের পরিবর্তন হয়। এই বিষয়টিই রাসুল (সা) নিম্নোক্ত হাদিসে খুব সুন্দর ভাবে আমাদেরকে বুঝিয়ে দেন। – আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের নিকট দিবারাত্রি ফেরেশতাবর্গ পালাক্রমে যাতায়াত করতে থাকেন। আর ফজর ও আসরের নামাযে তাঁরা একত্রিত হন। অতঃপর যারা তোমাদের কাছে রাত কাটিয়েছেন, তাঁরা ঊর্ধ্বে (আকাশে) চলে যান। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন—অথচ তিনি তাদের সম্পর্কে ভালভাবে পরিজ্ঞাত, ‘তোমরা আমার বান্দাদেরকে কি অবস্থায় ছেড়ে এসেছ?’ তাঁরা বলেন, ‘আমরা যখন তাদেরকে ছেড়ে এসেছি, তখন তারা নামাযে প্রবৃত্ত ছিল। আর যখন আমরা তাদের নিকট গিয়েছিলাম, তখনও তারা নামাযে প্রবৃত্ত ছিল।” (বুখারী ও মুসলিম) [৪]
● এই মর্যাদাবান সালাত ত্যাগের পরিনতি – বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আসরের নামায ত্যাগ করল, নিঃসন্দেহে তার আমল নষ্ট হয়ে গেল।” (বুখারী) [৫]
● লক্ষ্য করুনঃ আবার এক হাদিসে রাসুল (সা) এশার সালাতের কথাও বর্ননা করেন – আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যদি লোকে এশা ও ফজরের নামাযের ফযীলত জানতে পারত, তাহলে তাদেরকে হামাগুড়ি বা পাছা ছেঁচড়ে আসতে হলেও তারা অবশ্যই ঐ নামাযদ্বয়ে আসত।” (বুখারী ও মুসলিম) [৬]
——————————————————
[১] সহীহুল বুখারী ৫৭৪, মুসলিম ৬৩৫, আহমাদ ১৬২৮৯, দারেমী ১৪২৫।
[২] মুসলিম ৬৩৪, নাসায়ী ৪৭১, ৪৮৭, আবূ দাউদ ৪২৭, আহমাদ ১৬৭৬৯, ১৭৮৩৩ রিয়াযুস স্বা-লিহীন ১০৫৫ হাদিসের মানঃ সহিহ।
[৩] মুসলিম ৬৫৭, তিরমিযী ২২২, আহমাদ ১৮৩২৬, ১৮৩৩৫ রিয়াযুস স্বা-লিহীন ১০৫৬ হাদিসের মানঃ সহিহ।
[৪] সহীহুল বুখারী ৫৫৫, ৩২২৩, ৭৪২৯, ৭৪৮৬, মুসলিম ৬৩২, নাসায়ী ৪৮৫, আহমাদ ৭৪৪০, ২৭৩৩৬, ৮৩৩৩, ৮৯০৬, ৯৯৩৬, মুওয়াত্তা মালিক ৪১৩ রিয়াযুস স্বা-লিহীন ১০৫৭ হাদিসের মানঃ সহিহ।
[৫] সহীহুল বুখারী ৫৫৩, ৫৯৪, নাসায়ী ৪৭৪, ইবনু মাজাহ ৬৯৪, আহমাদ ২২৪৪৮, ২২৫১৭, ২২৫৩৬ রিয়াযুস স্বা-লিহীন ১০৫৯ হাদিসের মানঃ সহিহ।
[৬] সহীহুল বুখারী ৬১৫, ৬৫৪, ৭২১, ২৪৭২, ২৬৮৯, ২৮২৯, ৫৭৩৩, মুসলিম ৪৩৭, ৪৩৯, ১৯১৪, তিরমিযী ২২৫, ১০৬৩, ১৯৫৮, নাসায়ী ৫৪০, ৬৭১, আবূ দাউদ ৫২৪৫, ইবনু মাজাহ ৭৯৭, আহমাদ ৭১৮৫, ৭৬৮০, ৭৭৮২, ৭৯৬২, ৮১০৬, ৮২৯৩, ৮৬৫৫, ৮৯৯৩, ৯২০২, ৯৭৫০, মুওয়াত্তা মালিক ১৫১, ২৯৫, রিয়াযুস স্বা-লিহীন ১০৭৯ হাদিসের মানঃ সহিহ।
● আসুন আমরা ০৫ ওয়াক্ত সালাত ওয়াক্তমত সুন্দর ভাবে সুন্নাহর অনুসরণের মাধ্যমে গুরুত্বের সাথে আদায় করি। এবং যারা সালাত আদায় করে না তাদেরকে সালাতের গুরুত্ব বুঝিয়ে সালাতের দিকে আহ্বান করি।
● পরবর্তী কোন পোষ্টে সালাত ত্যাগের পরিনতি বিষয় স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ।
———————————————————
☞ Write – Present by – Bayzid Bin Osman
☞ Hadith by – www.Hadithbd.com
Share: