বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভবিষ্যৎ সঙ্গীকে বুঝে নিন। আপনার ও তার সামর্থ, প্রকৃতি, পছন্দ- অপছন্দ বুঝে সিদ্ধান্ত নিন। একটি জরূরী বিষয় অবগত করেতেই এই পোস্ট। এতটুকু জানা থাকলে সমাজের অনেক পারিবারিক অশান্তি ক্ষান্ত হতে পারতো। তবে আপনাকে এটাও বিবেচনা করতে হবে যে আপনি নিজে ঐ সঙ্গীর পারিবারিক পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন কিনা। আমাদের সমাজে পরিবারগুলোতে স্বামীর পরিবারের একটি প্রভাব আছে। বিশেষ করে যৌথ পরিবারগুলোতে।
.
আমাদের সামাজিক অবস্থায় যৌথ ও একক পরিবার উভয়ই দেখা যায়। এ দুই পারিবারিক কাঠামোতে যেমন সুবিধা আছে তেমনি অনেক অসুবিধাও রয়েছে। যেগুলো আমাদের জানা উচিত। তা না হলে অনেকেই ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
আপনি যদি যৌথপরিবারের কাউকে বিয়ে করেন এবং আপনাকে যদি স্বামীর পরিবারের সাথে থাকতে হয় অথবা ব্যতিক্রম কিছু ক্ষেত্রে স্ত্রীর পরিবারের সাথে থাকতে হয় তাহলে মানিয়ে নেওয়ার মাত্রাটা অনেক বেশি হবে। আমি বলছি না যে, আপনি যৌথ পরিবারে বিয়ে করবেন না। তবে যদি বিয়ে করতেই চান, ✔️তাহলে চোখ-কান খোলা রেখে,
✔️মনটাকে অনেক বড় করে এবং ✔️চামড়া মোটা করে এরপর বিয়ে করুন। কেননা যৌথ পরিবারে থাকতে হলে অনেক ধৈর্য্য ধরে চলতে হবে। ✔️নিজেকে বদলে নেওয়ার ও ✔️অন্যদের সাথে মানিয়ে নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। তা না হলে আপনি এমন এক সীমাহীন অত্যাচারের অনুভূতির দিকে এগুচ্ছেন যা আপনার সংসার জীবনকে নষ্ট করে দেবে; আজ না হয় কাল। তবে হ্যাঁ এটা আপনার মানসিক বিবেচনার বোধ ও শক্তির সীমাবদ্ধতার করণেই। এটা জেনে রাখুন যে, যৌথ পরিবারে থাকা এখন হয়তো কঠিন হতে পারে, কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে তা আপনাকে অনেক কল্যাণ এনে দিতে পারে। তাই চাইলে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বর্তমানকে গ্রহণ করতে পারেন- যেন শেষ জীবনে একাকীত্বে ভুগতে না হয়; বৃদ্ধাশ্রমে মৃতুবরণ করতে না হয়। এরপরেও যদি আপনার কাছে মনে হয় আপনি এই চাপগুলো সহ্য করতে পারবেন না, তাহলে কোনো যৌথ পরিবারে বিয়ে করবেন না।
সন্তানদের বেড়ে ওঠাসহ নানা বিষয়ে যৌথ পরিবার বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পুরো পরিবারকে পাশে পাওয়া যায়। তবে একই সাথে সেখানে অন্যেরা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপারে অযাচিত মত দেওয়ার চেষ্টা করবে, আপনার জীবনে নাক গলানোর সুযোগ পাবে। তাদের এই হস্তক্ষেপকে আপনি ‘যত্ন’ হিসেবে নেবেন নাকি ‘যন্ত্রণা’ হিসেবে -সেটা সম্পূর্ণ আপনার উপর। ভালোমন্দ দুটোই রয়েছে এখানে।
পরিবারকে ফেলে এককপরিবার গঠন সবসময় সম্ভব নাও হতে পারে। সম্ভব যদি হয়ও, তাতে আপনজনদের কষ্টের দীর্ঘশ্বাস মিশে থাকবে। দিনশেষে পড়ে থাকবে আহত মর্যাদাবোধ, ক্ষতবিক্ষত অনুভূতি আর চিড় ধরা সম্পর্ক। আর সবচেয়ে বড় কথা আপনি বড়ই একা হয়ে যাবেন। এবং সাধারণ অনেক বিষয়েই যৌথপরিবারে যে সহায়তা পেতেন তা এখানে পাবেন না। ব্যাপারটা মোটেই উপভোগ্য নয়। এখানেও ভালোমন্দ দুটোই রয়েছে। তাই সম্ভব হলে এমনটি না করাই উচিত। আর এটাও ভেবে রাখুন যে কিছু দিন পর আপনার পরিবারটিও যৌথ পরিবার হতে যাচ্ছে।
তাই পরিবার একক হউক বা যৌথ আপনি ভাবুন আপনার মাঝে যৌথপরিবারে সদস্য করতে যে গুণগুলো দরকার তা আছে কিনা বা অর্জনের সে ধৈর্য্য আছে কিনা। সাথে সাথে এটা দেখুন যে পরিবারটিতে আকীদা-বিশ্বাস, ধর্মীয় প্রথা, সাংস্কৃতি ইত্যাদি ইসলামের মৌলিক নীতিমালার সাথে সংগতিপূর্ণ কিনা। এরপর ইংশাআল্লাহ সিদ্ধান্ত নিন…
.
আরেকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে,
কিছু পরিবার মাজার ও দরগার পুজো করে; আবার কিছু পরিবারে এমন ভয়ংকর সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও সেখানে বসবাস করা কঠিন। যেমন, পর্দার প্রচলন, সালাত আদায় এবং দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের অন্যান্য ওয়াজিব বিষয়গুলো যেখানে গুরুত্বের সাথে পালন করা হয় না।
তাই জীবনের বাকি সময়টা যদি স্বামী বা স্ত্রীকে সঠিক পথে রাখার যুদ্ধে ব্যতিব্যস্ত হয়ে কাটাতে না চান, তাহলে উপরোক্ত কথাটি বুঝে নিয়ে আগান। এবং এর সাথে নিশ্চিত করুন যে, আপনি যে পথে আছেন পরিবারটিও সেই পথেই রয়েছে কিনা। একই কথা প্রযোজ্য তাদের জীবনধারা, আচার-আচরণ, খাদ্যাভাস, যেসব বিষয়ে তারা বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়েও।
একদম নিজের মনমতো হতে হবে এমন কোনো কথা নেই, তবে অমিল কতখানি তা খেয়াল রাখতে হবে। কেননা সেটুকু হয় আপনাকে বদলাতে হবে অথবা মানিয়ে নিতে হবে। মনে রাখবেন, পরিবর্তন সাধন সবসময়ই কষ্টকর। তাই ভিন্নতা যত কম হবে বৈবাহিক জীবনে আপনার সুখী হওয়ার সম্ভবনা তত বেশি হবে।
.
এছাড়া আরেকটি বিষয় আমাদের অনেক বোনই বুঝতে চান না যে, আপনার উপর আপনার স্বামীর যেমন কর্তৃত্ব আছে তেমনি আপনার স্বামীর উপরও তার বাবা-মায়ের কর্তৃত্ব আছে। তাই স্বামীর মায়ের উপরে গিয়ে আপনার স্বামীর উপর নিজের অধিকার দেখানোর প্রতিযোগীতায় আপনি জিতলেও হারলেন, আর হারলেতো হারলেন-ই।
.
>>>
বিয়ের আগেই বিয়ে সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো পড়ে নিন
>>>
সূত্র: আন-নূর ইসলামিক ম্যারেজ মিডিয়া।