‘বিয়ে জীবনে একবারই হয়’
একথা আমাদের মা-বোনদেরকে প্রায়ই গর্ব করে বলতে শোনা যায়। তারা হয়তো ভাবেন এটা তাদের মান-মর্যাদা, জাত্যাভিমান। আসলে এটা মর্যাদা নয় অপমান। এর পেছনে লুকিয়ে আছে ব্রাম্মনবাদী পৌত্তলিক অপবিশ্বাস।
এ সংস্কৃতি হিন্দুদের থেকে এসেছে। ইতিপূর্বে হিন্দু সমাজে নারীদের বিয়ে একবারই হতো। স্বামী মারা গেলে তাকেও তার সাথে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হতো। বিধবাদের পুনরায় বিয়ে করতে না দেওয়ার প্রথা তো এখনো অনেক হিন্দু সমাজে বিদ্যমান। কোলকাতা সাহিত্যে যাদের কিছুটা বিচরণ আছে তারা বেশ জানেন এ তথ্য।
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজে—সাহাবীদের সমাজে—এমন নারীদের সংখ্যা খুবই কম ছিলেন যাদের একটি বিয়ে হয়েছে। বিশ্বাস না হলে আপনি মহিলা সাহাবীদের জীবনী পড়ে দেখেন। একটি বিয়ে হওয়াকে যেমন কোনো বিশেষ গুন মনে করা হতো না; একাধিক বিয়ে হওয়াটাও ছিলো না দোষের কিছু।
বিয়ে দুজন নারী পুরুষের মধ্যে একটি সামাজিক ও ধর্মীয় চুক্তি। এর মাধ্যমে পরস্পর পরস্পরের চরিত্রের সুরক্ষা দিবে; মানবপ্রজন্মের ধারা অক্ষুন্ন রাখবে; সর্বোপরি একে অন্যকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহযোগিতা করবে।
ব্যক্তিগতভাবে নিজ নিজ অবস্থানে দুজন নারী-পুরুষ যথেষ্ট সজ্জন ও ভালো মানুষ হওয়া সত্ত্বেও স্বামী-স্ত্রী হিসেবে তাদের মাঝে বুঝব্যবস্থার মিল না-ও হতে পারে। সেক্ষেত্রে দাম্পত্য-জীবন অনেক সময় বোঝা হয়ে দাড়াতে পারে; যেটা তাদের উভয়ের জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলে। আর তা যদি তাদেরকে আল্লাহর বিধান লংঘনের পর্যায়ে নিয়ে যায়, তাহলে এ দাম্পত্য বোঝা বয়ে না বেড়িয়ে সম্মানের সাথে পৃথক হয়ে যাওয়াটাই শ্রেয়।
পৃথিবীর যাবতীয় কিছু—স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্তুতি, ধন-সম্পদ—সবকিছু হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উপায় উপকরণ। পথকে যারা গন্তব্য বানিয়ে নেয় তাদের সে পথ তাদেরকে কেবল ক্লান্তই করবে, শেষ হবে না। উপায়-উপকরণকে যদি লক্ষ্য বানিয়ে নেওয়া হয় তাহলে তা বোঝা হয়ে যেতে বাধ্য।
শুধু একাধিক বিয়ে হওয়াটা কখনোই কোনো নারী কিংবা পুরুষের দোষের বিষয় নয়। এটাকে খারাপ চোখে দেখাটাই বরং দোষের। নারীদের ক্ষেত্রে বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা নারীকে অপয়া মনে করাটাও পৌত্তলিকদের বিশ্বাস।
‘বিয়ে জীবনে একবারই হয়’ এই পৌত্তলিক ধ্যান-ধারনা থেকে বেরিয়ে আসার সময় কি এখনো হয়নি?
সংগ্রহ : Ahmed Rafique