লেখক: আবদুল্লাহিল হাদী মু.ইউসুফ
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহিল হাদী আব্দুল জলীল
▬▬▬▬ ◉◯◉ ▬▬▬▬
মানব জাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহ্ যুগে যুগে অসংখ্য নবী এই পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। তাঁরা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্য যথা সাধ্য চেষ্টা করেছেন। নবীগণ ছিলেন মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠ মানুষ। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য এই যে, প্রত্যেক নবীই তাঁর স্বজাতির পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকমের বাধা বিপত্তি ও অবমাননার শিকার হয়েছেন।
আল্লাহর বাণী: “আর এমনিভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর জন্যে বহু শয়তানকে শত্রু রূপে সৃষ্টি করেছি, তাদের কতক শয়তান মানুষের মধ্যে এবং কতক শয়তান জিনদের মধ্য থেকে হয়ে থাকে, এরা একে অপরকে কতগুলো মনোমুগ্ধকর, ধোঁকা পূর্ণ ও প্রতারণাময় কথা দ্বারা প্ররোচিত করে থাকে, তোমার প্রতিপালকের ইচ্ছা হলে তারা এমন কাজ করতে পারত না, সুতরাং তুমি তাদেরকে এবং তাদের মিথ্যা রচনাগুলোকে বর্জন করে চল”। (সূরা আনআম-১১২ ও ১১৩)
আর এই ধারাবাহিকতা থেকে আমাদের প্রিয় নবী মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মুক্ত ছিলেন না। তাঁর উপরও নবুয়তী জীবনের শুরু থেকে বিভিন্ন রকমের কটূক্তি, অবমাননা এমনকি তাঁর পরিবারের উপরও অপবাদ দেয়া হয়েছে।
মূলত ইসলাম এবং নবীর প্রতি হিংসার কারণেই অমুসলিমরা একাজ করে থাকে।
আল্লাহর বাণী: “তাদের অন্তরে আছে শুধু অহংকার, যা সফল হবার নয়”। (সূরা মুমিন-৫৬)
বাস্তবে হিংসা তাদেরকে জ্বালি পুড়িয়ে মেরেছে, ইসলাম এবং নবীর কোন ক্ষতিই তারা করতে পারেনি।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে কিভাবে আল্লাহ আমাকে কোরাইশদের অবমাননাকর গালি, অভিসম্পাত থেকে পুত পবিত্র রাখেন, তারা আমাকে খারাপ ভাষায় অবমাননা করে আর আমি মোহাম্মদ(প্রশংসিত)”।(বোখারী)।
তারা নবীকে নিয়ে যতই কটূক্তি এবং অবমাননা করেছে আল্লাহ ততই তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন।
আল্লাহ বাণী: “এবং আমি তোমার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি”। (সূরা আলাম নাশরাহ্-৪)।
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আযানে বিশ্ব ব্যাপী মসজিদে মসজিদে তাঁর নাম উচ্চারিত হচ্ছে।
“আশ হাদু আন্না মোহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্”
একজন অমুসলিম মনিষী রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রশংসায় বলেন: “মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একমাত্র নবী যার জীবন-চরিত্র সূর্যের আলোর ন্যায় স্পষ্ট”।
তাঁর অবমানকারীদের অবমাননা থেকে তাঁকে রক্ষার জন্য আল্লাই যথেষ্ট।
আল্লাহর বাণী:“ অবমানকারীদের জন্য আমি আপনার পক্ষ থেকে যথেষ্ট”। (সূরা হিজর-৯৫)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তালা এরশাদ করেন: “আল্লাহ কি তাঁর বান্দার পক্ষ থেকে যথেষ্ট নন”। (সূরা যুমার-৩৬)
এই আয়াতের তাফসীরে বিন সাদী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: যেই রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর আনিত বিধান নিয়ে বিদ্রূপ অবমাননা করেছে আল্লাহ্ তাকে ধ্বংস করেছেন এবং নির্মম শাস্তি দিয়েছেন। যুগে যুগে যারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অবমাননা করেছে তাদের কেউ রক্ষা পায়নি, আল্লাহ্ তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছেন। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: নিশ্চয়ই যারা রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কষ্ট দেয়, তাঁকে অবমাননা করে আল্লাহ্ তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দিবেন, তিনি তাঁর দ্বীনকে বিজয় করবেন, আর মিথ্যুকদের মিথ্যা রটনাকে মিথ্যায় পরিণত করবেন, যদিও মুসলমানরা তাদেরকে শাস্তি দিতে না পারে। (আস সারেমুল মাসলুল-২/৫৩৯)।
পরিণতি:
রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অবমাননা করার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ।
আল্লাহর বাণী: “যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ্ তাদের প্রতি ইহকাল ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি”।(সূরা আহযাব-৫৭)
আর রাসূলকে অবমাননা এবং তাঁকে বিদ্রূপ করার মাধ্যমে তাঁকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়া হয়।
আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: এক নাসারা ইসলাম গ্রহণ করল এবং সূরা বাকারা ও আল ইমরান শিখল। সে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট কেরানীর কাজ করত। সে পুনরায় নাসারা হয়ে গেল এবং বলতে লাগল মোহাম্মদ আমি যা লিখি তাই বলে এর বাহিরে সে আর কিছুই জানেনা। এরপর সে মৃত্যুবরণ করল তখন তার সাথীরা তাকে দাফন করল, সকালে উঠে দেখল তার লাশ বাহিরে পড়ে আছে, তখন নাসারারা বলতে লাগল মোহাম্মদের সাথীরা এই কাজ করেছে কেননা সে তাদের ধর্ম ত্যাগ করেছিল। তখন তারা আরও গভীর করে কবর খনন করে তাকে আবার দাফন করল, আবার সকালে উঠে দেখল তার লাশ বাহিরে পড়ে আছে। তখন তারা বলল এটা মোহাম্মদ এবং তার সাথীদের কাজ কেননা সে তাদের ধর্ম ত্যাগ করে এসেছিল। তখন তারা আবার আরও গভীর করে কবর খনন করল এবং তাকে দাফন করল আবার সকালে উঠে দেখল তার লাশ আবার বাহিরে পড়ে আছে তখন তারা বুঝল এটা কোন মানুষের কাজ নয় তখন তারা তারা লাশ বাহিরেই পড়ে থাকতে দিল। (বোখারী ও মুসলিম)
পরিশেষে প্রিয় পাঠক! যারা আজকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে ব্যাঙ্গ কার্টুন অঙ্কণ করেছে তাকে নির্মম পরিণতির শিকার অবশ্যই হতে হবে। এ যেন নিজের পায়ে নিজে কুঠার মারা।
মুসলিম হিসেবে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ আমাদের অবশ্যই করতে হবে কিন্তু তা যেন কোন ভাবেই আক্রমনাত্মক না হয়। প্রত্যেকে তার সাধ্য অনুযায়ী লিখনির মাধ্যমে, বক্তব্যের মাধ্যমে অন্যথায় মনে মনে এই কাজকে ঘৃণা করার মাধ্যমে।
আল্লাহু আলাম।
[সম্প্রতি ফ্রান্সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই হওয়া সাল্লাম এর ব্যাঙ্গচিত্র প্রদর্শনের প্রেক্ষিতে
মূল লেখায় সামান্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। -সম্পাদক]।