দুনিয়া পরকালের কর্মক্ষেত্র। দুনিয়ায় মানুষের কাজের উপর ভিত্তি করেই আল্লাহ পরকালে জান্নাতে বা জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। পরকালে জাহান্নাম থেকে বেঁচে জান্নাত লাভ করাই চূড়ান্ত মুক্তি। আর সেই মুক্তির লক্ষ্যে প্রত্যেকের উচিত পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী আমল করা। কুরআন ও হাদীছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার নির্দেশ থাকলেও মুসলমানগণ বিভিন্ন সময় আক্বীদা ও আমলের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে। আর সকল দলই নিজেদেরকে মুক্তিপ্রাপ্ত দল দাবী করেছে এবং অন্যদেরকে পথভ্রষ্ট বলে আখ্যায়িত করেছে। এই মতবিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফায়ছালা কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে আমাদের জেনে নেওয়া উচিত।
রাসূল (ছাঃ) মুক্তিপ্রাপ্ত দলের নাম বলেননি। বরং তিনি মুক্তিপ্রাপ্ত দলের বিভিন্ন গুণ ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
خَطَّ لَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطًّا بِيَدِهِ ثُمَّ قَالَ هَذَا سَبِيْلُ اللهِ مُسْتَقِيْمًا، وَخَطَّ خُطُوْطًا عَنْ يَمِيْنِهِ وَشِمَالِهِ، ثُمَّ قَالَ هَذِهِ السُّبُلُ وَلَيْسَ مِنْهَا سَبِيْلٌ إِلَّا عَلَيْهِ شَيْطَانٌ يَدْعُو إِلَيْهِ ثُمَّ قَرَأَ قوله تعالى وَأَنَّ هَـذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْماً فَاتَّبِعُوْهُ وَلاَ تَتَّبِعُواْ السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَن سَبِيْلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ-
‘আমাদের জন্য রাসূল (ছাঃ) নিজ হাতে একটা দাগ টানলেন, অতঃপর বললেন, ‘এটা আল্লাহ তা‘আলার সোজা ও সঠিক রাস্তা। অতঃপর তাঁর ডানে ও বামে আরো কিছু দাগ টানলেন। তারপর বললেন, এগুলি অন্য রাস্তা যাদের প্রত্যেকটার শুরুতে শয়তান বসে মানুষদেরকে তার দিকে ডাকছে। তারপর আল্লাহর বাণী পড়লেন, ‘এটাই আমার সোজা ও সঠিক রাস্তা। সুতরাং তোমরা অবশ্যই এর অনুসরণ করবে এবং অন্যান্য রাস্তাসমূহের অনুসরণ করো না, তাহ’লে এ রাস্তাসমূহ তোমাদেরকে তাঁর রাস্তা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। তিনি এভাবেই তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন, যাতে তোমরা মুত্তাক্বী হ’তে পার’ (আন‘আম ৬/১৫৩)।[1] এ হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, মুক্তির জন্য একটি সঠিক রাস্তা ছাড়াও শয়তানের তৈরী বিভিন্ন ভ্রান্ত রাস্তা থাকবে।
অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) উম্মতে মুহাম্মাদীর বিভক্তির কথা উল্লেখ করে মুক্তিপ্রাপ্তদের বর্ণনা দিয়ে বলেন,
إِنَّ بَنِيْ إِسْرَائِيلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى إِحْدَى وَسَبْعِيْنَ فِرْقَةً فَهَلَكَتْ سَبْعُوْنَ فِرْقَةً وَخَلَصَتْ فِرْقَةٌ وَاحِدَةٌ وَإِنَّ أُمَّتِيْ سَتَفْتَرِقُ عَلَى اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِيْنَ فِرْقَةً فَتَهْلِكُ إِحْدَى وَسَبْعِيْنَ وَتَخْلُصُ فِرْقَةٌ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ مَنْ تِلْكَ الْفِرْقَةُ، قَالَ الْجَمَاعَةُ الْجَمَاعَةُ-
‘নিশ্চয়ই বনী ইসরাঈলরা ৭১ দলে বিভক্ত হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৭০ দল ধ্বংস হয়ে গেছে এবং একটি দল নাজাত পেয়েছে। আর আমার উম্মত অচিরেই ৭২ দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। তাদের মধ্যে ৭১ দল ধ্বংস হবে (জাহান্নামে যাবে) এবং একটি দল মুক্তিপ্রাপ্ত হবে। ছাহাবাগণ বললেন, মুক্তিপ্রাপ্ত দল কোন্টি? রাসূল (ছাঃ) বললেন, তারা একটি দল, তারা একটি দল’।[2]অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
أَلَا إِنَّ مَنْ قَبْلَكُمْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ افْتَرَقُوْا عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِيْنَ مِلَّةً وَإِنَّ هَذِهِ الْأُمَّةَ سَتَفْتَرِقُ عَلَى ثَلاَثٍ وَّسَبْعِيْنَ ثِنْتَانِ وَسَبْعُوْنَ فِي النَّارِ وَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ وَهِيَ الْجَمَاعَةُ-
‘ওহে, অবশ্যই তোমাদের পূর্বে আহলে কিতাবগণ (ইহুদী ও নাছারা) ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর নিশ্চয়ই এই উম্মত অচিরেই ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। তন্মধ্যে ৭২ দল জাহান্নামী ও একদল জান্নাতী। (জান্নাতীরা হ’ল) একটি জামা‘আত বা দল’।[3]
উপরোক্ত হাদীছ থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল যে, মুসলমানদের মধ্যেই ৭২/৭৩টি দল হবে। তন্মধ্যে ৭১/৭২টি দল জাহান্নামে যাবে এবং একটি দল জান্নাতে যাবে। সেটিই মূলত মুক্তিপ্রাপ্ত দল। অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) হক্বপন্থী দল প্রসঙ্গে বলেন, لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِِّنْ أُمَّتِيْ ظَاهِرِيْنَ عَلَى الْحَقِّ لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللهِ وَهُمْ كَذَلِكَ- ‘আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল সর্বদা হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে, বিরোধীরা বা পরিত্যাগকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না, এই অবস্থায় ক্বিয়ামত এসে যাবে, তারা ঐ অবস্থায়ই থাকবে’।[4]
বর্তমানে সকল নামধারী ইসলামী দলই এই হাদীছগুলিকে উল্লেখ করে নিজেদেরকে মুক্তিপ্রাপ্ত দল বলার চেষ্টা করে। আর বিরোধী দলকে পথভ্রষ্ট ৭২ দলের অন্তর্ভুক্ত বলে প্রচার করে। আসলে মুক্তিপ্রাপ্ত দল কোন্টি?
রাসূল (ছাঃ) স্বীয় ছাহাবীদের সম্মুখে মুক্তিপ্রাপ্ত দলের কথা বর্ণনা করলে তারা রাসূল (ছঃ)-কে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! মুক্তিপ্রাপ্ত দল কোন্টি? রাসূল (ছাঃ) ছাহাবীদের প্রশ্নের যে উত্তর দিয়েছেন, সে সম্পর্কে দু’টি বর্ণনা পাওয়া যায়।
(১) রাসূল (ছাঃ) মুক্তিপ্রাপ্ত দল সম্পর্কে বলেছেন, هى الجماعة، ‘এটা হ’ল একটা দল’।[5] এ হাদীছ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় না যে, মুক্তিপ্রাপ্ত দল কোনটি। তাই এই অস্পষ্টতাকে পুঁজি করে অনেক দলই বলে থাকে, এখানে যেহেতু জামা‘আতের কথা বলা হয়েছে সেহেতু জামা‘আত যত বড় হবে তারাই হবে মুক্তিপ্রাপ্ত দলের অধিকারী। দলীল হিসাবে একটি যঈফ হাদীছ পেশ করে যে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা বড় জামা‘আতের পায়রাবী কর’।[6] ইবনু মাজাহতে আনাস (রাঃ) কর্তৃক এ সম্পর্কিত একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, সে হাদীছটিও যঈফ।[7]
জামা‘আতের উপরোক্ত ব্যাখ্যা ঠিক নয়। এই ব্যাখ্যা গ্রহণ করার আগে আমাদেরকে জামা‘আতের সঠিক সংজ্ঞা জানতে হবে। মূলতঃ জামা‘আতের জন্য লোক বেশী হওয়া শর্ত নয়, হক্বের অনুসারী হওয়া শর্ত। জামা‘আতের সংজ্ঞায় প্রখ্যাত ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, الجماعة ما وافق الحق وان كنت وحدك ‘জামা‘আত হচ্ছে হক্বের অনুগামী হওয়া, যদিও তুমি একাকী হও’।[8]
যেমন আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ)-কে একটি দল বলেছেন। তিনি বলেন, إِنَّ إِبْرَاهِيْمَ كَانَ أُمَّةً قَانِتاً لِلّهِ حَنِيْفاً وَلَمْ يَكُ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ ‘নিশ্চয়ই ইবরাহীম ছিলেন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর হুকুম পালনকারী একটি উম্মত বিশেষ এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না’ (নাহল ১৬/১২০)। এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম (আঃ)-কে أمة বা জাতি বলে ঘোষণা দিয়েছেন, যদিও তিনি ছিলেন একা। এখানে আল্লাহ সংখ্যাধিক্যের দৃষ্টিতে নয়; বরং হক্বের উপরে থাকার কারণে ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রশংসা করেছেন।
আবদুল্লাহ বিন মুবারক (রহঃ)-কে জামা‘আত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, আবূবকর ও ওমর (রাঃ)। তাকে বলা হ’ল, তাঁরাতো ইন্তেকাল করেছেন। তিনি বললেন, তাহ’লে অমুক অমুক। তাকে বলা হ’ল, তারাও তো মৃত্যুবরণ করেছেন। তখন তিনি বললেন, আবু হামযা আস-সুকরী হ’ল জামা‘আত। অর্থাৎ একজন নেক ফাযেল ব্যক্তি সুন্নাত ও সালাফে ছালেহীনের পথের অনুসারীই হচ্ছেন জামা‘আত ও আহলে হক্বের মানুষ। সুতরাং সংখ্যাধিক্য এখানে বিবেচ্য নয়। বরং লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে সুন্নাতের অনুসারী হওয়া এবং বিদ‘আত পরিত্যাগ করা’।[9] সুতরাং হক্বের অনুসারী একজন হ’লেও সে বড় দলের অন্তর্ভুক্ত। সংখ্যায় অধিক হ’লেই বড় দল বা জামা‘আতে হক্ব নয়। অনুরূপভাবে সংখ্যাধিক্য দেখে বড় দলের অনুসরণ করলেই হক্বপন্থী হওয়া যায় না। বরং পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের নিঃশর্ত অনুসরণ করাই প্রকৃত অর্থে হক্বপন্থী হওয়ার পূর্বশর্ত। এই হক্বপন্থীগণই হ’লেন বড় জামা‘আত। আর তারা হ’লেন ছাহাবায়ে কিরাম, সালাফে ছালেহীন ও তাদের যথাযথ অনুসারীগণ। সুতরাং যারা খুলাফায়ে রাশেদীন ও ছাহাবায়ে কেরামের মাসলাক অনুসরণে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী আমল করবেন, তারাই বড় জামা‘আতের অন্তর্ভুক্ত হবেন। অতএব নিঃশর্তভাবে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী আমল করতে পারলে সংখ্যায় কম হ’লেও তারাই হবে নাজাতপ্রাপ্ত দল। পক্ষান্তরে সংখ্যায় বেশী হ’লেও সেখানে কুরআন ও হাদীছ মোতাবেক আমল না থাকলে সেটা হক্বপন্থী ও নাজাতপ্রাপ্ত দল নয়।
অনেক সময় কোন দলে লোক সংখ্যা বেশী দেখে মানুষ মনে করে ঐ দলের লোকেরাই হক্বের পথে আছে। তাদের ধারণা এত লোক মিলে কি ভুল পথে যেতে পারে? আর আমরা হক্বপন্থী হ’লে আমাদের সংখ্যা কম কেন? আবার অনেকে বলেও থাকেন, দশজন যেখানে আল্লাহও সেখানে। এ ধারণা ঠিক নয়। কারণ হক্বপন্থী হওয়ার জন্য সংখ্যায় বেশী হওয়া শর্ত নয়। বরং বাতিলের সংখ্যা হক্বপন্থীদের তুলনায় বেশী হবে, এটাই স্বাভাবিক। যেমন রাসূল (ছাঃ) হক্ব দল ১টি এবং বাতিল দল ৭২টি উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ রাসূল (ছাঃ)-এর উম্মতের ৭৩ দলের মধ্যে ৭২ দলই জাহান্নামী আর একটি দলই মাত্র জান্নাতে যাবে। সুতরাং হক্বপন্থীদের সংখ্যা কম হবে, এটাই রাসূলের ভাষ্য।
সাধারণভাবে কোন দলে লোক বেশী থাকাই বাতিল হওয়ার প্রমাণ। কারণ রাসূল (ছাঃ)-এর উম্মাতের ৭৩টি দলের মধ্যে ৭২টি দলই জাহান্নামে যাবে। সুতরাং বাতিলদের সংখ্যা বেশী হবে, এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে সঠিক দলটি খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। আর মানুষ সাধারণত এ বিষয়ে বেশী গুরুত্ব দেয় না; বড় দল ও সংখ্যা বেশী দেখে তাদের অনুসরণ করে। এজন্য দিন দিন বাতিলের সংখ্যা বাড়ছেই।
আমরা যদি পৃথিবীর জনসংখ্যার দিকে তাকাই তাহ’লে দেখা যাবে, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র এক-পঞ্চমাংশ মুসলমান। যদি সংখ্যা হক্বপন্থী হওয়ার শর্ত হয়, তাহ’লে ধরে নিতে হবে বিধর্মীরাই হক্বের উপর আছে। অথচ তা কোন মুসলিম স্বীকার করবে না, মেনেও নিবে না। হক্ব-বাতিলের মানদন্ড আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ) সংখ্যার দ্বারা নির্ধারণ করেননি; বরং নিঃশর্তভাবে অহি-র অনুসরণ করাই হ’ল হক্বপন্থী হওয়ার জন্য শর্ত।
অপরদিকে মহান আল্লাহ কুরআনে যেসব স্থানে اكثرهم-اكثر-كثيرة-كثيراً-كثير শব্দগুলি উল্লেখ করেছেন, প্রায় সব জায়গায় বলেছেন, অধিকাংশরাই মূর্খ, কাফের, ফাসেক, গাফেল ইত্যাদি। যেমন আল্লাহর বাণী, أَكْثَرَهُمْ لاَ يَعْلَمُونَ ‘তাদের অধিকাংশই জানে না’ (আন‘আম ৬/৩৭; আ‘রাফ ৭/১৩১; আনফাল ৮/৩৪; ইউনুস ১০/৫৫; নাহল ১৬/৭৫, ১০১; নামল ২৭/৬১; ক্বাছাছ ২৮/১৩,৫৭; আনকাবুত ২৯/৬৩; দুখান ৪৪/৩৯; হুজুরাত ৪৯/৪; তুর ৫২/৪৭)। অন্য আয়াতে আছে, وَكَثِيْرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُوْنَ ‘তাদের অধিকাংশই ফাসিক’ (হাদীদ ৫৭/১৬,২৬,২৭; মায়েদা ৫/৮১)। অন্য আয়াতে আছে, وَإِنَّ كَثِيْراً مِّنَ النَّاسِ عَنْ آيَاتِنَا لَغَافِلُوْنَ ‘নিশ্চয়ই অধিকাংশ মানুষ আমার আয়াত সম্পর্কে গাফেল’ (ইউনুস ১০/৯২)। এছাড়া বেশী সংখ্যক লোকদের অবস্থা কি হবে তাও আল্লাহ পাক স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন,
وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيْراً مِّنَ الْجِنِّ وَالإِنسِ لَهُمْ قُلُوْبٌ لاَّ يَفْقَهُوْنَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لاَّ يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لاَّ يَسْمَعُوْنَ بِهَا أُوْلَـئِكَ كَالأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُوْلَـئِكَ هُمُ الْغَافِلُوْنَ-
‘আর আমি বহু জিন ও মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। তাদের অন্তর রয়েছে, তা দ্বারা তারা উপলব্ধি করে না। তাদের চোখ রয়েছে, তা দ্বারা তারা দেখে না। আর তাদের কান রয়েছে, তা দ্বারা তারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত, বরং তাদের চেয়েও বিভ্রান্ত। তারাই হ’ল গাফেল’ (আ‘রাফ ৭/১৭৯)।
অপরদিকে আল্লাহ তা‘আলা কম সংখ্যক লোকদের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, وَقَلِيْلٌ مِّنْ عِبَادِيَ الشَّكُوْرُ ‘আমার বান্দাদের মধ্যে কম সংখ্যকই শোকরগুজার’ (সাবা ৩৪/১৩)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, قَلِيْلاً مَّا تَشْكُرُوْنَ ‘তোমরা অল্প সংখ্যক লোকই শুকরিয়া আদায় কর’ (আ‘রাফ ৭/১০)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, قَلِيْلاً مَا تَذَكَّرُوْنَ ‘তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর’ (হাক্কাহ ৬৯/৪১; আ‘রাফ ৭/৩)। রাসূল (ছাঃ)ও অল্প সংখ্যক লোকদেরকে সুসংবাদ প্রদান করেছেন। আবূবকর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, بَدَأَ الْإِسْلاَمُ غَرِيْبًا وَسَيَعُوْدُ كَمَا بَدَأَ غَرِيْبًا فَطُوْبَى لِلْغُرَبَاءِ. ‘ইসলাম শুরু হয়েছিল গুটিকতক লোকের মাধ্যমে, আবার সেই অবস্থাপ্রাপ্ত হবে। অতএব সুসংবাদ সেই অল্প সংখ্যক লোকদের জন্য’।[10]
আর এই অল্প সংখ্যক হক্বপন্থী লোকদের কেউ কোন ক্ষতি করতে পারবে না, তাদেরকে নিশ্চিহ্নও করতে পারবে না। তারা সংখ্যায় কম হ’লেও ক্বিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
(২) রাসূল (ছাঃ) মুক্তিপ্রাপ্ত দলের পরিচয় প্রসঙ্গে অন্য হাদীছে বলেন, ما انا عليه وأصحابى. ‘(মুক্তিপ্রাপ্ত দল) হচ্ছে আমি ও আমার ছাহাবীগণ যে পথের উপর আছি’।[11] অন্য বর্ণনায় এসেছে, سَتَفْتَرِقُ أُمَّتِيْ عَلَى ثَلاَثٍ وَّسَبْعِيْنَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ وَاحِدَةً قِيْلَ َمَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ الَّذِيْنَ عَلَى مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِيْ- ‘আমার উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ছাড়া সবাই জাহান্নামে যাবে। জিজ্ঞেস করা হ’ল, তারা কারা হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তিনি বললেন, ‘যারা আমার ও আমার ছাহাবীদের আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত’।[12]
এই হাদীছেও রাসূল (ছাঃ) মুক্তিপ্রাপ্ত কোন দলের নাম বলেননি; বরং বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। রাসূল (ছাঃ) কোন দলের নাম বললে সবাই সেই দলের অনুসারী বলে দাবী করত। এজন্য রাসূল (ছাঃ) বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন, যাতে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের উপরে আমল করার মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ)-এর উদ্দীষ্ট দল তৈরী হয়।
হাদীছের আলোকে মুক্তিপ্রাপ্ত দলের বৈশিষ্ট্য হ’ল রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীগণ যে পথের অনুসারী ছিলেন সে পথের অনুসরণ করা। কুরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহর অনুসরণের পাশাপাশি রাসূলের অনুসরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, قُلْ أَطِيْعُواْ اللهَ وَالرَّسُوْلَ فإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللهَ لاَ يُحِبُّ الْكَافِرِيْنَ- ‘আপনি বলুন, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের অনুসরণ কর, যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রাখ নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফিরদের ভালবাসেন না’ (আলে ইমরান ৩/৩২)। এছাড়াও সূরা নিসা ১৩-১৪, ৫৯, ৬০-৬১, ৭৯-৮০; মায়েদা ৯২; আনফাল ২৪, ৪৬; নহল ৪৪ ও নূর ৬৩ আয়াতে এ বিষয়ে আলোচনা এসেছে।
রাসূল (ছাঃ)ও বিভিন্ন হাদীছে তাঁর অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষত মতপ্রার্থক্যের সময় রাসূলের ও খুলাফায়ে রাশেদীনের অনুসরণের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন,
مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اخْتِلاَفًا كَثِيْرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِىْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ عَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ-
‘তোমাদের মধ্যে থেকে যারা জীবিত থাকবে, তারা অচিরেই অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। অতএব (মতভেদের সময়) আমার সুন্নাত এবং আমার হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতের অনুসরণ করা হবে তোমাদের অপরিহার্য কর্তব্য। এ সুন্নাতকে খুব মযবুতভাবে মাড়ির দাঁত দিয়ে অাঁকড়ে ধরে থাক। আর সমস্ত বিদ‘আত থেকে বিরত থাক। কেননা প্রত্যেকটি বিদ‘আতই গুমরাহী’।[13]
এখানে লক্ষ্যণীয় যে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যখন মতবিরোধ দেখা দিবে তখন তোমরা আমার সুন্নাতের অনুসরণ করবে। আর আমার ছাহাবীগণ আমাকে যেভাবে অনুসরণ করছে, যেভাবে আমল করছে, যে আক্বীদা পোষণ করছে, তোমরা সেভাবেই আমার অনুসরণ করবে। সাথে সাথে ইসলামের নামে নব আবিষ্কৃত বস্ত্ত থেকে দূরে থাকবে। আজকের দিনে এই মতবিরোধপূর্ণ সমাজে যদি আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসারী হ’তে পারি এবং ছাহাবীগণ যেভাবে কুরআন ও হাদীছকে বুঝেছেন ও আমল করেছেন সেভাবে বুঝতে ও আমল করতে পারি, তাহ’লেই আমাদের মধ্যে ঐক্য সম্ভব।
একটি বিষয় স্মর্তব্য যে, রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পূর্বেই ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং ইসলামের মধ্যে কম-বেশী করার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি। বিদায় হজ্জের দিন আল্লাহ নাযিল করলেন, الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِيْنًا ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (মায়েদা ৫/৩)।অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يََّبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِيْناً فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ ‘কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনও গ্রহণযোগ্য হবে না এবং ক্বিয়ামতের দিন সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’(আলে ইমরান ৩/৮৫)।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ইহুদী-নাছারাদের মত মুসলমান নামধারী একদল লোক কুরআনকে পরিবর্তন করতে না পারলেও কুরআনের অপব্যাখ্যা করছে। রাসূলের নামে অসংখ্য জাল হাদীছ তৈরী করেছে। কিন্তু আল্লাহর কিছু বান্দা তাদের চক্রান্তের মোকাবিলায় হাদীছ বাছাই করে আমাদের সামনে ছহীহ হাদীছগুলি তুলে ধরেছেন। আমাদের উচিত কুরআনের সঠিক ব্যাখ্যা ও ছহীহ হাদীছ গ্রহণ করা। তাহ’লে আমাদের মাঝে মতভেদ মতপার্থক্য থাকবে না। আল্লাহ কুরআনে সব সমস্যার সমাধান দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,وَلاَ يَأْتُوْنَكَ بِمَثَلٍ إِلاَّ جِئْنَاكَ بِالْحَقِّ وَأَحْسَنَ تَفْسِيْرًا ‘তারা তোমার নিকট এমন কোন সমস্যা উপস্থিত করতে পারেনি, যার সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা আমি তোমাকে দান করিনি’ (ফুরক্বান ২৫-৩৩)। অন্য আয়াতে এসেছে,وَلَقَدْ ضَرَبْنَا لِلنَّاسِ فِي هَذَا الْقُرْآنِ مِن كُلِّ مَثَلٍ لَّعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ ‘আমি এ কুরআনে মানুষের জন্য সব দৃষ্টান্তই বর্ণনা করেছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে’ (যুমার ৩৯/২৭)।
রাসূল (ছাঃ) প্রদত্ত কুরআনের ব্যাখ্যা ও তাঁর বাস্তব জীবনই হ’ল ‘হাদীছ’ বা ‘সুন্নাহ’। এ কুরআন ও সুন্নাহকে অাঁকড়ে ধরার মাধ্যমেই রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীদের অনুসরণ করা হবে এবং মতবিরোধপূর্ণ সময়ে সঠিক পথ পাওয়া যাবে। বিদায় হজ্জের দীর্ঘ ভাষণের এক পর্যায় রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, وَقَدْ تَرَكْتُ فِيْكُمْ مَا لَنْ تَضِلُّوْا بَعْدَهُ إِنْ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ كِتَابُ اللهِ ‘আমি তোমাদের নিকট যা রেখে যাচ্ছি তা মযবুতভাবে ধরে থাকলে, আমার পরে কখনও তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না; আর সেটা হ’ল আল্লাহর কিতাব’।[14] এখানে কিতাবুল্লাহ বলতে শুধু কুরআনকে ধরে রাখার কথা বলা হয়নি। হাদীছও মেনে চলতে হবে। কারণ কুরআনে রাসূলের অনুসরণ করার নির্দেশ আছে।
আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন ঐসব নারীর উপর, যারা অন্যের শরীরে নাম বা চিত্র অংকন করে এবং যারা নিজ শরীরে অন্যের দ্বারা অংকন করায়। যারা ললাট বা কপালের উপরস্থ চুল উপড়িয়ে কপাল প্রশস্ত করে এবং সৌন্দর্যের জন্য রেত ইত্যাদির সাহায্যে দাঁত সরু ও দু’দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে। এসব নারী আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি বিকৃত করে ফেলে। বনী আসাদ গ্রোত্রের উম্মে ইয়াকূব নামীয় এক মহিলা এই বর্ণনা শুনে ইবনু মাস‘উদ (রাঃ)-এর নিকট এসে বলল, আমি জানতে পেরেছি যে, আপনি এ ব্যাপারে লা‘নত করেছেন। তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) যার উপর লা‘নত করেছেন, আল্লাহর কিতাবে যার প্রতি লা‘নত করা হয়েছে, তার উপর আমি লা‘নত করব না কেন? তখন মহিলাটি বলল, আমি তো কুরআন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছি, তাতে তো আপনি যা বলেছেন, তা পেলাম না। আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) বললেন, তুমি যদি পড়তে তবে অবশ্যই পেতে। তুমি কি পড়নি, ‘রাসূল তোমাদেরকে যা নির্দেশ দেন তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে বারণ করেন তা থেকে বিরত থাক। আর আল্লাহকে ভয় করে চলো’ (হাশর ৭)। মহিলাটি বলল, হ্যঁা, নিশ্চয়ই। ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) বললেন, ‘রাসূল (ছাঃ) এ বিষয়ে নিষেধ করেছেন’।[15]
ইমাম শাফেঈ (রহঃ) একবার মক্কায় ঘোষণা করলেন, ‘আমি প্রত্যেক প্রশ্নের জবাব কুরআন থেকে দিতে পারি, জিজ্ঞেস কর, যা জিজ্ঞেস করতে চাও। জনৈক ব্যক্তি আরয করল, এক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় প্রজাপতি মেরে ফেলল, এর বিধান কি? ইমাম শাফেঈ (রহঃ) সূরা হাশরের উক্ত (৭নং) আয়াতটি তেলাওয়াত করে হাদীছ থেকে এর বিধান বর্ণনা করে দিলেন’।[16]
উপরের দু’টি ঘটনা থেকে পরিষ্কার হয় যে, কিতাবুল্লাহ বলতে কুরআন ও হাদীছ উভয়কে বুঝায়। বিষয়টি রাসূল (ছাঃ) অন্য হাদীছে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, تَرَكْتُ فِيْكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ ‘আমি তোমাদের নিকট দু’টি বস্ত্ত ছেড়ে যাচ্ছি; যতদিন তোমরা ঐ দু’টি বস্ত্তকে মযবুতভাবে ধরে থাকবে, ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না। সে দু’টি বস্ত্ত হ’ল আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাত’।[17]
এ হাদীছে রাসূল (ছাঃ) গোমরাহী থেকে বাঁচার জন্য দু’টি বস্ত্তকে অাঁকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন। এখানে রাসূল (ছাঃ) তাকীদ দিয়ে বলেছেন যে, আমার উম্মত দু’টি জিনিস অাঁকড়ে ধরলে কখনো বিভ্রান্ত হবে না।
ছাহাবীগণ ও সালাফে ছালেহীন সত্যের পথে থাকার জন্য ও মুক্তিপ্রাপ্ত দলের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য সুন্নাতের একনিষ্ঠ অনুসরণ করেছেন এবং অন্যকে অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন-
(ক) আলী (রাঃ) ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেছেন, لا ينفع قول إلا بعملٍ، ولا عمل إلا بقولٍ، ولا قول ولا عمل إلا بنيةٍ، ولا نية إلا بموافقة السنة. ‘আমল ব্যতীত কোন কথা উপকারে আসবে না, কোন আমলও কথা ব্যতীত উপকারে আসবে না। কোন কথা ও আমল নিয়ত ব্যতীত উপকারে আসবে না, আর কোন নিয়তও উপকারে আসবে না সুন্নাতের আনুকূল্য ব্যতীত’।[18]
(খ) উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) বলেছেন, عليـكم بالسبـيل والسـنة. ‘তোমরা সঠিক পথ ও সুন্নাত অবধারিত করে নাও’।[19]
(গ) প্রখ্যাত তাবেঈ যুহরী (রহঃ) বলেন, كان من مـضى من علمائنا بقول الاعةـصام بالسنة نجاة. ‘আমাদের আলেমদের মধ্য হ’তে যাঁরা অতীত হয়েছেন, তাঁরা বলতেন সুন্নাতকে ভালভাবে অাঁকড়ে ধরা মুক্তি (রক্ষাকবচ) স্বরূপ’।[20]
(ঘ) ইমাম মালেক (রহঃ) বলেছেন, السـنة سفـينة نوحٍ، من ركبـها نجا، ومن تخـلّف عنها غرق. ‘সুন্নাত হ’ল নূহ (আঃ)-এর নৌকা সদৃশ। যে তাতে আরোহণ করবে সে পরিত্রাণ পাবে, আর যে তা থেকে পিছে অবস্থান করবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে’।[21]
উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যে, মুক্তিপ্রাপ্ত দল হওয়ার জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত ও তাঁর ছাহাবীদের সুন্নাতের উপর আমল করতে হবে। রাসূলকে বাদ দিয়ে বা তাঁর ছহীহ হাদীছের বিরোধিতা করে কোন ইমাম, পীর বা কোন দলের অন্ধ অনুসরণ করে মুক্তি পাওয়া যাবে না। রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত এবং ছাহাবীদের অনুসরণের মাধ্যমে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্তর্ভুক্ত হওয়া যাবে।
বর্তমান শতধাবিভক্ত সমাজে আমাদেরকে সঠিক দল খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আশ্রয় নিতে হবে। কুরআন ও হাদীছের আলোকে যারা হক্ব তাদেরকেই সঠিক জানতে হবে। অনেকে নিজেদেরকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত বলে থাকেন। অথচ তাদের কাজগুলি সুন্নাত বিরোধী। সুন্নাতবিরোধী আমল করে কিভাবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্তর্ভুক্ত হওয়া যায়?
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের পরিচয় দিতে গিয়ে আবু মুহাম্মদ আলী ইবনু হাযম আন্দালুসী (মৃত ৪৫৬ হিঃ) বলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত, যাদেরকে আমরা হক্বপন্থী ও তাদের বিরোধী পক্ষকে বাতিলপন্থী বলছি তাঁরা হ’লেন, ছাহাবায়ে কেরাম, তাঁদের অনুসারী শ্রেষ্ঠ তাবেঈগণ, আহলে হাদীছগণ, ফক্বীহদের মধ্যে যারা তাঁদের অনুসারী হয়েছেন যুগে যুগে আজকের দিন পর্যন্ত এবং প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের ঐ আম জনসাধারণ যারা তাঁদের অনুসারী হয়েছেন’।[22]
রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আক্বীদা ও মাযহাব মুয়াসিরা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডঃ নাছের বিন আবদুল করীম আল-আকল প্রণীত ‘আহলে সুনণাত ওয়াল জামা‘আতের পরিচিতি’ নামক পুস্তকের তৃতীয় পরিচ্ছেদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন এভাবে-
এক. তাঁরা হচ্ছেন নবী করীম (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণ। যাঁরা সুন্নাতকে জেনেছেন, তাকে সংরক্ষণ করেছেন এবং তার উপর আমল করেছেন। রিওয়ায়াত ও দিরায়াতের মাধ্যমে তা (সুন্নাত) আমাদের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। কর্মনীতি ও কর্মসূচীর দিক হ’তে তাঁরাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের প্রকৃত দাবীদার ও হকদার। কেননা তাঁরাই যুগ, আমল এবং ইলমের দিক দিয়ে সুন্নাতের নিকটবর্তী।
দুই. এরপর হচ্ছেন ছাহাবীদের অনুসারীগণ (তাবেঈগণ), যারা তাঁদের নিকট হ’তে দ্বীনকে গ্রহণ করেছেন, দ্বীনের শিক্ষা গ্রহণ করেছেন, সে অনুযায়ী আমল করেছেন এবং তা প্রচার করেছেন। তাঁরাই তাবেঈন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাবেঈদের অনুসারীগণ। তারাই হচ্ছেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত। তারা একে অাঁকড়ে ধরেছেন। এতে বিদ‘আত বা নতুন কিছু চালু করেননি। আর মুমিনদের পথ ছাড়া অন্য কোন পথও অন্বেষণ করেননি।
তিন. আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত হচ্ছেন সালাফে ছালেহীন আহলুল কিতাব (আহলুল কুরআন) ওয়াস সুন্নাহ। রাসূল (ছাঃ)-এর হিদায়াতের উপর আমলকারী, ছাহাবা, তাবেঈ এবং বরেণ্য ওলামায়ে কেরামের পদাংক অনুসরণকারী, যারা দ্বীনের মধ্যে বিদ‘আত চালু করেননি বা তাতে কোন পরিবর্তন সাধন করেননি। আর দ্বীনে ইতিপূর্বে ছিল না এ ধরনের নতুন কোন পথ বা মত সৃষ্টি করেননি।
চার. আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত হচ্ছে ফিরক্বায়ে নাজিয়া বা মুক্তিপ্রাপ্ত দল। ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাঁরাই আল্লাহর মদদপুষ্ট ও সাহায্যপ্রাপ্ত দল হিসাবে টিকে থাকবে।
পাঁচ. তারা হবে সংখ্যায় কম (অপরিচিত), যখন বিদ‘আত, কুসংস্কার বৃদ্ধি পাবে এবং যুগ খারাপ হবে তখনও তারা হক্বের উপরে থাকবে।
ছয়. তারা হচ্ছেন আছহাবে হাদীছ বা আহলুল হাদীছ; রেওয়ায়াত, দিরায়াত, ইলম এবং আমলের দিক থেকে।[23]
এছাড়াও ‘মুক্তিপাপ্ত দল কোন্টি’ এর পরিচয় দিতে গিয়ে মুহাদ্দিছগণ ‘আহলুল হাদীছ’দের নাম উল্লেখ করেছেন। যেমন-
(ক) আবদুল্লাহ ইবনুল মোবারক বলেন, هم عندى أصحاب الحديث ‘আমার নিকটে তাঁরা হ’ল হাদীছের অনুসারী বা আহলুল হাদীছ’।[24]
(খ) ইমাম বুখারীর (রহঃ)-এর উস্তাদ আলী ইবনুল মাদীনী বলেন, هم أهل الحديث ‘তাঁরা হচ্ছেন আহলুল হাদীছ’।[25]
(গ) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেন, ‘যদি তারা আহলুল হাদীছ না হয়, তাহ’লে আমি জানি না তারা কারা’।[26] উল্লেখ্য যে, মাযহাব চতুষ্টয়ের তিন ইমামই আহলে
হাদীছ হিসাবে পরিচিত ছিলেন।[27]
(ঘ) ইয়াযীদ ইবনে হারূণ (১১৮-২১৭ হিঃ) ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (১৬৪-২৪১হিঃ) বলেন, إِنْ لَّمْ يَكُوْنُوْا أَصْحَابَ الْحَدِيْثِ فَلاَ أَدْرِىْ مَنْ هُمْ؟ ‘তাঁরা যদি আহলেহাদীছ না হন, তবে আমি জানি না তারা কারা’।[28] ইমাম বুখারীও এবিষয়ে দৃঢ়মত ব্যক্ত করেছেন’। ক্বাযী আয়ায বলেন, أَرَادَ أَحْمَدُ أَهْلَ السُّنَّةِ وَ مَنْ يَّعْتَقِدُ مَذْهَبَ أَهْلِ الْحَدِيْثِ ‘ইমাম আহমাদ (রহঃ) একথা দ্বারা আহলে সুন্নাত এবং যারা আহলুল হাদীছ-এর মাযহাব অনুসরণ করে, তাদেরকে বুঝিয়েছেন’।[29] ইমাম আহমাদ আরও বলেন, لَيْسَ قَوْمٌ عِنْدِىْ خَيْراً مِّنْ أَهْلِ الْحَدِيْثِ، لاَ يَعْرِفُوْنَ إِلاَّ الْحَدِيْثَ ‘আহলেহাদীছের চেয়ে উত্তম কোন দল আমার কাছে নেই। তারা হাদীছ ছাড়া অন্য কিছু চেনে না’।[30]
(ঙ) ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর প্রধান শিষ্য ইমাম আবু ইউসুফ (১১৩-১৮২ হিঃ) একদা তাঁর দরবার সন্মুখে কতিপয় আহলেহাদীছকে দেখে উল্লসিত হয়ে বলেন, مَا عَلَى الْأَرْضِ خَيْرٌ مِّنْكُمْ ‘ভূপৃষ্ঠে আপনাদের চেয়ে উত্তম আর কেউ নেই’।[31]
(চ) আহমাদ ইবনু সারীহ বলতেন, أَهْلُ الْحَدِيْثِ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِنَ الْفُقَهَاءِ لِاِعْتِنَائِهِمْ بِضَبْطِ الْأُصُوْلِ ـ ‘দলীলের উপরে কায়েম থাকার কারণে আহলেহাদীছগণের মর্যাদা ফক্বীহগণের চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বে।[32]
(ছ) ইমাম আবূদাঊদ (২০২-২৭৫ হিঃ) বলেন, لَوْلاَ هَذِهِ الْعِصَابَةُ لَانْدَرَسَ الْإِسْلاَمُ يِعْنِىْ أَصْحَابَ الْحَدِيْثِ- ‘আহলেহাদীছ জামা‘আত যদি দুনিয়ায় না থাকত, তাহ’লে ইসলাম দুনিয়া থেকে মিটে যেত’।[33]
(জ) ওছমান ইবনু আবী শায়বা একদা কয়েকজন আহলেহাদীছকে হয়রান অবস্থায় দেখে মন্তব্য করেন যে, إنَّ فَاسِقَهُمْ خَيْرٌ مِنْ عَابِدِ غَيْرِهِمْ ‘আহলেহাদীছের একজন ফাসিক্ব ব্যক্তি অন্য দলের একজন আবিদের চেয়েও উত্তম’।[34]
(ঝ) ইমাম আহমাদ ইবনু তায়মিয়াহ (৬৬১-৭২৮ হিঃ) বলেন,
مِنَ الْمَعْلُوْمِ لِكُلِّ مَنْ لَهُ خِبْرَةٌ أَنَّ أَهْلَ الْحَدِيْثِ مِنْ أَعْظَمِ النَّاسِ بَحْثًا عَنْ أَقْوَالِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ وَ طَلَبًا لِّعِلْمِهَا وَ أَرْغَبِ النَّاسِ فِىْ اِتِّبَاعِهَا وَ أَبْعَدِ النَّاسِ عَنِ اتَّبَاعِ هَوًى يُخَالِفُهَا … فَهُمْ فِىْ أَهْلِ الْإِسْلاَمِ كَأَهْلِ الْإِسْلاَمِ فِىْ أَهْلِ الْمِلَلِ ـ
‘যার কিছুটা অভিজ্ঞতা রয়েছে, তার এটা জানা কথা যে, আহলেহাদীছগণ হ’লেন, মুসলমানদের মধ্যে রাসূলুলাহ (ছাঃ)-এর বাণীসমূহের ও তাঁর ইল্মের অধিক সন্ধানী ও সে সবের অনুসরণের প্রতি অধিক আগ্রহশীল এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ হ’তে সর্বাধিক দূরে অবস্থানকারী, যার বিরোধীতা সে করে থাকে।… মুসলমানদের মধ্যে তাদের অবস্থান এমন মর্যাদাপূর্ণ, যেমন সকল জাতির মধ্যে মুসলমানদের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান’।[35]
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত কারা এ প্রশ্নের জবাবে শায়খ মুহাম্মদ বিন ছালিহ আল-উছায়মীন (রহঃ) বলেন, ‘আহলে সুনণাত ওয়াল জামা‘আত তারাই, যারা আক্বীদা ও আমলের ক্ষেত্রে সুন্নাতকে অাঁকড়ে ধরে থাকে ও তার উপর ঐক্যবদ্ধ থাকে এবং অন্য কোন দিকে দৃষ্টি দেয় না। এ কারণেই তাদেরকে আহলে সুন্নাত রূপে নামকরণ করা হয়েছে। কেননা তাঁরা সুন্নাহর ধারক ও বাহক। তাদেরকে আহলে জাম‘আতও বলা হয়। কারণ তাঁরা সুন্নাহর উপর জামা‘আতবদ্ধ বা ঐক্যবদ্ধ’।[36]
এ কথা পরিষ্কার যে, পরকালে মুক্তিপাপ্ত দলের অন্তর্গত হওয়ার জন্য কোন নামী-দামী দলের সদস্য হওয়া বা কোন নামকরা ইমামের অনুসারী হওয়া শর্ত নয়; বরং যথাযথভাবে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসরণ করা শর্ত। সুতরাং যে দল বা সংগঠনের কথা রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছের সাথে মিলে যায়, সে দলের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করতে হবে। পক্ষান্তরে কোন ইমাম বা দলের কথার সাথে যদি রাসূলের হাদীছের বৈপরিত্য পাওয়া যায়, তাহ’লে দল বা ইমাম যত বড়ই হোক না কেন সে ক্ষেত্রে রাসূলের হাদীছের অনুসরণ করাই ঈমানের দাবী। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন- আমীন!
[1]. আহমাদ, নাসাঈ, হাকেম, মিশকাত হা/১৬৬; তাফসীরে ইবনে কাছীর সূরা আন‘আমের ১৫৩নং আয়াতের তাফসীর দ্রঃ।
[2]. মুসনাদে আহমাদ হা/২৫০১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২০৪, সনদ হাসান।
[3]. আহমাদ হা/১৬৯৭৯; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৯২; মিশকাত হা/১৭২।
[4]. বুখারী হা/৩৯৯২; মুসলিম ‘ইমারত’ অধ্যায় হা/১৯২০।
[5]. তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/১৭২, সনদ ছহীহ, ‘কিতাব ও সুন্নাহ অাঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ।
[6]. হাদীছটি যঈফ; তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/১৭৪-এর টিকা ‘ঈমান‘ অধ্যায়, ‘কিতাব ও সুন্নাহ অাঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ।
[7]. যঈফ ইবনু মাজাহ হা/৭৮৮; সিলসিলা যঈফা হা/২৮৯৬।
[8]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশক্ব ১৩/৩২২ পৃঃ; সনদ ছহীহ, তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/১৭৩, ১/৬১ পৃঃ।
[9]. ড. নাছের বিন আব্দুল করীম আল-আকল, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের পরিচিতি, অনুঃ মুহাম্মদ শামাউন আলী, (ঢাকা : ইসলামী ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংস্থা, জানুয়ারী ১৯৯৭), পৃঃ ৬৪।
[10]. মুসলিম হা/১৪৫; মিশকাত হা/১৫৯ ‘কুরআন ও সুন্নাহ অাঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ।
[11]. ছহীহ তিরমিযী হা/২১২৯; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৩৪৮; হাকেম ১/১২৯; আহমাদ বিন হাম্বল, সুন্নাতের মূলনীতি, বাংলায় ইসলাম, (ইংল্যান্ড দ্বিতীয় সংস্করণ, এপ্রিল ২০০২), পৃঃ ২৪।
[12]. তিরমিযী হা/২৬৪১; মিশকাত হা/১৭১ ‘কুরআন ও সুন্নাহ দৃঢ়ভাবে অাঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৪৮।
[13]. আবূ দাউদ হা/৪৬০৭; তিরমিযী হা/২৬৭৬; ইবনু মাজাহ হা/৪২৪৪; আহমাদ হা/১৬৬৯৪; ইবনু খুযায়মা, ‘জুম‘আ’ অধ্যায় হা/১৭৮৫; মিশকাত হা/১৬৫; রিয়াযুছ ছালেহীন হা/১৫৭।
[14]. মুসলিম, বাংলা মিশকাত ‘মানাসিক‘ অধ্যায় ‘বিদায় হজ্জের ভাষণ’ অনুচ্ছেদ, হা/২৪৪০।
[15]. বুখারী, ‘কিতাবুত তাফসীর’, সূরা হাশর, হা/৪৫১৮।
[16]. সুয়ুতী, আল-ইতক্বান ২/১২৬।
[17]. হাকেম ১/৯৩; মুওয়াত্ত্বা ‘কদর’ অধ্যায়; মিশকাত হা/১৮৩।
[18]. আজুররী, কিতাবুশ শরী‘আত, পৃঃ ১২৩। গৃহীত : বায়হাক্বী আল-খুত্বাস সালীমাহ ফী বায়ানি উজুবি ইত্তিবাইস সুন্নাহ আল-ক্বারীমা, পৃঃ ৫।
[19]. শরহু উছুলিল ইতিকাদি আহলিস সুন্নাহ, ১/৫৬; আল-খুত্বাস সালীমাহ ফী বায়ানি উজুবি ইত্তিবাইস সুন্নাহ আল-ক্বারীমা, পৃঃ ৬।
[20]. সুনানুদ দারেমী, মুক্বাদ্দামাহ, আছার নং ৯৬, সনদ ছহীহ।
[21]. আল-খুত্বাস সালীমাহ ফী বায়ানি উজুবি ইত্তিবাইস সুন্নাহ আল-ক্বারীমা, পৃঃ ৬।
[22]. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল গালিব, আহলেহাদীছ আন্দোলন কি ও কেন, ৫ম সংস্করণ, পৃঃ ১০।
[23]. আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের পরিচিতি, পৃঃ ৮২-৮৩।
[24]. শায়খ মুহাম্মদ বিন জামিল, আল-ফিরকাতুন নাজিয়াহ, ‘মুক্তিপ্রাপ্ত দল কোনটি’ অনুচ্ছেদ।
[25]. ঐ।
[26]. তিরমিযী, ফাৎহুল বারী, ১৩/৩০৬ হা/৭৩১১-এর ব্যাখ্যা; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭০-এর ব্যাখ্যা।
[27]. মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম, ইসলামী শরীয়াতের উৎস (ঢাকা : আধুনিক প্রকাশনী, আগষ্ট ১৯৯৪), পৃঃ ৬৯-৭১।
[28]. তিরমিযী, মিশকাত হা/৬২৮৩ -এর ব্যাখ্যা; ফাৎহুল বারী ১৩/৩০৬ হা/৭৩১১-এর ব্যাখ্যা; সিলসিলা ছাহীহাহ হা/২৭০-এর ব্যাখ্যা; শারফ, পৃঃ ১৫।
[29]. ফাৎহুল বারী ‘ইলম’ অধ্যায় ১/১৯৮ হা/৭১-এর ব্যাখ্যা।
[30]. আবুবকর আল-খত্বীব বাগদাদী, শারফু আছহাবিল হাদীছ পৃঃ ২৭।
[31] . শারফ, পৃঃ ২৮; আহলেহাদীছ আন্দোলন কি ও কেন? পৃঃ ১৩।
[32]. আব্দুল ওয়াহ্হাব শা‘রানী, মীযানুল কুবরা (দিলী: ১২৮৬ হিঃ) ১/৬২ পৃঃ।
[33]. শারফ ২৯ পৃঃ; আহলেহাদীছ আন্দোলন কি ও কেন? পৃঃ ১৩।
[34]. শারফ ২৭ পৃঃ; আহলেহাদীছ আন্দোলন কি ও কেন? পৃঃ ১৩।
[35]. আহমাদ ইবনু তাইমিয়াহ, মিনহাজুস সুন্নাহ (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি) ২/১৭৯ পৃঃ।
[36]. ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, (ঢাকা : তাওহীদ পাবলিকেশন্স, দ্বিতীয় প্রকাশ, ডিসেম্বর ২০০৭), পৃঃ ৬০।