রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি হায়াতুন্নবী?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবশ্যই ইন্তাকাল করেছেন।
কুরআন থেকে দলিল –
(১)আর মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন। তাহলে কি তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে? বস্তুতঃ কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে, তবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ, আল্লাহ তাদের সওয়াব দান করবেন। (সুরা ইমরান , আয়াত – ১৪৪ )
(২)তুমি তো নিশ্চয় মৃত্যুবরণ করবে, আর তারাও নিশ্চয়ই মৃত্যুমুখে পড়বে।
(সুরা যুমার , আয়াত – ৩০)
(৩)আর তোমার আগে আমরা কোনো মানুষের জন্য স্থায়িত্ব দিই নি। সুতরাং যদি তোমাকেই মারা যেতে হয় তবে কি তারা চিরজীবী হবে ?(সুরা আম্বিয়া (০২১) , আয়াত – ৩৪)
সহীহ হাদিস থেকে দলিল –
(১) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন ,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোগশয্যায় (স্ত্রীগণের নিকট অবস্থানের) পালার সময় কাল জানতে চাইতেন। আমার অবস্থান আজ কোথায় হবে? আগামী কাল কোথায় হবে? আয়িশা (রা.) এর পালা বিলম্বিত হচ্ছে বলে ধারণা করেই এ প্রশ্ন করতেন। (আয়িশা (রা.) বলেন) যেদিন আমার পালা আসলো, সেদিন আল্লাহ তাঁকে আমার কণ্ঠদেশ ও বক্ষের মাঝে (হেলান দেওয়া অবস্থায়) রূহ কবয করলেন এবং আমার ঘরে তাঁকে দাফন করা হয়।(সহীহুল বুখারী , খণ্ড – ২ , পর্ব – ২৩ (জানাযা) , হাদিস নং – ১৩৮৯ , তাওহীদ প্রকাশনী )
(২) আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন –
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আমি ‘জাওয়ামিউল কালিম’ (ব্যাপক অর্থবোধক সংক্ষিপ্ত বাক্য) সহ প্রেরিত হয়েছি এবং আমাকে প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। একবার আমি ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পেলাম, পৃথিবীর ভা-ারসমূহের চাবি আমাকে দান করা হয়েছে এবং তা আমার হাতে রেখে দেওয়া হয়েছে। আবূ হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তিকাল করে গেছেন। আর তোমরা তা ব্যবহার করছ কিংবা বলেছিলেন তোমরা তা থেকে উপকৃত হচ্ছ কিংবা তিনি অনুরূপ কোন বাক্য বলেছিলেন।(সহীহুল বুখারী , খণ্ড – ৬ , পর্ব – ৯৬ (কুরআন ও সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারন করা) , হাদিস নং – ৭২৭৩ , তাওহীদ প্রকাশনী )
বিদাতীরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হায়াতুন্নবী বলার পক্ষে একটি দলিল দেন , সেটি হল –
“যে আমার কবরের নিকট আমার প্রতি দরূদ পাঠ করবে; আমি তা শ্রবন করি এবং যে ব্যক্তি আমার প্রতি দূর হতে দরূদ পাঠ করবে; একজন ফেরেশতাকে তা আমার নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য দায়িত্ব দেয়া হবে এবং তা তার দুনিয়া ও আখেরাতের কর্মের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে এবং আমি তার জন্য সাক্ষী বা সুপারিশকারী হয়ে যাব।”—-হাদীসটি জাল।
হাদীসটি ইবনু সাম’উন “আল-আমালী” গ্রন্থে (২/১৯৩/২) খাতীব বাগদাদী আর “আত-তারীখ” গ্রন্থে (৩/২৯১-২৯২) এবং ইবনু আসাকীর (১৬/৭০/২) মুহাম্মাদ ইবনু মারওয়ান সূত্রে আমা’শ হতে এবং তিনি সালেহ হতে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ মুহাম্মাদ ইবনু মারওয়ান সূত্রে ইবনুল জাওযী “আল-মাওযূ’আত” গ্রন্থে (১/৩০৩) উকায়লীর বর্ণনা হতে হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেন,এটি সহীহ নয়। মুহাম্মাদ ইবনু মারওয়ান হচ্ছেন সুদ্দী আস-সাগীর; তিনি মিথ্যুক। উকায়লী বলেনঃ এ হাদীস টির কোন ভিত্তি নেই।ইবনু তাইমিয়্যা “মাজমূ’উ ফাত ওয়া” গ্রন্থে (২৭/২৪১) বলেছেনঃ এ হাদীসটি বানোয়াট, এটি মারওয়ান আমা’শ হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি সকলের ঐকমত্যে মিথ্যুক।
( তথ্য ঃ ‘যঈফ এবং জাল হাদীছ সিরিজ এবং উম্মাতের মাঝে তার কুপ্রভাব । খণ্ড – ১ , হাদিস নং – ২০৩ , প্রকাশনায় – তাওহীদ প্রকাশনী )
আল্লাহ আমাদের সকলকে হক কথা বোঝার এবং সেই অনুসারে আমল করার তৌফিক দান করুন , আমীন ।।