আমি তো নিজের জন্য সাজি, কাউকে দেখানোর জন্য না

ঘরে যাচ্ছে-তাই অবস্থায় থেকে বাইরে সেজেগুজে-পরিপাটি হয়ে যাওয়া অর্থ আমার কিছুতেই বোধগম্য হয় না…
কেউ যদি প্রশ্ন করে তবে উত্তর হয় এরকম – ‘আমি নিজের জন্য সাজি, কাউকে দেখানোর জন্য না!!’
অথচ এই বোন গুলো শুধুমাত্র বাইরে যাওয়ার সময়ই ভাল পোশাক টা বাছাই করেন,
পোশাকের সাথে ম্যাচিং করে অর্নামেন্টস, লিপস্টিক, হান্ডব্যাগ বাছাই করেন!
সাজসজ্জা যদি নিজের জন্যই করেন তবে কেন শুধুমাত্র তা বাইরে যাওয়ার সময়ই হয়??

একটু থমকে দাঁড়াই…
একটু ভাবি…
একটু বিবেকের কাছে প্রশ্ন করি…
আমি কার জন্য নিজেকে পরিপাটি করে নিয়ে রাস্তায় প্রদর্শন করছি?
আল্লাহ তো হুকুম করেছেন নিজেকে জাহিলী যুগের ন্যায় প্রদর্শন না করতে!
আল্লাহর হুকুমের বাইরে গিয়ে এই সাজসজ্জা প্রদর্শন করছি কাকে খুশি করার জন্য??

একটু অন্যভাবে ভাবা যাক…
ধরুন, আপনার বাসার জন্য একজন কাজের লোক দরকার…
আপনি খুঁজে খুঁজে পছন্দ মত একজন কাজের লোক নিয়ে আসলেন, মাস শেষে উচ্চ বেতন! তাকে অর্ডার করলেন কি কি কাজ প্রতিদিন করতে হবে, এবং করতেই হবে!
কিন্তু আপনার সেই কাজের লোক আপনার কথা থোরাই কেয়ার করে আপনার পাশের বাসার লোকদের সব কাজ খুশি মনে করে দিচ্ছে!
আপনি একে তো জানেন পাশের বাসার লোক গুলো ভাল না,
দ্বিতীয়ত, এত উচ্চ বেতন দিয়ে কাজের লোক রেখেছেন অথচ যে আপনার কোন কাজই না করে ঐ বাসার খারাপ লোক গুলোর কাজ বিনামূল্যে করে দিচ্ছে!
আপনি বারবার সর্তক করার পরও সে একই কাজ করছে! কেমন লাগবে আপনার?
.
আপনি যত শান্ত-শিষ্ট, ধৈর্যশীল ই হোন না কেন.. আপনি বকাঝকা করতে বাধ্য হবেন..
আপনি রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে গায়ে হাত তুলতে বাধ্য হবেন!
বাঁচুক আর মরুক! আগে আপনার জিদ উসুল করে নিবেন আপনি!

একটু চিন্তা করে দেখুন আপনিও দুনিয়ায় একজন কাজের লোক! আপনার মালিক আপনার সৃষ্টিকর্তা- আল্লাহ!
আপনার মালিক আপনাকে হুকুম দিয়েছেন প্রতিদিন ৫ওয়াক্ত সালাত (নামায) আদায় করতেই হবে,
রমজানে রোজা রাখতেই হবে,
সামর্থ্য হলে হজ্জ এবং যাকাত দিতেই হবে,
মহিলাদের জন্য সর্বাঙ্গের এমন কি কন্ঠস্বরেরও পর্দা,
আর পুরুষের জন্য দৃষ্টির পর্দা করতেই হবে….
কিন্তু আপনি আপনার মালিকের হুকুম কে থোরাই কেয়ার করে আপনার খুব নিকটে বসবাসকারী ইবলিশের খেয়াল খুশি মত কাজ করছেন!
আপনি কতটা অকৃতজ্ঞ..
আপনি কতটা বোকা…
আপনি কতটা মাজনুন হলে ইচ্ছাকৃত আপনার রব কে রাগান্বিত করে তুলছেন প্রতি মুহূর্তে!!
আপনার রব যদি আপনার চেয়ে অকল্পনীয় গুণ বেশী ধৈর্যশীল এবং দয়াবান না হতেন তবে এত অবাধ্যতার জন্য আপনি এক মিলি সেকেন্ড সময় টিকে থাকতে পারতেন না এই দুনিয়ায়!
আপনি ধ্বংস হয়ে যেতেন..
আপনি ধ্বংস হয়ে যেতেন…
আপনি ধ্বংস হয়ে ধূলিকণার মত বাতাসে উড়ে যেতেন!

আপনি আল্লাহর হুকুম কে অগ্রাহ্য করে,
কেবল মাত্র রাস্তার কিছু মানুষের সামনে নিজের আধুনিকতা, সৌন্দর্য, রূপ লাবন্য, ফিগার কে ফুটিয়ে তোলার জন্য,
যতভাবে পারেন নিজেকে সজ্জিত করছেন!
#I_repeat….
কেবল মাত্র রাস্তার কিছু মানুষের সামনে নিজের আধুনিকতা, সৌন্দর্য, রূপ লাবন্য, ফিগার কে ফুটিয়ে তোলার জন্য,
যতভাবে পারেন নিজেকে সজ্জিত করছেন!
অথচ আপনার সৌন্দর্য দেখার অধিকার শুধুমাত্র আপনার স্বামীর!
আপনি বিবাহিত হলে, সাজসজ্জা করবেন শুধুমাত্র আপনার স্বামীর জন্য…
আপনি অবিবাহিত হলে, ধৈর্যধারন করবেন আপনার স্বামী আসা পর্যন্ত…
অথচ, আপনি সাজসজ্জা করছেন শুধু বাইরে বের হলেই!!
কিভাবে পারছেন??
নিজের রুচিবোধ কি একবারও জাগ্রত হয়না?

বোরকা পড়ুয়া আপনি..
বোরকা পড়ছেন বলেই ধারনা করছেন পর্দা করছি…
অথবা, ড্রেসের সাথে কালারফুল, সুরুচিসম্পন্ন একটা হিজাব মাথায় পেঁচিয়ে নিয়েই ভাবছেন আপনি পর্দা করছেন…
হিজাব পড়েও আপনার সাজসজ্জার কোন কমতি নেই!
লিপস্টিক ও দিচ্ছেন ঠোঁট রাঙাতে!
কার জন্য?
হিজাব পড়েও আপনি কার জন্য বাইরে যাওয়ার সময় সাজুগুজু করছেন?
আপনি ভাবছেন আপনি শালিন ভাবে চলছেন!
আল্লাহ ওয়াস্তে আপনার এই পর্দার কোন মূল্যই নেই আপনার রবের কাছে!
…………বিশ্বাস না হলে একবার নামায শেষে জায়নামাযে বসে অন্তর থেকে
আল্লাহ কে প্রশ্ন করুন- ‘ইয়া রব, আমি তো এভাবে পর্দা করছি, আপনি কি আমার উপর খুশি?’
এবার অনুভব করুন আপনার হৃদয়ে কোন প্রশান্তি অনুভব করছেন নাকি একটা খচখচানি অনুভব করছেন!!
একবার না বুঝলে প্রতি নামাযের পর করুন.. করতেই থাকুন..
ইন শা আল্লাহ, রব আপনার প্রশ্নের জবাব আপনার মনের মধ্যেই দিয়ে দিবেন…

আমরা অযথা এই দুনিয়ায় আসিনি!
একটা সুনির্দিষ্ট কারন আছে…
আপনার/আমার রব আমাদের অযথায় সৃষ্টি করেননি…
আমাদের সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র এবং শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদাতের জন্য…
আর তামাম দুনিয়ার সব সৃষ্টি করেছেন আমাদের উপকারের জন্য….
আর আপনি/আমি কিনা আমার সৃষ্টির হেতু ভুলে গিয়ে দুনিয়ার কালচার/স্ট্যাটাসের পিছনে নিজেকে বিকিয়ে দিচ্ছি!
অথচ স্বল্প এই দুনিয়ার জীবনের কর্মফলের উপর নির্ভর করবে আমার ইল্লিন অথবা আমার সিজ্জিন,
অবশেষে আমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম!
ধ্যাত্তেরী… কতটা বোকা হলে দুনিয়ার বিনিময়ে নিজেকে জাহান্নামে বিক্রি করে দেয়া সম্ভব!!!!
.
 লিখেছেন →বোন, ( MarJaana IsRaat )