‘আল্লাহ’ এবং ‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ এক সাথে লেখা। সমস্যা কোথায়?

আমাদের দেশে দেখা যায়, পাশাপাশি ‘আল্লাহ’ এবং ‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ মসজিদের মধ্যে, ঘরে, দোকানে, যানবাহন ইত্যাদিতে লিখে রাখা হয়। এটা কি জায়েজ? এ ব্যাপারে সৌদী আরবের অন্যতম সেরা আলেম আল্লামা মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমীন (রাহ.) কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি যে ফতোয়া দিয়েছেন তা নিম্নে তুলে ধরা হল:
আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসাইমীন (রাহ:) এর ফতোয়া:
প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। ‘আল্লাহ’ এবং ‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ লিখে ছবি আকারে দেয়ালে টাঙ্গীয়ে রাখার বিধান কি? আমরা অনেক সময় দেখি দেয়ালে ‘আল্লাহ’ শব্দ এবং তার পাশে ‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ লিখে টাঙ্গীয়ে রাখা হয়েছে। অথবা কাপড়ের টুকরা, বই-পুস্তক বা কুরআনের উপর এভাবে লিখে রাখা হয়েছে। এটা কি ঠিক?
উত্তর: না, এটা ঠিক নয়। কারণ এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহর সমকক্ষ বানানো হয়। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে চেনে না এমন কোন লোক যদি এই লেখা দেখে তবে নি:সন্দেহে ধারণা করবে এ দুটি নাম সমমর্যাদার অধিকারী। সুতরাং এ অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম মুছে ফেলা আবশ্যক।
এখন বাকি থাকল শুধু ‘আল্লাহ’ শব্দ। কিন্তু এখানেও সমস্যা হল, এটাও সুফীবাদীদের কথা। কারণ, সুফীবাদীরা (কুরআনের ও হাদীসের) যিকির বাদ দিয়ে শুধু ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ বলে যিকির করে। অত:এব, শুধু আল্লাহ শব্দও মুছে ফেলতে হবে। মোটকথা, ((আল্লাহ)) অথবা ((মুহাম্মাদ)) কোন দেয়ালে, কাপড়ের টুকরা বা অন্য কোথাও লেখা যাবে না।
এরকম লেখা থাকলে ঘরে বরকত নাযিল হবে এ ধারণা কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী। কোথাও নাই যে, এভাবে আল্লাহ ও রাসূলের নাম ঘরে থাকলে বরকত নাযিল হবে। বরং প্রকৃত বরকত হল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এর আদেশ এবং নিষেধকে মনে-প্রাণে গ্রহন করা এবং তদানুযায়ী আমল করা এবং কুরআন-সুন্নাহতে বর্ণিত দুআ ও যিকির সঠিক পদ্ধতিতে নিয়মিত পাঠ করা। সাহাবায়ে কেরামও তাঁদের নাম কখনো ঝুলিয়ে রাখতেন না। বরং পরবর্তীতে মানুষের মাঝে মূর্খতা ছড়িয়ে পড়ার ফলে এভাবে মানুষ কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন-যাপন বাদ দিয়ে নিজেদের ঘরে, দোকান পাটে এমন কি মসজিদের মধ্যেও বরকত লাভের আশায় এসব লিখে ঝুলিয়ে রাখা শুরু করে।
পরিশেষে বলব, মুসলমানদের জন্য আবশ্যক হল, সকল ধরণের শিরক, বিদআত, কুসংস্কার এবং ইসলামের নামে নিজেদের মনগড়া কার্যক্রম থেকে বের হয়ে আসা এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দেখানো পথ ধরে চলা। তবেই দুনিয়ার জীবনে যেমন পাওয়া যাবে আল্লাহর রহমত, বরকত, সুখ-সমৃদ্ধি তেমনি পাওয়া যাবে জাহান্নামের কঠিন শস্তি থেকে পরিত্রাণ।