আল্লাহ ব্যতীত যে ব্যক্তি এলমে গায়েব জানে বলে দাবী করে

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ তিনি আলিমূল গায়েব (অদৃশ্যের জ্ঞানী) বস্তুতঃ তিনি স্বীয় গায়েবের (অদৃশ্য) বিষয় কারো কাছে প্রকাশ করেন না (আল জ্বিনঃ ২৬)

  • আল্লাহতায়ালা আরও বলেনঃ“তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে।  গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানে না”।(সূরাআনআম -৬:৫৯)

সুতরাং عالم الغيب বা অদৃশ্যের জ্ঞানী একমাত্র আল্লাহই, এটা তাঁর একক ক্ষমতা। এখন কেউ যদি দাবী করে সে গায়েব জানে কিংবা দাবী না করেও যদি কেউ গায়েবের কথা বলে সে নিশ্চিতভাবে ত্বাগুতে পরিণত হবে।

  • বর্তমানেএকশ্রেনীর গনক টিয়াপাখি বা এই জাতীয় জিনিস দিয়ে হাত গণনা করে এবং ভবিষ্যতে তার কি বিপদ বা শুভ সংবাদআছে এ ব্যাপারে সংবাদ প্রদান করে। কোন কোন গনক হাতের রেখা কিংবা রাশিচক্রের মাধ্যমে মানুষের হায়াত-মউত,সফলতা-ব্যর্থতা এ জাতীয় গায়েব বা অদৃশ্যের সংবাদ প্রদান করে।
    • একশ্রেনীর পীরেরাও এরূপ গায়েবের ব্যাপারে কথা বলে।তাদের কাজে আসা লোকদের অতীত জীবনের সংবাদকিংবা পীরের কাছে আসার আগে বাড়িতে কি পরিকল্পনা করেছিল,অপরিচিত লোকের নাম ঠিকানাবয়স ইত্যাদি বলে দেয়ার মাধ্যমে লোকদের চমৎকৃত করে দেয়। মানুষ তাদের ব্যাপারে এরূপধারণা করে যে তারা গায়েব জানেযা একমাত্র আল্লাহরএকমাত্র জন্যই প্রযোজ্য।  কারণে তারা তাগুতে পরিণত হচ্ছে

 

কেউ কে বলে আমরা গনকের কাছে যাই এজন্য যে, তাদের প্রদানকৃত সংবাদ সত্য হয় এবং এতে মরা উপকৃত হই। তাদের জবাবে বলছি-
এটা সত্য যে তাদের প্রদানকৃত সংবাদের কিছু কিছু সত্য হয় বটে। তারা এরূপ সংবাদ প্রদান করে দুষ্ট জিনদের সাহায্যে। গনকরা জিনদের সাথে বেশীর ভাগ সময়ই নিষিদ্ধ বা ধর্মদ্রোহী কাজের মাধ্যমেই যোগাযোগ করে। এভাবে তলব করে আনা দুষ্ট জিন তাদের সঙ্গীদের গুনাহ করতে এবং স্রষ্টাকে অবিশ্বাস করতে সাহায্য করতে পারে। তাদের লক্ষ্য হল স্রষ্টা ছাড়া অথবা স্রষ্টার পাশাপাশি অন্যকে উপাসনা করার মত গুরুতর গুনাহ করতে যত বেশী জনকে পারা যায় তত জনকে আকৃষ্ট করে। একবার গণকদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং চুক্তি হয়ে গেলেজিন ভবিষ্যতের সামান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা জানাতে পারে। রাসুল (সঃ) বর্ণনা দিয়েছেন জিনরা কিভাবে ভবিষ্যত সম্বন্ধে সংবাদ সংগ্রহ করে। তিনি বর্ণনা দেন যেজিনরা প্রথম আসমানের উপর অংশ পর্যন্ত ভ্রমণ করত এবং ভবিষ্যতের উপর কিছু তথ্যাদি যা ফিরিশতারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করত তা শুনতে সক্ষম হত। তারপর তারা পৃথিবীতে ফিরে এসে তাদের পরিচিতি মানুষের কাছে ঐ তথ্যগুলি পরিবেশন করত। (বুখারী এবং মুসলিম কর্তৃক সংগৃহীত)

 

 

  • মুহাম্মদ (সঃ) এর নবুওত প্রাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত এই ধরণের বহু ঘটনা সংঘটিত হত। এবং গণকরাতাদের তথ্য প্রদানেনির্ভূলছিল। তারা রাজকীয় আদালতে আসন লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল এবং প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জনকরেছিল। এমনকি পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে তাদের পুজাও করা হত।

 

 

রাসুল (সঃ) কর্তৃক ধর্ম প্রচার শুরু করার পর হতে অবস্থার পরিবর্তন হয়। আল্লাহ ফিরিশতাদের দিয়ে আসমানের নীচের এলাকা সতর্কতার সঙ্গে পাহাড়া দেবার ব্যবস্থা করলেন। তারপর হতে বেশীরভাগ জিনদের উল্কা এবং ধাবমান নক্ষত্ররাজি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হত। আল্লাহ এই বিস্ময়কর ঘটনা কোরআনের ভাষায় বর্ণনা করেছেনঃ আমরা আকাশ পর্যবেক্ষণ করছি, অতঃপর দেখতে পেয়েছি যে, কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিন্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ। আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে সংবাদ শ্রবণার্থে বসতাম। এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে সে জলন্ত উল্কাপিন্ড ওঁৎ পেতে থাকতে দেখে।(সুরা আল-জ্বিন ৭২:৮-৯)

আল্লাহ আরও বলেনঃ প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান হইতে আমি উহাকে রক্ষা করিয়া থাকিআর কেহ চুরি করিয়া সংবাদ শুনিতে চাহিলে উহার পশ্চাদ্ধাবন করে প্রদীপ্ত শিখা। (সূরা আল হিজর ১৫:১৭-১৮)

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনযখন রাসুল (সাঃ) এবং তাঁর একদল সাহাবা উকাধ বাজারের দিকে রওয়ানা হলেনতখন শয়তানদের ঐশী খবরাখবর শোনায় বাধা প্রদান করা হল। উল্কাপিন্ড তাদের উপর ছেড়ে দেয়া হল। ফলে তারা তাদের লোকদের কাছে ফিরে এল। যখন তাদের লোকরা জিজ্ঞাসা করল কি হয়েছিলতারা তাদের জানালো। কেউ কেউ পরামর্শ দিল যে নিশ্চয়ই কিছু ঘটেছেকাজেই তারা কারণ খুজে বের করার জন্য পৃথিবীর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। তাদের কয়েকজন রাসুল (সঃ) এবং তাঁর সাহাবাগণের সালাত রত অবস্থা দেখতে পেল এবং তারা তাদের কোরআন পড়া শুনলো। তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করল যে নিশ্চয় এটাই তাদের শোনায় বাধা প্রদান করেছিল। যখন তারা তাদের লোকদের মধ্যে ফিরে গেল তখন তারা বললআমরা তো এক বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করিয়াছি। যাহা সঠিক পথ নির্দেশ করেফলে আমরা ইহাতে বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছি। আমরা কখনও আমাদিগের প্রতিপালকের কোন শরীক স্থির করিব না। (সুরা আল জিন ৭২:১-২) (বুখারীমুসলিম) এইভাবে রাসূল (সঃ) কর্তৃক ধর্ম প্রচারের পূর্বে জীনরা যেভাবে সহজে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে খবরাখবর সংগ্রহ করত তা আর আর পারেনি। ঐ কারণে তারা এখন তাদের খবরাখবরের সঙ্গে অনেক মিথ্যা মিশ্রিত করে। রাসুল (সঃ) বলেনজাদুকর অথবা গনকের মুখে না পৌছান পর্যন্ত তারা (জিনরা) খবরাখবর নীচে ফেরত পাঠাতে থাকবে। কখনও কখনও তারা খবর চালান করার আগেই একটি উল্কা পিন্ড তাদের আঘাত প্রাপ্ত করার পূর্বে পাঠাতে পারলে এর সঙ্গে তারা একশটা মিথ্যা যোগ করবে। (বুখারীমুসলিম)

 

 

 

  • আয়েশারাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা দেন যে তিনি আল্লাহররাসূলের (সঃ) কাছে গণকদের সম্বন্ধে জিজ্ঞসা করলে তিনি উত্তর দেন যে ওরা কিছু না। আয়শা (রাঃ) তখন উল্লেখকরলেন যে গণকরা কখনও কখনও যা বলে সত্য হয়। রাসুল (সঃ) বলেন ‘‘ওতে সত্যতার কিছু অংশ যা জিনরা চুরি করে এবং তার বন্ধুর কাছে বলে কিন্তু সে এর সাথে একশটি মিথ্যা যোগ করে। 

 

 

জিনরা তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী মানুষকে আপতঃ ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে অবহিত করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ,যখন কেউ একজন গণকের কাছে আসে সে আসার আগে কি কি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল তা গণকের জিন আগত লোকটির ক্বারিনের (প্রত্যেক মানুষের সঙ্গে নিয়োজিত জিন) কাছ থেকে জিন জেনে নেয়। সুতরাং গণক লোকটিকে বলতে সক্ষম হয় যে সে এটা করবে অথবা অমুক অমুক জায়গায় যাবে। এই প্রক্রিয়ায় একজন সতিকার গণক অপরিচিত লোকের অতীত পরির্পূণ ভাবে জানতে সক্ষম হয়। সে একজন অচেনা ব্যক্তির পিতামাতার নামকোথায জন্মগ্রহণ করেছিল এবং তার ছেলে বেলার আচরণ ইত্যাদি সম্বন্ধে বলেতে সক্ষম হয়। অতীত সম্বন্ধে পরিপূর্ণ বর্ণনা দেবার ক্ষমতা জিন এর সঙ্গে মুহুর্তের মধ্যে বহু দুরত্ব অতিক্রম করতে এবং গোপন বিষয় হারানো জিনিসঅদেখা ঘটনা বলি সম্বন্ধে বহু তথ্যাদি সংগ্রহ করতেও সক্ষম। কোরআনে বর্ণিত পয়গম্বর সুলায়মান এবং সিবার বাণী বিলকিসের গল্পে মধ্যে এই ক্ষমতার সত্যতা পাওয়া যায়। সুলায়মান (আঃ) একটি জিনকে রাণীর দেশ থেকে তার সিংহাসন নিয়ে আসতে বললেন। এক শক্তিশালী জিন বললআপনি আপনার স্থান হইতে উঠিবার পূর্বে আমি উহা আনিয়া দিব এবং এই ব্যাপারে আমি অবশ্যই ক্ষমতাবান বিশ্বস্ত। (সূরা আন নামল ২৭:৩৯)