ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষের মাঝে পার্থক্য এবং তথাকথিত নারী-পুরুষ সমাধিকারের নির্মম পরিণতি

◈ ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষের মাঝে পার্থক্য এবং তথাকথিত নারী-পুরুষ সমাধিকারের নির্মম পরিণতি:

আল্লাহ তাআলা নারী ও পুরুষকে স্বভাব, প্রকৃতি, দৈহিক ও মানসিক গঠনের দিক দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন করে সৃষ্টি করেছেন। যার কারণে তাদের কর্ম ও দায়িত্বের মাঝে দিয়েছেন কিছু ভিন্নতা। ইবাদত-বন্দেগী ও ইসলামের বিধিবিধানের ক্ষেত্রে যেমন তাদের মাঝে কিছু পার্থক্য করা হয়েছে তেমনি বৈষয়িক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও দেয়া হয়েছে কিছু পার্থক্য।

একজন পুরুষ পরিবারের প্রধান পরিচালক হলেও তার মূল দায়িত্ব হল, বহির্জগত নিয়ন্ত্রণ করা আর নারীর মূল দায়িত্ব পরিবারের অভ্যন্তরীণ দিক তথা ঘর নিয়ন্ত্রণ করা।

➤ একজন পুরুষ তার নিজের এবং তার স্ত্রী-সন্তানদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করার জন্য ব্যবসা বা চাকুরীর উদ্দেশ্যে এক জেলা থেকে অন্য জেলা, এক শহর থেকে অন্য শহর এবং এক দেশ থেকে অন্য শহর ছুটে বেড়াবে। রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, ঠাণ্ডা, গরম ইত্যাদি মাথায় নিয়ে চাষাবাদ করবে, ভারী বস্তু বহন করবে, বন-বাদাড়ে গিয়ে কাঠ কাটবে, ট্রেন, বাস, ট্রাক, ট্রাক্টর, ক্রেন ইত্যাদি পরিচালনা করবে, উঁচু উঁচু বিল্ডিং নির্মাণ করবে। প্রয়োজন হলে শত্রুর মোকাবেলায় অস্ত্র ধারণ করবে এবং যুদ্ধের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়বে। অনুরূপভাবে তারা দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করবে ও সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে শত্রুর কবল থেকে দেশ রক্ষা করবে।

➤ অপর দিকে একজন নারীর প্রধান কাজ, পরিবারের অভ্যন্তরীণ দিক দেখাশোনা করা, সম্পদ রক্ষা, সন্তান ধারণ ও প্রতিপালন করা। এগুলো কখনোই পুরুষ দ্বারা সম্ভব নয়।

➤ স্বামী সর্বোচ্চ উত্তম পন্থায় তার স্ত্রী-সন্তানদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করবে, তাদের সকল ব্যয়ভার তথা খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে আর স্ত্রী স্বামীর আনুগত্য ও সেবার মাধ্যমে পরিবারের মধ্যে শান্তি ও সুখের নীড় রচনা করবে।

এভাবে স্বামী-স্ত্রীর সমন্বিত প্রচেষ্টায় আল্লাহর দয়ায় একটি সুন্দর দাম্পত্য জীবন গড়ে উঠবে। এটি আল্লাহর জমিন আবাদ হওয়ার একমাত্র স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বস্তুত: নারী-পুরুষের এ বিভাজন নিতান্ত স্বভাবজাত ও মানব প্রকৃতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এখানেই নিহিত রয়েছে মানবজাতির অবারিত কল্যাণ।

◉ পক্ষান্তরে যখন ‘নারী অধিকার’ বা ‘বৈষম্য দূরীকরণ’ এর নামে আল্লাহর নেয়া বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নারীদেরকে তাদের দায়িত্ব থেকে দূরে সরিয়ে পুরুষদের কাতারে নামিয়ে দেয়া হল তখনই সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। পরিবারে জ্বলে উঠল অশান্তির দাবানল। রাস্তাঘাট, অফিস, আদালত, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, প্রশাসন, পুলিশ, আর্মি, মিডিয়া, সাংস্কৃতিক অঙ্গন ইত্যাদি সর্বত্র নারীরা পুরুষদের দ্বারা নিগৃত হতে শুরু করল। ছড়িয়ে পড়ল ভয়াবহ ইভ টিজিং ও নারী ধর্ষণ। নারীকে পুরুষরা তাদের মনোরঞ্জন ও ভোগ বিলাসের বস্তুতে পরিণত করল।

◉ নির্মম বাস্তবতা হল, একজন নারীকে চাকুরী ও অফিসের দায়িত্ব পালন শেষে বাড়িতে ফিরে সাংসারিক প্রায় সব কাজ করতে হয়। স্বামীর সেবা করতে হয়। সন্তান ধারণ, সন্তানকে দুগ্ধ দান ও প্রতিপালন করতে হয়। এভাবে তথাকথিত ‘নারী উন্নয়ন’ ও ‘প্রগতি’ এর নামে তাদেরকে ফেলে দেয়া হয় মহা বিপদের মধ্যে। উভয় দিক শামাল দিতে গিয়ে সে আজ ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। এমন এক অসহায় পরিস্থিতির মধ্যেও তাকে মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলতে হয়, ভালো আছি।

◉ নারীদের প্রতি মাসে নির্দিষ্ট কতিপয় দিনে ঋতুস্রাব হয়-যে দিনগুলো স্বভাবতই তাদের জন্য খুব অস্বস্তিকর। গর্ভে সন্তান আসার পর বছরের বেশিরভাগ সময় তাদেরকে সীমাহীন কষ্ট ও অবর্ণনীয় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তারপর সন্তান প্রসবের এক বেদনা ক্লিষ্ট ধাপ অতিক্রম করে দীর্ঘ দিন তার রক্ত প্রবাহিত হয়। তারপর সন্তানকে দুগ্ধদান এবং পরিচর্যায় কী পরিমাণ সময় ও শ্রম দিতে হয়, কত নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় সে বিষয়ে প্রতিটি ভুক্তভোগী মাত্রই জানে।

◉ এ সকল দিক বিবেচনায় ইসলাম নারীকে ঋতুস্রাব কালীন নামায পড়া থেকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দিয়েছে, রোযাকে সাময়িক স্থগিত রাখার নির্দেশ প্রদান করেছে এবং স্ত্রী মিলনে দিয়েছে নিষেধাজ্ঞা। অনুরূপভাবে গর্ভ ও দুগ্ধদানের সময়কালে শারীরিক সক্ষমতা বিবেচনা পূর্বক রোযা রাখা বা না রাখার সুযোগ দিয়েছে। নারীদের দায়িত্ব পালন এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক দিক বিবেচনায় তাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাতে সালাত, জুমার সালাত, ইমামতি, বিচারকার্য ইত্যাদি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছে। অনুরূপভাবে তাদের জন্য শত্রু মোকাবেলায় জিহাদ করা ও অস্ত্র ধারণকে বাধ্যতা মূলক করা হয় নি। ঠিক তদ্রূপ মুসলিমদের বৃহত্তর ইমামত তথা রাষ্ট্র পরিচালনারও অনুমতি দেয়া হয় নি।

কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত: বর্তমানে অধিকাংশ মুসলিম আল্লাহর দ্বীন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না রাখার কারণে এবং শয়তানের প্ররোচনায় কাফেরদের অনুসরণে তথাকথিত ‘নারী স্বাধীনতা’, ‘সমাধিকার’, ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ ইত্যাদি রঙ্গিন ও চটকদার শ্লোগানে সর্বত্র নারীকে টেনে বের করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত। যার ফলশ্রুতিতে অনেক নারী তাদের নারীত্ব হারিয়ে পুরুষ সেজে বসেছে যা আল্লাহর বিধানের লঙ্ঘন, নারীত্বের অপমান এবং মানব সভ্যতার জন্য মারাত্মক হুমকি।

সুতরাং সুন্দর ও শান্তিময় পরিবার গঠনের মধ্য দিয়ে একটি সুন্দর ও শান্তিময় সমাজ গড়তে হলে এবং মানব সভ্যতাকে টিকাতে হলে অবশ্যই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে তথাকথিত নারীবাদী ও পশ্চাত্যের অন্ধ অনুসারী লেজকাটা শৃগালদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন হবে এবং নারীদেরকে ঘরে ফিরে নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। অন্যথায় সামাজিক বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধির পাশাপাশি নারীদের সম্মানহানী ও নিগৃহের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতেই থাকবে। আইন করে তা রোধ করা সম্ভব নয়। আল্লাহ হেফাজত কারী।

পরিশেষে দুআ করি, আল্লাহ তাআলা পথভোলা মুসলিমদেরকে ইসলামের পথে ফিরিয়ে আনুন এবং তাদেরকে সব ধরণের ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব।।