কাউকে সঠিক পথের দাওয়াত দিলে সে যদি তা প্রত্যাখ্যান করে তাহলে আমাদের কী করণীয়

প্রশ্ন: আমাদের সমাজে অনেক শিরক-বিদআত আর কুরআন ও সহীহ হাদিস বিরোধী অনেক কিছুর প্রচলন আছে। কিন্তু মানুষকে যদি সহিহটা বলা হয় তাহলে তারা তর্ক করতে আসে। তারা সঠিকটা মানতে চায় না।এই অবস্থায় আমাদের করণীয় কি?

উত্তর:
আমাদের মনে রাখা জরুরি যে, কেউ যদি সত্যকে গ্রহণ না করতে চায় তাহলে তার পেছনে অবশ্যই কিছু কারণ থাকে। সে কারণগুলো চিহ্নিত করে সেভাবে কাজ করতে হবে।

হেদায়েতের পথে না আসার কতিপয় কারণ এবং সে ক্ষেত্রে করণীয়:

❑ ১. সঠিক বিষয়ে যথার্থ জ্ঞান না থাকা। মানুষ জ্ঞান না থাকার কারণে অজ্ঞতা বশত: সত্যের বিরোধিতা করে। তাই তাকে উক্ত বিষয়ে জ্ঞান দান করতে হবে, দাওয়াত দিতে হবে, বুঝাতে হবে। তার মনের বদ্ধমূল সংশয়গুলো দূর করতে হবে। এ জন্য জ্ঞান এবং পরম ধৈর্য-সহনশীলতার প্রয়োজন। প্রয়োজন দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টা।

❑ ২. কিছু মানুষ সত্য জানার পরও তা গ্রহণ করে না অহংকার অথবা বাপ-দাদা থেকে প্রাপ্ত দীর্ঘ দিনের লালিত বিশ্বাস ও আচরণে অভ্যস্ত থাকার কারণে। তাই তারা হঠাৎ করে পরিবর্তন মেনে নিতে পারে না। তর্ক করে নিজের লালিত বিশ্বাসকে ধরে থাকতে চায়। এ জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ মেয়াদি প্রচেষ্টা এবং দলীল-প্রমান সমৃদ্ধ ও যুক্তি সহকারে সুন্দর পদ্ধতিতে বিতর্ক করা।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ ۖ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
“আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন হেকমত ও উপদেশপূর্ণ নম্র কথার মাধ্যমে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন সবচেয়ে উত্তম পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে।” (সূরা নাহল: ১২৫)

❑ ৩. আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য উপলব্ধি করার তাওফিক না পাওয়া।
সঠিক পথের সন্ধান পাওয়া নি:সন্দেহে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওফিক। তিনি যদি কারো হৃদয়ের দরজা হেদায়েতের জন্য উন্মুক্ত করে দেন তাহলে সহজেই তাতে হেদায়েতের আলো পৌঁছবে। পক্ষান্তরে যদি তার অন্তর তালাবন্ধ করে রাখেন তাহলে কোনক্রমেই সেখানে হেদায়েতের আলো পৌঁছুবে না-যতই আমরা চেষ্টা করি না কেন। আল্লাহর রাসূল সা. বহু চেষ্টা করেও তার চাচা আবু তালেবকে ইসলাম কবুল করাতে সক্ষম হন নি। তাই তো আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَـٰكِنَّ اللَّـهَ يَهْدِي مَن يَشَاءُ ۚ
“আপনি যাকে পছন্দ করেন, তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না, তবে আল্লাহ তা’আলাই যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন।” সূরা ক্বাসাস: ৫৬)
তাই আমাদের কর্তব্য হবে, সঠিক পদ্ধতিতে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছানোর পাশাপাশি তার হেদায়াতের জন্য মহান রবের নিকট দুআ করা এবং ফলাফলের জন্য আল্লাহর নিকট প্রত্যাশা করা। কারণ হেদায়েত দেয়ার ক্ষমতা আমাদের হাতে নেই। এর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে একমাত্র মহান আল্লাহর হাতে।

আমরা যদি দাওয়াত দেই তাহলে আমরা এ জন্য সওয়াব অর্জন করব এবং আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব থেকে মুক্ত হবো। কিন্তু সে গ্রহণ না করার কারণে আমরা এর জন্য দায়ী হব না। বরং সত্য প্রত্যাখ্যান করার কারণে সে তার রবের কাঠগড়ায় জবাবদাহী করবে।

তাই আসুন, সুন্দর চরিত্র, ভদ্র ব্যবহার, নম্র ভাষা এবং পরম ধৈর্য ও সহনশীলতা সহকারে মানুষর নিকট দ্বীনে হক্কের দাওয়াত পৌঁছিয়ে দেই। এ দাওয়াতের ব্যাপকতা যত বাড়বে ততই মানুষ লাভবান হবে এবং মানুষ ততই সঠিক পথের সন্ধান পাবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু দাওয়াত পাওয়ার পরও যদি তারা নিজেদের আত্মম্ভরিতা, অবহেলা, অহংকার ইত্যাদি কারণে সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তা তাদের জন্যই ধ্বংসাত্মক হবে। দাওয়াত দাতার কোন ক্ষতি হবে না ইনশাআল্লাহ।
নিশ্চয় হেদয়াতের চাবিকাঠি একমাত্র আল্লাহর হাতেই রয়েছে।
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।।