দাজ্জালের গোলাম কারা? তাদের লেবাস কী হবে

বহু দিন ধরেই ফেসবুকে একটা পোস্ট নজরে পড়ে, যার জবাবও দিয়েছিলাম আরবীতে। কিন্তু সঊদী আরব তথা সালাফীদের অর্বাচীন শত্রুরা একাধারে নির্লজ্জভাবে এখনো প্রচার ও শেয়ার ক’রে যাচ্ছে

তারা হাদীস থেকে প্রমাণিত করেছে যে, সঊদী লোক অথবা তাদের মতো যারা মাথায় রুমাল ব্যবহার করে, তারাই হল দাজ্জালের গোলাম!
সউদী রুমাল দুই ধরণের। যেটা ডোরাকাটা লাল, সেটাকে ‘শিমাগ’ বলে এবং যেটা সাদা, সেটাকে ‘গুত্বরাহ’ বলে। তারা ছবিসহ লাল শিমাগের পোস্ট দিয়ে বিশিষ্ট আলেমদের ছবি দিয়ে ইঙ্গিত করেছে যে, এই মেয়ে লোকের মতো ওড়না-পরা লোকেরাই দাজ্জালের গোলাম। কারণ তারা তাদের বাড়া ভাত কেড়ে খাচ্ছে তাই।
মিশকাত থেকে সহীহ ছেড়ে যয়ীফ হাদীসটি উল্লেখ করেছে।
عن أبي سعيد الخدري قال : قال رسول الله ﷺ : ((يتبع الدجال من أمتي سبعون ألفا عليهم السيجان))। رواه في شرح السنة।
অর্থাৎ, আবূ সাঈদ (রায্বিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “আমার উম্মতের মধ্য হতে সত্তর হাজার লোক দাজ্জালের অনুসরণ করবে, যাদের উপর ‘সীজান’ থাকবে।” (মিশকাত ৫৪৯০নং)
ওরা অনুবাদ করেছে, “আমার উম্মত এর মধ্য থেকে ৭০ হাজার মানুষ যারা মাথায় চাদরের মতো ওড়না ব্যবহার করবে, তারা দাজ্জালের গোলামী কবুল করে নিবে।

● প্রথমতঃ উক্ত হাদীসটি সহীহ নয়।
● দ্বিতীয়তঃ ‘সীজান’-এর অনুবাদও সহীহ নয়। ‘মাথায় চাদরের মতো ওড়না’—এটা তাদের কল্পিত অনুবাদ।
যেটা সহীহ হাদীসে আছে,
عن أنس عن رسول الله ﷺ قال : ” يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ ণ্ড। رواه مسلم
অর্থাৎ, আনাস (রায্বিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “আসপাহানের ইয়াহুদীদের মধ্য হতে সত্তর হাজার লোক দাজ্জালের অনুসরণ করবে, যাদের উপর ‘ত্বাইলাসান’ থাকবে।” (মুসলিম মিশকাত ৫৪৯০নং

◉ চলুন দেখে নিই, সেই লেবাসটা আসলে কী

‘সীজান’ মানে হল, সবুজ ত্বাইলাসান। এর একবচন হল ‘সাজ’। (মাশারিক্বুল আনওয়ার আলা স্বিহাহিল আ-ষার ১/৩২৪, বাগবীর শারহুস সুন্নাহ ১৫/৬৩, জাওহারীর স্বিহাহ ২/৩৪৬, আন-নিহায়াহ ফী গারীবিল হাদীস ২/১০৫১)
আর ‘ত্বাইলাসান’টা কী? সেটা হল ইয়াহুদীদের ব্যবহার্য চাদর বা শাল, যার রঙ ছিল হলুদ। (হাশিয়াতুস সিন্দী আলা সহীহিল বুখারী ৩/১৯, ফাতহুল বারী ১২/২৮)
ক্বাযী ইয়ায্ব বলেছেন,
الطيلسان شبه الأردية يوضع على الكتفين والظهر، قال القابسي أرى كانت صفرا।
‘ত্বাইলাসান হল চাদরের মতো, যা দুই কাঁধ ও পিঠের উপর রাখা হয়।’ ক্বাবেসী বলেছেন, ‘আমি মনে করি, তা ছিল হলুদ রঙের।’ (মাশারিক্বুল আনওয়ার আলা স্বিহাহিল আ-ষার ১/৩২

বুঝা গেল যে,
● ১। যে চাদর ইয়াহুদীরা ব্যবহার করত, তার রঙ ছিল সবুজ অথবা হলুদ। লাল নয়; যেমনটি বিদাতী পোস্ট-ওয়ালা বানিয়ে নিয়েছে।
● । তা কাঁধের উপর পরা হতো। (মু’জামুল ওয়াসীত্ব ২৫৬১) মাথার উপর নয়, যেমন সউদীরা পরেন এবং যেটা সঊদী-দুশমনরা কল্পনা করেছে।
● ৩। তা ‘মেয়ে লোকের মতো ওড়না’ নয়। যা তারা মাথায় ব্যবহার করে।
তাহলে দাজ্জালের গোলামদের সে লেবাস নয়, যা ‘লামাজহাবী ওয়াহাবীরা’ (!) তাদের মাথায় ব্যবহার ক’রে থাকে। যেহেতু তার রঙ লাল এবং মেয়েদের মতো পেঁচিয়ে না রেখে সাধারণতঃ দুই দিক ঝুলিয়ে রাখে।
পরন্তু ‘ত্বাইলাসান’ পরা হারাম বা মাকরুহও নয়। আনাস (রায্বিয়াল্লাহু আনহু) আপত্তি করেছিলেন তার রঙের জন্য। নচেৎ একাধিক সলফ তা ব্যবহার করেছেন বলে প্রমাণিত আছে

মুস্বান্নাফ ইবনে আবী শাইবাহর কিতাবুল লিবাসে দেখতে পারেন। ইবরাহীম নাখয়ী (৪৭৩৯নং), আসওয়াদ বিন হিলাল (৪৭৪১নং), আব্দুল্লাহ বিন য়্যাযীদ (৪৭৪২নং), সাঈদ বিন মুসাইয়্যিব (৪৭৪৩নং), সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মুগাফফাল (রায্বিয়াল্লাহু আনহু) (৪৭৪৬নং) ত্বাইলাসান ব্যবহার করেছেন।
শুধু তাই নয়, তাঁদের অনেকে দামী ত্বাইলাসান ব্যবহার করতেন। (দেখুনঃ সিলসিলাহ যয়ীফাহ, আল্লামা আলবানী ১৪/২৫

◉ তাহলে তাঁদেরকেও কি ‘দাজ্জালের গোলাম’ বলবেন

দুশমন হলেও একটু চক্ষুলজ্জা রেখে কথা বলতে হয়। তা না হলে ন্যায়পরায়ণ জ্ঞানী মানুষদের কাছে হাসির পাত্র হতে হয়।
ফেসবুকে যার যা ইচ্ছা বলে। কেউ তো মুখে হাত দিতে পারে না। হাঁড়ির মুখের ঢাকনা পাওয়া যায়, কিন্তু তাদের মুখে ঢাকনা থাকে না

সংগ্রহেঃ আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী।