যাকাত ফরয হওয়ার শর্তাবলী

প্রশ্নঃ যাকাত ফরয হওয়ার শর্তাবলী কি কি?

উত্তরঃ
====
যাকাত ফরয হওয়ার শর্তাবলী নিম্নরূপঃ
 ইসলাম।
 স্বাধীন।
 নেসাবের মালিক হওয়া ও তা স্থিতিশীল থাকা।
 বছর পূর্ণ হওয়া।

■ইসলামঃ
কাফেরের উপর যাকাত ফরয নয়। যাকাতের নামে সে প্রদান করলেও আল্লাহ্‌ তা কবূল করবেন না। আল্লাহ্‌ বলেনঃ
وَمَا مَنَعَهُمْ أَنْ تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَاتُهُمْ إِلَّا أَنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ وَبِرَسُولِهِ وَلَا يَأْتُونَ الصَّلَاةَ إِلَّا وَهُمْ كُسَالَى وَلَا يُنفِقُونَ إِلَّا وَهُمْ كَارِهُونَ
-তাদের সম্পদ ব্যয় শুধু মাত্র এই কারণে গ্রহণ করা হবে না যে, তারা আল্লাহ্‌ ও তার রাসূলের সাথে কুফরী করেছে। অলসভঙ্গিতে ছাড়া তারা নামাযে আসে না। এবং মনের অসন’ষ্টি নিয়ে খরচ করে।[সূরা তওবাঃ ৫৪]

কাফেরের উপর যাকাত ফরয নয় এবং আদায় করলেও গ্রহণ করা হবে না একথার অর্থ এটা নয় যে, পরকালেও তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে; বরং তাকে এজন্য শাস্তি দেয়া হবে। আল্লাহ্‌ বলেন,
كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ رَهِينَةٌ، إِلَّا أَصْحَابَ الْيَمِينِ، فِي جَنَّاتٍ يَتَسَاءَلُونَ، عَنْ الْمُجْرِمِينَ، مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ، قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ، وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِينَ، وَكُنَّا نَخُوضُ مَعَ الْخَائِضِينَ، وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّينِ، حَتَّى أَتَانَا الْيَقِينُ
-প্রত্যেক ব্যক্তি তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী; কিন্তু ডান দিকস্তরা। তারা থাকবে জান্নাতে এবং পরস্পরে জিজ্ঞাসাবাদ করবে অপরাধীদের সম্পর্কে। বলবে, তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে প্রবেশ করিয়েছে? তারা বলবে, আমরা নামায পড়তাম না, অভাবগ্রস্তকে আহার্য দিতাম না। আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম। এবং আমরা প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করতাম। এমনকি আমাদের মৃত্যু এসে গেছে। [সূরা মুদ্দাস্‌সিরঃ ৩৮-৪৭]
এথেকে বুঝা যায় ইসলামের বিধি-বিধান না মেনে চলার কারণে কাফেরদেরকে শাস্তি দেয়া হবে।

■স্বাধীনতাঃ
ক্রীতদাসের কোন সম্পদ নেই। কোন সম্পদ থাকলেও তা তার মালিকের সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে। কেননা নবী ﷺ বলেন, مَنِ ابْتَاعَ عَبْدًا فَمَالُهُ لِلَّذِي بَاعَهُ إِلَّا أَنْ يَشْتَرِطَ الْمُبْتَاع
-সম্পদের অধিকারী কোন ক্রীতদাস যদি কেউ বিক্রয় করে, তবে উক্ত সম্পদের মালিকানা বিক্রেতার থাকবে। কিন্তু যদি ক্রেতা উক্ত সম্পদের শর্তারোপ করে থাকে তবে ভিন্ন কথা।

■নেসাবের মালিক হওয়াঃ
অর্থাৎ তার কাছে এমন পরিমাণ সম্পদ থাকবে, শরীয়ত যা নেসাব হিসেবে নির্ধারণ করেছে। সম্পদের প্রকারভেদ অনুযায়ী এর পরিমাণ বিভিন্নরূপ হয়ে থাকে। অতএব মানুষের কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকলে বা নেসাবের কম সম্পদ থাকলে তাতে যাকাত দিতে হবে না। কেননা তার সম্পদ কম। আর অল্প সম্পদ দ্বারা অন্যের কল্যাণ করা সম্ভব নয়।

চতুস্পদ জন্তুর নেসাবে শুরু এবং শেষ সংখ্যার খেয়াল রাখতে হবে। কিন্তু অন্যান্য সম্পদে শুধু প্রথমে কত ছিল তার হিসাব ধর্তব্য। পরে যা অতিরিক্ত হবে তার হিসাব করে যাকাত দিতে হবে।

■বছর অতিক্রান্ত হওয়াঃ
কেননা বছর পূর্ণ না হওয়া সত্বেও যাকাতের আবশ্যকতা সম্পদশালীর প্রতি কঠোরতা করা হয়। বছর পূর্তি হওয়ার পরও যাকাত বের না করলে যাকাতের হকদারদের প্রতি অবিচার করা হয়; তাদের ক্ষতি করা হয়। একারণে প্রজ্ঞাপূর্ণ শরীয়ত এর জন্য একটি সীমারেখা নির্ধারণ করেছে এবং এর মধ্যে যাকাতের আবশ্যকতা নির্ধারণ করেছে। আর তা হচ্ছে বছরপূর্তী। অতএব এর মধ্যে সম্পদশালী ও যাকাতের হকদারদের মধ্যে একটি সামঞ্জস্যতা বিধান করা হয়েছে।

এ কারণে বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে কোন মানুষ যদি মৃত্যু বরণ করে বা তার সম্পদ বিনষ্ট হয়ে যায়, তবে যাকাত রহিত হয়ে যাবে। অবশ্য তিনটি জিনিস এ বিধানের ব্যতিক্রমঃ
১। ব্যবসার লভ্যাংশ
২। চতুস্পদ জন্তুর বাচ্চা
৩। উশর।

►►ব্যবসার লভ্যাংশে ব্যবসার মূল সম্পদের সাথে যোগ করে যাকাত দিতে হবে। আর চতুস্পদ জন্তুর ভুমিষ্ট বাচ্চার যাকাত তার মায়ের সাথে মিলিত করে দিতে হবে। আর উশর অর্থাৎ যমীনে উৎপাদিত ফসল ঘরে উঠালেই যাকাত দিতে হবে।

_________________________
লেখক/সংকলকঃ শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)
গ্রন্থঃ ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম
বিভাগঃ যাকাত
প্রশ্ন নং ৩৫৪