মুসলিম তরুণ যুবকদের জন্য অনেক বড় একটি সমস্যা। যারা এই ব্যথিতে আক্রান্ত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যেন তাদেরকে খুব দ্রুত এই অন্ধকার জগত থেকে আলোর পথে নিয়ে আসেন।
পর্ণ অ্যাডিকশান এবং এর পরবর্তী একাকি হারাম কাজটি মারাত্মক একটি মানসিক রোগ। এটি ধীরে ধীরে একজন মানুষের আত্মাকে ধ্বংস করে ফেলে। কেউ জাহেলি জীবন ছেড়ে দ্বীনের পথে চলা শুরু করলেও এই রোগ থেকে বাঁচতে পারে না, কেননা এই রোগকে সে তার জীবনের অংশ বানিয়ে নিয়েছে। তিন বেলা খাওয়ার মতোই এটি তার জীবনের অংশ হয়ে পড়ে, যদিও সে ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করুক না কেন, নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করুক না। আল্লাহ্র রাস্তায় জীবন দেয়ার চেয়ে চোখের হিফাজাত করা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে, নিজের নফসকে আল্লাহ্র হুকুমের পথে চালানো তার কাছে হিমালয় পর্বতকে সরানোর মতোই কঠিন মনে হয়।
অনেকেই মনে করেন, বিয়ে করলে এই রোগ বুঝি দূর হয়ে যাবে। আপনি ভুলের মাঝে আছেন ভাই। অবশ্যই বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাধান। তবে তাকওয়া (আল্লাহভীতি) হাসিল করতে না পারলে এই রোগ বিয়ে করলেও যাবে না। বিয়ের পরও সে পর্ণ দেখবে। এই রোগের একমাত্র ওষুধ হল আজকে থেকেই দৃঢ় নিয়াত করতে হবে যেন চোখের খিয়ানাত না হয়। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় মাসনূন তথা সুন্নাহসম্মত দুয়াগুলো পড়ে বের হই আর আল্লাহ্র সাহায্য কামনা করি যেন চোখ হারাম থেকে বিরত থাকে। খিয়ানত হয়ে গেলেও যেন সাথে সাথে তাওবা করে নেই। তাওবা করতে দেরি করাও শয়তানের আরেক ধোঁকা এবং গুনাহের কাজ। দিনের পর দিন আন্তরিকভাবে তাওবা করে যেতে থাকলে এবং আল্লাহ্ সুবহানু তায়ালার কাছে সাহায্য চাইতে থাকলে অবশ্যই একদিন না একদিন আসমানের দরজা খুলে যাবে, মাকবুল তাওবা নসীব হবে ইনশা আল্লাহ্।
কিছু প্র্যাক্টিক্যাল সলিউশানঃ
১) একাকী থাকা যাবে না কোন অবস্থাতেই। পিসি ও মোবাইল থেকে সব হারাম কনটেন্টসহ গান, মিউজিক ভিডিও, নাটক সব ডিলিট করতে হবে চিরতরে। মাসজিদ ও দ্বীনি ভাইদের সাথে সময় বেশি দিতে হবে, নিজেকে হালাল কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে।
২) বেশি বেশি যিকিরের অভ্যাস করতে হবে, ৫ ওয়াক্ত সালাত মাসজিদে গিয়ে জামায়াতের সাথে আদায় করতে হবে, অর্থসহ কুরআন তিলাওয়াতের অভ্যাস করতে হবে।
৩) এমন জায়গায় বসে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ ইউজ করা উচিত যেন আপনি কী করছেন তা বাসার সবাই দেখতে পারে, নেট ইউজের সময় ভুলেও রুমের দরজা বন্ধ করা যাবে না। যদি করেন তবে শয়তানের জন্য আপনি দরজা খুলে দিলেন। স্কুল পড়ুয়া ছোট ভাই বোন থাকলে ভুলেও তাদেরকে নেট দেয়া যাবে না, ফেইসবুকের তো প্রশ্নই উঠে না। জরুরী প্রয়োজনে ইউজের জন্য জাস্ট কল করা যায় এমন সেট দিন, মাল্টিমিডিয়া সেট দিলে নিজেই বিপদ ডেকে আনবেন। কারণ বয়সটা কৌতূহলের, কৌতূহল থেকে জন্ম নেবে হারাম জিনিসে অভ্যস্থ হওয়া।
৪) প্রতিবার পিসি ওপেনের আগে “আউযুবিল্লাহ…” পড়ে শয়তানের কাছ থেকে আল্লাহ্র সাহায্য চেয়ে নেয়া উচিত। এরপরও যদি না পারেন তবে নেট লাইন বিচ্ছিন্ন করুন, স্মার্টফোন বাদ দিয়ে শুধু কল করা যায় এমন সেট ইউজ করুন। টিভি দেখা পুরোপুরি বাদ দেন, পেপারের বিনোদন পাতা ভুলেও উল্টাবেন না।
৫) ফেইসবুকের নিউজ ফিডে কোন নিউজ পোর্টালে লাইক, নারীর আইডি ফলো করা সম্পূর্ণভাবে বর্জন করুন। ইউটিউবে ইসলামিক চ্যানেলগুলো সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যেন ইউটিউবে ঢুকলে আজেবাজে সাজেশান চোখে না পড়ে ওই ইসলামিক চ্যানেলগুলো চোখে পড়ে। অ্যাডব্লক ইউজ করতে ভুলবেন না।
৬) পর্ণ দেখাই যদি শেষ আমল হয় তবে কী হবে চিন্তা করে দেখা উচিত। ওই অবস্থায় মালাকুল মাওত জান কবয করলে কী অবস্থা হবে ভেবে দেখা দরকার। দুটি গুনাহে লিপ্ত থাকা অবস্থায় মৃত্যু হলে ঈমান হারা অবস্থায় মারা যেতে হয়। মদ্যপান আর যিনা। হাদিসের ভাষায় মুমিনের মাথার উপর থেকে ঈমান তখন সরে যায়।
৭) আল্লাহ যদি ছাড় না দিয়ে সাথে সাথেই শাস্তি দেন? যদি চোখের শক্তি নিয়ে যান? অন্ধ হয়ে গেলে পর্ণ কেন, ঘরের দরজাটাও দেখা হবে না তখন। অথচ আল্লাহ্ সুবহানু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে সুযোগ দিচ্ছেন যেন আমরা ফিরে আসি। তারপরও কি আমরা ফিরে আসব না?
এই রোগকে থামাতে হলে এখনই থামাতে হবে। না হয় আর পারবেন না কোনদিনও। আল্লাহ্ সকলকে সাহায্য করুন।
শেষ করছি পবিত্র কুরআনের কিছু আয়াত দিয়ে, “অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে,এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।” (সূরা যিলযালঃ৭-৮)
“আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে; তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবেঃ হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি-সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারও প্রতি জুলুম করবেন না।”(সূরা আল কাহফঃ৪৯)
শত গুনাহ সত্ত্বেও রহমানুর রহিমের কাছে তাওবা করে আশা রাখি আমরা ইনশা আল্লাহ্ “নাফসুল মুত্বমায়িন্না” তথা প্রশান্ত আত্মার অধিকারী হয়ে একদিন আমরা আমদের রবের কাছে ফিরে যাবো।
“হে প্রশান্ত মন, তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে।অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও।এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।” (সূরা ফজরঃ ২৭-৩০)।
আল্লাহু মুসতায়ান।
***সৌজন্যেঃ- Sabet Bin Mukter***