ইমাম আবদুর রহমান ইবন হাসান (রহ) কয়েকজন সাহাবা যেমনঃ বিলাল (রাঃ),আব্দুল্লাহ ইবনে হুযাইফা (রাঃ) ও অন্যান্যরা যেসকল অত্যাচারের সম্মূখীন হয়েছিলেন,সে ঘটনাগুলো বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ “সুতরাং এই ছিলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের (রাঃ) অবস্থা। তাঁদেরকে কাফের-মুশরিকরা এমনভাবেই অত্যাচার করতো। তাহলে এই সাহাবাদের তুলনায় ওদের কি অবস্থা যারা সামান্য পরীক্ষা (ফিতনা) আসলেই বাতিলের দিকে ছুটে যায়, বাতিলকেই আঁকড়ে ধরে এবং সত্যকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে– কাফেরদের প্রতি ভালবাসা দেখায়,তাদের প্রশংসা করে এবং তাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে!? আসলে এরা তাদের মত যাদের ব্যাপারে আল্লাহর বলেছেনঃ
“যদি নগরীর বিভিন্ন দিক থেকে তাদের বিরুদ্ধে শত্রুদের প্রবেশ ঘটে, অতঃপর তাদেরকে বিদ্রোহের (ইসলাম ত্যাগ করার) জন্য প্ররোচিত করা হত, তবে তারা অবশ্যই তা করে বসত, তারা এতে কালবিলম্ব করত না শুধুমাত্র কিছু ব্যতিত” । (সূরা আহযাব ৩৩: ১৪)
- “মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে জড়িত হয়ে আল্লাহর এবাদত করে।যদি সে কল্যাণ প্রাপ্ত হয়, তবে এবাদতের উপর কায়েম থাকে এবং যদি কোন পরীক্ষায় পড়ে, তবে পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। সে ইহকালে ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত। এটাই প্রকাশ্য ক্ষতি”। [সূরা হজ্জ ১১]
“কতক লোক বলে, আমরা আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি; কিন্তু আল্লাহর পথে যখন তারা নির্যাতিত হয়, তখন তারা মানুষের নির্যাতনকে আল্লাহর আযাবের মত মনে করে। যখন আপনার পালনকর্তার কাছ থেকে কোন সাহায্য আসে তখন তারা বলতে থাকে, আমরা তো তোমাদের সাথেই ছিলাম। বিশ্ববাসীর অন্তরে যা আছে, আল্লাহ কি তা সম্যক অবগত নন”? [সূরা আনকাবুত ১০]
- “যারা মুমিন, তারা বলেঃ একটি সূরা নাযিল হয় না কেন? অতঃপর যখন কোন দ্ব্যর্থহীন সূরা নাযিল হয় এবং তাতে জেহাদের উল্লেখ করা হয়, তখন যাদের অন্তরে রোগ আছে, আপনি তাদেরকে মৃত্যুভয়ে মূর্ছাপ্রাপ্ত মানুষের মত আপনার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখবেন। সুতরাং ধ্বংস তাদের জন্যে”।[সূরা মুহাম্মদ ২০]
“তুমি কি সেসব লোককে দেখনি, যাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তোমরা নিজেদের হাতকে সংযত রাখ, নামায কায়েম কর এবং যাকাত দিতে থাক? অতঃপর যখন তাদের প্রতি জেহাদের নির্দেশ দেয়া হল, তৎক্ষণাৎ তাদের মধ্যে একদল লোক মানুষকে ভয় করতে আরম্ভ করল, যেমন করে ভয় করা হয় আল্লাহকে। এমন কি তার চেয়েও অধিক ভয়। আর বলতে লাগল, হায় পালনকর্তা, কেন আমাদের উপর যুদ্ধ ফরজ করলে! আমাদেরকে কেন আরও কিছুকাল অবকাশ দান করলে না। ( হে রসূল) তাদেরকে বলে দিন, পার্থিব ফায়দা সীমিত। আর আখেরাত পরহেযগারদের জন্য উত্তম। আর তোমাদের অধিকার একটি সূতা পরিমান ও খর্ব করা হবে না”। [ সূরা নিসা ৭৭]
আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাদেরকে ইসলামের উপর দৃঢ় রাখেন এবং আমরা প্রকাশ্য ও গোপন সব ফিতনা থেকে তাঁর কাছে আশ্রয় চাই। এটা স্পষ্ট যে যারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর প্রতি যা নাযিল হয়েছিল,তাতে ঈমান এনেছিল। তারা যদি র্শিক এবং মুশরিকদের প্রতি বারাআহ (সম্পর্কচ্ছেদ) ঘোষণা না করতেন,বা তাদের ধর্ম ও উপাস্যদের ব্যঙ্গ না করতেন – তাহলে কি তাদেরকে এমন অত্যাচার ও কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হতো ?” [৯ আদ্-দুরুর আস-সানিয়্যাহ, (৮/১২৪), অধ্যয়- জিহাদ]
আসহাবুল কাহাফ ও আসহাবুল উখদূদ
সুতরাং যারা বাতিলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে, তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, এবং যাদের উপর অত্যাচার ও প্রাণ নাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে, অথচ যাদের হিজরত করার মতো কোন জায়গা নেই- তাদের জন্য উত্তম উদাহরণ আছে ঐ গুহার যুবকদের (আসহাবুল কাহাফ) মাঝে যারা তাদের পরিবার-পরিজন ছেড়ে এক দূরের পাহাড়ে গুহার ভেতরে বসবাস করতে গিয়েছিল এবং আরো উদাহরণ আছে গর্তের মানুষদের (আসহাবুল উখ্দূদ) মাঝে যাদেরকে তাদের আক্বীদাহ ও তাওহীদের জন্য পুড়িয়ে মারা হয়েছিল অথচ তারপরও তারা কোন ছাড় দেয়নি বা ইতস্ততঃ করেনি; আর আরো উদাহরণ আছে রাসূলূল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের মাঝে যারা হিজরত করেছেন, জিহাদ করেছেন, মেরেছেন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন।
আল্লাহ (সুব) বলেনঃ “এমনি ভাবে আমি প্রত্যেক নবীর জন্য অপরাধীদের মধ্য থেকে শত্রু করেছিলাম।” (সূরা ফুরকান ২৫: ৩১)
“অবশ্যই ইব্রাহীম এবং তাঁর অনুসারীদের মধ্যে তাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ, যারা আল্লাহ এবং আখিরাতে ঈমান রাখে।” (সূরা মুমতাহিনা ৬০: ৬)
আর এই পথের শেষে নিশ্চিতভাবেই আছে আল ফাউযুল কাবির (মহান সফলতা)।
- “কাফেররা তাদের রাসূলদের বলেছিল, ‘আমরা তোমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে অবশ্যই বহিষ্কৃত করব অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসতে হবে।’অতপরঃ রাসূলগণকে তাদের রব ওহী প্রেরণ করলেন,যালেমদেরকে আমি অবশ্যই বিনাশ করব। ওদের পরে আমি তোমাদেরকে দেশে প্রতিষ্ঠিত করবইঃ- ইহা তাদের জন্য যারা ভয় রাখে আমার সম্বুখে উপস্থিত হওয়ার এবং ভয় রাখে আমার শাস্তির”। (সূরা ইব্রাহীম ১৪: ১৩-১৪)
‘তারা বলল, এর জন্য এক ইমারত নির্মাণ কর, অতঃপর তাকে জ্বলন্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ কর। ওরা তাঁর বিরুদ্ধে বিরাট চক্রান্তের সংকল্প করেছিল; কিন্তু আমি ওদেরকে অতিশয় হেয় করে দিলাম। সে বলল, ‘আমি আমার রবের দিকে চললাম, তিনি আমাকে অবশ্যই সৎপথে পরিচালিত করবেন”। (সূরা সাফফাত ৩৭: ৯৭-৯৯)
- “তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, যদিও এখনও তোমাদের নিকট তোমাদের পূর্ববর্তীদের অবস্থা আসে নাই? অর্থ–সংকট ও দুঃখ–কষ্ট তাদেরকে ষ্পর্শ করেছিল এবং তারা ভীত ও কম্পিত হয়েছিল। এমন কি রাসূল এবং তাঁর সাথে ঈমান আনয়নকারিগণ বলে উঠেছিল, ‘আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে?’জেনে রাখ, অবশ্যই আল্লাহর সাহায্য নিকটে।” (সূরা বাকারা ২: ২১৪)
বর্তমানে আমরা ঠিক এটাই দেখতে পাই। আমাদের যেসকল আলেমগণ যারা তাগুতের মাথার উপর তাওহীদের পাতাকাকে তুলে ধরছেন, তারা ইউসুফ আলাইহি সালাম এর কথাকেই প্রমাণ করছেনঃ “হে আমার রব! তারা আমাকে যার প্রতি আহবান করছে তা অপেক্ষা কারাগার আমার নিকট বেশী প্রিয়।” (সূরা ইউসুফ ১২: ৩৩)
এটি সত্যিই যে, তখাকথিত ‘স্বাধীনতা’, ‘জাতীয়তাবাদ’, ‘মানবরচিত আইন’ এবং কাফিরদের সাথে মেলামেশার চাইতে কারগার, অত্যাচার আর শাহাদাত মুমিনদের কাছে অনেক প্রিয়।
আর যারা এই পথে চলবে তারা বলতে থাকবেঃ
“হে আমার সম্প্রদায়!
কি আশ্চর্য! আমি তোমাদেরকে আহবান করছি মুক্তির দিকে, আর তোমারা আমাকে ডাকছো অগ্নির দিকে!
তোমরা আমাকে বলছ, আল্লাহকে অস্বীকার করতে এবং তাঁর সমকক্ষ দাঁড় করাতে, যার সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান নাই; পক্ষান্তরে আমি তোমাদেরকে আহবান করছি পরক্রমশালী, ক্ষমাশীল আল্লাহর দিকে।
নিসন্দেহে তোমরা আমাকে আহবান করছ এমন একজনের দিকে যে দুনিয়া ও আখেরাতে কোথাও আহবান যোগ্য নয়।
বস্তুতঃ আমাদের প্রত্যাবর্তন তো আল্লাহরই নিকট এবং সীমালঙ্ঘনকারীরাই জাহান্নামের অধিবাসী। আমি তোমাদেরকে যা বলছি, তোমারা তা অচিরেই স্মরণ করবে এবং আমি আমার ব্যাপার আল্লাহর কাছে অর্পণ করছি। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি সবিশেষ দৃষ্টি রাখেন।” (সূরা গাফির ৪০: ৪১-৪৫)
“তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধ চিত্তে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং সালাত কায়েম করতে ও যাকাত দিতে, ইহাই সঠিক দ্বীন”। (সূরা বায়্যিনাত ৯৮: ৫)
যারা হুনাফা হতে চায় তাদের জন্য আল্লাহ স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেনঃ
“তোমাদের জন্য ইব্রাহীম ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।
যখন তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত কর তাদের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নাই। আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হলো শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য; যদি না তোমরা এক আল্লাহ্তে ঈমান আন”। (সূরা মুমতাহিনা ৬০: ৪)
সুতরাং মুওয়াহিদরা তাগুতের হাতে যে ব্যবহার পেয়েছেন এবং যে হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন, আমাদেরকেও তার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবেঃ
“[ফিরআউন] বলল, ‘কী ! আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়ার পূর্বেই তোমরা তার (মুসা) প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করিলে! নিশ্চয়ই, সে তো তোমাদের প্রধান, সে তোমাদেরকে জাদু শিক্ষা দিয়েছে। সুতরাং আমি তো তোমাদের হস্তপদ বিপরীত দিক হতে কর্তন করবই এবং আমি তোমাদেরকে খর্জুর বৃক্ষের কান্ডে শুলবিদ্ধ করবই এবং তোমরা অবশ্যই জানতে পারবে আমাদের মধ্যে কার শাস্তি কঠোরতর ও অধিক স্থায়ী।” (সূরা ত্বা-হা ২০: ৭১)
সুতরাং এর জবাবে পূর্ববর্তীদের মতো আমাদেরও বলতে হবে-
“কোন ক্ষতি নাই, আমরা আমাদের রবের নিকট প্রত্যাবর্তন করব।” (সূরা শুয়ারা ২৬: ৫০)
এবং – হে হানিফ, তুমি প্রস্তুত থাকো সেই উত্তর দেওয়ার জন্য যা পূর্ববর্তী মুয়াহীদগণ দিয়েছেনঃ
“তারা বলল, আমাদের নিকট যে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে তার উপর এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর উপর তোমাকে আমরা কিছুতেই প্রাধান্য দিব না। সুতরাং তুমি কর যা তুমি করতে চাও। তুমি তো কেবল এই পার্থিব জীবনের উপর কর্তৃত্ব করতে পার”। (সূরা ত্বাহা ২০: ৭২-৭৩)
- এবং এই দুই দলের (তাওহীদের দল আর তাগুতের দল) ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেনঃ
“যে তার রবের নিকট অপরাধী হয়ে উপস্থিত হবে তার জন্য তো আছে জাহান্নাম, সেথায় সে মরবেও না, বাঁচবেও না। এবং যারা তাঁর নিকট উপস্থিত হবে মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে, তাদের জন্য আছে সমুচ্চ মর্যাদা। স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেথায় তারা চিরস্থায়ী হবে এবং এই পুরস্কার তাদেরই, যারা নিজেদের পরিশুদ্ধ করেছে”। (সূরা ত্বা-হা ২০: ৭৪-৭৬)
এবং যারা এই দ্বীনকে অস্বীকার করে তাদের প্রতি এই ঘোষণা করতে আল্লাহ আমাদের আদেশ করছেন-
“বল, আমাদের জন্য আল্লাহ যা নির্দিষ্ট করেছেন তা ব্যতীত আমাদের অন্য কিছু হবে না; তিনি আমাদের কর্মবিধায়ক এবং আল্লাহর উপরই মুমিনদের নির্ভর করা উচিত। বল, তোমরা আমাদের দুইটি মঙ্গলের (শাহাদাত বা বিজয়) একটির প্রতিক্ষা করছো এবং আমরা প্রতিক্ষা করছি যে, আল্লাহ তোমাদেরকে শাস্তি দিবেন সরাসরি নিজ থেকে অথবা আমাদের হাত দ্বারা। অতএব তোমরা প্রতিক্ষা কর, আমরাও তোমাদের সাথে প্রতিক্ষা করছি”। (সূরা তওবাহ ৯: ৫১-৫২)
এই হলো মিল্লাতে ইব্রাহীম – কে আছে যারা এই পথে চলতে আগ্রহী?
এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আমার উম্মতের মাঝে সবসময়ই একটি দল থাববে যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং শত্রুকে পরাস্ত করতে থাকবে। তাদের বিরোধিতাকারীরা কিয়ামত পর্যন্ত তাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না।” (সহীহ মুসলিম) সুতরাং, “ইবরাহীমের উপর শান্তি বর্ষিত হউক।”(সূরা সাফফাত ৩৭: ১০৯)
হে আল্লাহ! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর পরিবারের উপর শান্তি ও রহমত দান করুন, যেভাবে আপনি ইব্রাহীম আলাইহি সালাম ও তাঁর পরিবারের উপর দান করেছিলেন। আমিন।
মিল্লাতে ইব্রাহীম অনুসরণ ও বাধাবিপত্তি
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের বলেনঃ “তোমরা যদি কোন কিছুকে অপছন্দ কর তবে এমন হতে পারে যে, আল্লাহ যার মধ্যে প্রভূত কল্যান রেখেছেন তোমরা তাকেই অপছন্দ করছো”। [১] (সূরা নিসা ৪: ১৯)
নিশ্চয়ই আল্লাহ বলেনঃ “মানুষ কি মনে করে নিয়েছে যে, আমরা ঈমান এনেছি এই কথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করে অব্যাহতি দেওয়া হবে? আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম; আল্লাহ অবশ্যই প্রকাশ করে দিবেন কারা সত্যবাদী এবং তিনি অবশ্যই প্রকাশ করে দিবেন কারা মিথ্যাবাদী”। (সূরা আনকাবুত ২৯: ২-৩)
শাইখ আবু মুহাম্মাদ আল মাক্দিসী বলেছেন, “জেনে রাখ! আল্লাহ তোমাদের ও আমাদের তাঁর প্রদর্শিত সরল সঠিক পথে দৃঢ় রাখুন। ইব্রাহীম আলাইহি সালাম-এর মিল্লাত ভুক্ত হতে হলে খুবই কঠিন, কষ্টকর এবং সংগ্রাম পরিপূর্ণ জীবন যাপন করতে হবে -কারণ এই পথে থাকার জন্য কাফিরদের প্রতি ও তাদের উপাস্যদের প্রতি প্রকাশ্য বা’রাআহ এবং আদা’য়াহর (শত্রুতা) ঘোষণা দেয়া আবশ্যক”।
দুনিয়া মুমিনদের জন্যে কারাগারস্বরূপ
সুতরাং,তাওহীদের এই পথে দুনিয়াবি দৃষ্টিকোণ থেকে কিংবা আপাতদৃষ্টিতে ফুল ছিটিয়ে রাখা হবে না বা এই পথ আকর্ষনীয়ও হবেনা, এই পথে আরাম বা কোমলতার আশাও করা যাবে না। বরং আল্লাহ কসম! যে এই পথ ঘিরে আছে কষ্ট এবং পরীক্ষা। “দুনিয়া মুমিনদের জন্যে কারাগারস্বরূপ”। কিন্তু এই পথের শেষে আছে উন্নত মিশক,আরামদায়ক জীবিকা, রায়হানের বাগিচা, এবং একমাত্র রবের চিরসন্তুষ্টি অর্জন। নিজেদের বা অন্য মুসলিমদেরকে এইকষ্টের ভেতর প্রবেশ কারো ইচ্ছাধীন নয়, বরং এই পথে চলতে হলে এমন কষ্ট ও পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়া আল্লাহর সুন্নাহ যার মাধ্যমে তিনি মন্দ ও ভালোর মাঝে পার্থক্য করে দেন। এই পথ এমন এক পথ যে, এই পথে খেয়ালখুশি বা আমিত্ম–আত্মপূজার দাস অথবা ক্ষমতালোভী মানুষ কখনো চলতে পারেনা কারণ এই সম্পূর্ণ তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়।
এবং মুশরিকরা কখনো এই পথ পছন্দ করেনা
কারণ এটা তাদের এবং তাদের মিথ্যা উপাস্যদের প্রতি বারাআহ প্রদর্শন করে এবং তাদের র্শিককে উম্মোচিত করে দেয়।যারা এই মিল্লাতে ইব্রাহীমে নেই, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা দুনিয়াতে প্রাচুর্য ভোগ করে এবং তাদের উপর কোন পরীক্ষাও আসে না কারণ প্রত্যেক মানুষকে আল্লাহ (সুব) তার ঈমানের মজবুতী অনুযায়ী পরীক্ষা করেন।
এ জন্যই সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয় নবীদেরকে,
তারপর যারা তাদের কাছাকাছি ঈমানের অধিকারী,
তারপর যারা এদের কাছাকাছি।
এরপর যারা এদের কাছাকাছি ,
এভাবেই আল্লাহ মানুষদেরকে তাদের ঈমানের ও তাওহীদের মর্যাদানুসারে কঠিন পরীক্ষার মাঝে ফেলে মান যাচাই করেন।
যারা মিল্লাতে ইব্রাহীম অনুসরণ করে তাদের পরীক্ষা হয় খুবই কঠিন,
কারণ এরা হুবহু সেই পথে দাওয়াহ দেয় যে পথে নবীরা দাওয়াহ দিতেন, যেমনটি ওয়ারাকা ইবন নওফেল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলেছিলেনঃ “তুমি যা নিয়ে এসেছো তা নিয়ে এর আগে যেই এসেছে, তাদের সবাইকেই শত্রুরূপে নিয়েছে”। [২] সুতরাং এখন যদি দেখা যায় যে কেউ দাবী করছে যে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দাওয়াহ দিতেন সেই একই দাওয়াহ দিচ্ছে এবং তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই পথে চলতেন সেই একই পথে চলছে অথচ তার প্রতি কাফিররা এবং এবং কুফরী আইনে গঠিত সরকার ও তার নেতারাশত্রুতা দেখাচ্ছে না, বরং সে তাদের সাথে একসাথে শান্তিতে বসবাস করছে তাহলে এই ব্যক্তির দাবী কতটা সত্যি তা বিচার করে দেখা উচিত। হয় সে ভুল পথে চলছে,তার দাওয়াহর সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দাওয়াহর মিল নেই এবং সে বক্রপথে চলে গেছে[৩] ; আর নয়তো সে মিথ্যা দাবী করছে এবং নিজেকে এমন একটা রূপ দেয়ার চেষ্টা করছে যার যোগ্যতা তার নেই। হয়তো সে নিজের নফসের অনুসরণ করছে, হয়তো সে সকল মতবাদের মানুষকেই খুশি করতে চাচ্ছে ,[৪] অথবা হয়তো সে দুনিয়ার মোহে পড়ে কাফেরদের পক্ষ নিয়ে এটা করছে যাতে সে মুসলিমদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরগিরি করতে পারে।
বড় দায়িত্ব বয়ে আনে বড় সাফল্য
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই মিল্লাত ইব্রাহীম একজন মানুষের উপর অনেক গুরুদায়িত্ব চাপিয়ে দেয় এটা সত্যি- কিন্তু এর মাধ্যমেই আসে বিজয়, আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং সর্বোত্তম সাফল্য (ফাউজুল কাবির)। এবং এর মাধ্যমেই মানুষ দুই দলে ভাগ হয়ে যায়ঃ মু’মিনদের দল এবং কুফরী, ফিসক, সীমালঙ্ঘনকারী মুশরিকদের দল। এতে পরিষ্কার হযে যায় যে কারা আসলেই আল্লাহর অনুগত আর কারা শয়তানের অনুগত। নবীদের দাওয়াতের বৈশিষ্ট্য এরকমই ছিল।
অথচ এখন আমরা দেখছি সত্য আর মিথ্যা একসাথে মিশে যাচ্ছে, ইসলামের তথাকথিত বাহকরা তাগুতের দিকে ঝুঁকে পড়ছে, দাড়িওয়ালা মানুষরাও আজকাল ফাসিকীন (প্রকাশ্য গুনাহগার) আর ফাজিরীনদের (ফিতনা-ফাসাদকারী) সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে, সৎ এবং মুত্তাক্বী মানুষের চেয়ে তারা এখন এদেরকেই বেশি সম্মান দিচ্ছে যদিও এরা প্রকাশ্যে নানাভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করছে। নবীরা তো কখনোই এমনটা করেননি। বরং তাঁদের দাওয়াহ ছিলো আল্লাহর আইন অমান্যকারীদের প্রতি বিরোধিতা (বারাআহ) এবং প্রকাশ্য শত্রুতা, তাঁরা কখনো আল্লাহর আইনের ব্যাপারে কাফেরদের সাথে কোন সমঝোতা করেননি বা কোনরকম ছাড়ও দেননি।
সুতরাং আমরা যদি সত্যিই স্পষ্টভাবে মিল্লাতে ইব্রাহীমকে বুঝতে পারি এবং আমাদের মধ্যে যদি এই চেতনা আসে যে এটাই হলো নবীদের ও তাঁদের অনুসারীদের পথ এবং এটাই হলো ইহকাল ও পরকালে বিজয়, সাফল্য ও সুখের পথ- তাহলে আমাদের নিশ্চিতভাবে এটাও জেনে রাখতে হবে যে, প্রত্যেক যুগেই তাগুত এর বিরোধিতা করেছে, তারা এই মিল্লাতকে ভয় পায় এবং ইসলামের প্রচারকদের (দুয়াত) মধ্য থেকে এটা সরিয়ে দিতে তারা সবসময় তৎপর থাকে[৫] ।এ ব্যাপারে আল্লাহ (সুব) অনেক আগেই মক্কী যুগে অবতীর্ণ সূরা কালাম-এর একটি আয়াতে আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেনঃ “তারা চায় যে, তুমি (কাফেরদের ব্যাপারে) নমনীয় হও, তাহলে তারাও নমনীয় হবে”। (সূরা ক্বালাম ৬৮: ৯)
সুতরাং তারা চায় যে ইসলাম প্রচারকরা মিল্লাতে ইব্রাহীম ছেড়ে দিয়ে অন্য কোন ভ্রান্ত পথ গ্রহণ করুক।
‘ইয্হার আদ-দ্বীন’ বা ‘দ্বীনকে প্রকাশ করা’ অর্থ কি?
সত্যিই এই পথ ইহকালের জীবনে কষ্ট, বিপদ, আগুন, অত্যাচার, যুদ্ধ, হিজরত, বন্দীত্ব আর শাহাদাত দিয়ে বেষ্টিত। আর পরকালের জীবনে আছে নবীদের ও সাহাবাদের সাথে একত্রে অবস্থান এবং আল্লাহ্কে দেখার পুরস্কার। যে সকল নবীগণ এই পথে চলেছেন, তাঁদের কারো কারো উদাহরণ আমরা স্বচোখে দেখি- “ধিক্ তোমাদেরকে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদত কর তাদেরকে! তবুও কি তোমরা বুঝিবে না? ওরা বলল, ‘তাকে (ইব্রাহীমকে) পুড়িয়ে দাও, সাহায্য কর তোমাদের দেবতাগুলিকে তোমরা যদি কিছু করতে চাও” । (সূরা আম্বিয়া ২১: ৬৭-৬৮)
“তারা বলল, এর জন্য এক ইমারাত নির্মাণ কর, অতঃপর ওকে জ্বলন্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ কর”। (সূরা সাফফাত ৩৭: ৯৭)
“উত্তরে ইব্রাহীমের সম্প্রদায় শুধু এই বলল,‘তাঁকে হত্যা কর অথবা অগ্নিদগ্ধ কর’। (সূরা আনকাবুত ২৯: ২৪)
এবং এই সবকিছুই হয়েছে কারণ তাঁরা ছিলেন ‘হানিফা’।
শেখ মুহাম্মাদ বিন আবদিল লাতিফ ইবনে আবদির রহমান (রহ) বলেছেন, “এটাই হচ্ছে ইয্হার আদ–দ্বীন (দ্বীনকে প্রকাশ করা)। যেসব মূর্খরা মনে করে যদি তাদেরকে সালাত পড়তে দেয়া হয়, কুরআন তিলাওয়াত করতে দেয়া হয় বা কিছু নফল আমল করতে দেয়া হয়, তাহলেই ইয্হার আদ–দ্বীন হয়ে গেলো,তাদের এই দাবী এক ভ্রান্ত দাবী, তারা আসলে বিরাট ক্ষতির মধ্যে আছে। কারণ, যেই ব্যক্তি সত্যি সত্যিই নিজের দ্বীনকে প্রকাশ করে এবং কাফিরদের প্রতি বারাআহ ঘোষণা করে, তাকে কখনোই কাফিরদের মধ্যে থাকতে দেয়া হয়না,বরং কাফিররা হয় তাকে মেরে ফেলে অথবা বিতাড়িত করে। যেমনটি আল্লাহ (সুব) বলেছেনঃ “কাফিরগণ তাদের রাসূলগণকে বলেছিলঃ আমরা তোমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে অবশ্যই বহিষ্কৃত করব অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসতেই হবে”। (সূরা ইব্রাহীম ১৪: ১৩) আর নবীদের আলাইহি সালাম প্রতি কাফিরদের শত্রুতা আরো বেড়ে যায় যখন নবীরা তাদের উপাস্যদের ব্যঙ্গ করেন, তাদের ধর্মকে বিদ্রুপ করেন এবং তাদের চিন্তাভাবনাকে ঠাট্টা–উপহাস করেন”।
আসহাবুল কাহাফের ঘটনার যুবকেরা, যারা ছিলো মিল্লাত ইব্রাহীম অনুসারী, তারা একে অপরকে বলছিলঃ “তারা যদি তোমাদের বিষয় জানতে পারে তবে তোমাদেরকে প্রস্তারাঘাতে হত্যা করবে অথবা তোমাদেরকে ওদের ধর্মে ফিরিয়ে নিবে এবং সেক্ষেত্রে তোমরা কখনও সাফল্য লাভ করবে না”। (সূরা কাহফ ১৮: ২০)
কাফিররা শু’আইবকে আলাইহি সালাম বলেছিলঃ “তাঁর সম্প্রদায়ের দাম্ভিক প্রধানগণ বললঃ হে শু’আইব! আমরা তোমাকে ও তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আমাদের জনপদ হতে বহিষ্কৃত করবই অথবাতোমাদেরকে আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসতে হবে। তিনি বললেনঃ যদিও আমরা তা ঘৃণা করি তবুও” ? (সূরা আরাফ ৭: ৮৮)
দেখুন আল্লাহর এই নবী কাফিরদের হুমকি শুনেও কিভাবে তাদের মুখের উপর জবাব দিয়ে দিলেন। এই ঘটনা আমাদের বিলালের (রাঃ) কথা মনে করিয়ে দেয়। কাফিররা যখন নানাভাবে তাকে অত্যাচার করলো, তারপর মরুভুমির উত্তপ্ত বালুর উপর শুইয়ে দিয়ে তার উপর ভারী পাথর চাপিয়ে দিলো এবং তাকে কুফরী কথা বলার জন্য আদেশ করলো, এর পরও তিনি শুধু বলতে থাকলেনঃ ‘আহাদ। আহাদ’- আর কাফেররা তাঁকে অত্যাচার করতেই থাকলো, অথচ এর পরও ঠিক শু’আইব আলাইহি সালাম-এর মতোই তিনি উত্তর দিলেন, “আল্লাহর শপথ! আমি যদি আর কোন কথা জানতাম যা তোমাদেরকে আরো বেশি রাগান্বিত করবে, তাহলে এখন আমি সেটাই উচ্চারণ করতাম”। [৬]
সুতরাং, নিশ্চয়ই সমস্ত হুনাফার পথ এমনই হয়।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন আহমদ আল হাফাথী (রহ) বলেছেন, “চিন্তা করে দেখো যে, নবুওতের পর থেকে হিজরত পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবাদের কেমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। আর চিন্তা করো ঐ সময় তাঁরা কিসের দিকে আহবান করতেন এবং কি থেকে নিষেধ করতেন। প্রায় দশ বছর ধরে কুরআনের বিভিন্ন আয়াত নাযিল হচ্ছিল এবং মানুষ এগুলো মেনে নিচ্ছিলো অথবা বিরোধিতা করছিলো। কে মুমিন আর কে কাফির এটাই ছিলো বন্ধুত্ব ও শত্রুতার মাপকাঠি; এই ভিত্তিতে তারা বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসীদের দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। যে ব্যক্তিই রাসূলুল্লাহকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মান্য করেছিলো এবং অনুসরণ করেছিলো, সেই ছিল মুক্তিপ্রাপ্ত মুওয়াহিদ। আর যে তাঁকে অমান্য করেছিল এবং অবজ্ঞা করেছিল, সেই ব্যক্তি থেকে গিয়েছিল ক্ষতিগ্রস্ত মুশরিক। এই দশ বছর সালাত, সিয়াম ইত্যাদি ফরয ছিল না, অন্যান্য ফরজ কাজগুলোতো দূরের কথা- কোন কাবায়ের (কবিরা গুনাহসমূহ) নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়নি, বা কোন হুদুদের (ইসলামের বিধান অনুযায়ী শাস্তির) কথাও বলা হয়নি। এ সময় অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছে; ঈমানদারগণ জান্নাতে গেছেন, আর কাফিররা আগুনে। সুতরাং, ভাই ও বোনেরা,আমরা যদি একটু চিন্তা করি তাহলেই বুঝবো,কোথায় রয়েছে সুস্পষ্ট মঙ্গল ও সফলতা”।[৭]
এবং শেখ হামাদ ইব্ন আতিক (রহ) বলেছেন, “অনেক মানুষ মনে করে যে, কেবলমাত্র দুটি শাহাদাহ উচ্চারণ করতে পারলে আর মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়তে যদি কোন বাধা না আসে তাহলেই দ্বীনকে প্রকাশ করা হয়ে গেলো- অথচ দ্বীনের ঘোষণা প্রকাশ করল না, অধিকন্তু তারা মুশরিক ও মুরতাদ (মুসলিম নামধারী সকল নেতা-নেত্রী যারা আল্লাহর প্রদত্ত বিধান দ্বারা শাসন না করার জন্য দ্বীন থেকে বের হয়ে গেছে) শাসিত দেশে বাস করছে- তাহলে সে নিশ্চিতভাবেই একটি ভয়ংকর ভুল করছে”।
আমাদের জেনে রাখা উচিত যে, কুফরের বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে এবং কাফিরদের বিভিন্ন দল বিভিন্ন ধরনের কুফরীতে লিপ্ত। এদের একেক দল একেক ধরনের কুফরীর জন্য বিখ্যাত। একজন মুসলিম কখনোই দ্বীন প্রকাশ্য করার দাবী করতে পারবে না, যতক্ষণ না সে এই প্রত্যেক দলকে তাদের নিজ নিজ কুফরীর জন্য বিরোধিতা না করবে। এবং একই সাথে এদের বিরুদ্ধে শত্রুতা দেখাতে হবে এবং নিজেকে ওদের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে।
সুতরাং
যারা শিরক করে তাদের সামনে দ্বীনকে প্রকাশ করার অর্থ হলো ‘তাওহীদ’–কে স্পষ্ট করা, র্শিকের বিরোধতা করা এবং এর ব্যাপারে মানুষদেরকে সাবধান করা, ইত্যাদি।
আর যারা নবুওতকে অস্বীকার করে তাদের সামনে দ্বীনকে প্রকাশ করার অর্থ হলো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে আল্লাহর রাসূল, সেটা প্রকাশ্যভাবে ঘোষণা করা এবং এই লোকদের আহবান করা যেন তারা একমাত্র তাঁকেই অন্ধভাবে অনুসরণ করে এবং অন্য কারো অন্ধ অনুসরণ না করে।
আবার কেউ যদি সালাত ত্যাগ করার মাধ্যমে কুফরী করে, তাহলে তার সামনে দ্বীনকে প্রকাশ্য করতে হলে তার সামনে সালাত আদায় করতে হবে এবং তাকেও সালাত পড়ার জন্য আদেশ করতে হবে।
আর কেউ যদি কাফিরদের সহযোগিতা ও তাদের গোলামী করার মাধ্যমে কুফরীতে লিপ্ত হয়- তাহলে তাদের কাছে দ্বীনকে প্রকাশ করতে হলে তাদের প্রতি শত্রুতা এবং ঘৃণা দেখাতে হবে এবং মুশরিকদের প্রতি বারাআহ ঘোষণা করতে হবে। [৮]
————————————————————————————————–
১ এই ক্ষেত্রে সূরা বাকারার [আয়াত:২১৪] টি উল্লেখযোগ্য, যেখানে আল্লাহ (সুব) বলেন: “তোমাদের জন্য যুদ্ধের বিধান দেয়া হল যদিও তোমাদের নিকট তা অপ্রিয়। কিন্তু তোমরা যা অপছন্দ কর সম্ভবত তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যা তোমরা ভালবাস সম্ভবত তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ জানেন আর তোমরা জানো না।”
২ সহীহ বুখারী।
৩ যেমন অনেকেই আছে ‘ তাবলীগ’ –(ইসলামের দাওয়াত দেয়ার) নাম দিয়ে এক কুফরী রাষ্ট্র থেকে অপর কুফরী রাষ্ট্রে ভ্রমণ করে,অথচ ক্রুসেডাররা (কাফেররা) তাদের বিরোধীতা করে না। আর এর কারণ হলো যে, কাফেররা এটা ভাল করেই উপলব্দি করতে পারে যে, এইসব ‘তাবলীগীরা’ উপকারের চেয়ে ইসলাম,তাওহীদ ও জিহাদের আরো বেশী ক্ষতি করছে।
৪ যেমন অনেক ‘মুসলিম’ নামধারী যারা ধর্ম নিরোপেক্ষবাদে বিশ্বাসী যারা বলে, “ধর্ম যার যার, দেশটা সবার” অথবা“মুসলিম, হিন্দু, খৃীষ্টান, বৌদ্ধ, আমরা সকলেই এক ভ্রাতৃত্বে আবদ্ধ”, ইত্যাদি।
৫ যেমন আল্লাহ (সুব) বলেনঃ “তারা সর্বদা তোমাদের বিরোদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যে পর্যন্ত তারা তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে না দেয়, যদি তারা সক্ষম হয়।” [সূরা বাকারা ২: ২১৭]
৬ তফসীর ইবন কাসীর
৭ দারাজাত আস-সা’ঈদীন
৮ সাবিল আল-নাযাহ (পৃঃ৯২-৯৫), অধ্যায়- ইযহার আদ-দ্বীন