জান্নাতের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

নিম্নে কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক জান্নাতের সংক্ষিপ্ত বিবরণ পেশ করা হল:

🔶 সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন,

أَعْدَدْتُ لِعِبَادِيَ الصَّالِحِينَ مَا لَا عَيْنٌ رَأَتْ وَلَا أُذُنٌ سَمِعَتْ وَلَا خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ

“আমি আমার সৎকর্ম শীল বান্দাদের জন্য এমন সব সামগ্রী প্রস্তুত করে রেখেছি যা কোন মনব চক্ষু অবলোকন করে নি কিংবা কোন মানব মনে যার কল্পনাও উদ্রেক হয় নি।” [সহীহ বুখারী হা/৩০০৫ ও মুসলিম, হা/৫০৫০ (হাদীসে কুদসী) ]

🔶 সহীহ বুখারীতে আরও বর্ণিত হয়েছে, আবু হারায়রা রা. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَوْضِعُ سَوْطٍ فِي الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِنْ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا

“জান্নাতের এক ধনুক সমপরিমাণ স্থান দুনিয়া ও তম্মধ্যস্থিত সবকিছু থেকে উত্তম।” [সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ: জান্নাতের বিবরণ এবং জান্নাত সৃষ্টি করা হয়েছে। হা/৩০১১]

🔸 সহীহ বুখারীতে সাহল বিন সাদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি,

مَوْضِعُ سَوْطٍ فِي الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا

“জান্নাতের এক ছড়ি সমপরিমাণ স্থান দুনিয়া ও তম্মধ্যস্থিত সব কিছু হতে উত্তম।” (সহীহ বুখারী)

🔰 জগত বিখ্যাত মনিষী ইমাম ইবনে কাইয়েম র. বলেন, যে গৃহ আল্লাহ স্বহস্তে নির্মাণ করার পর তা তাঁর প্রিয় বান্দা-বান্দীদেরর জন্য আবাসস্থল হিসেবে নির্ধারণ করেছেন এবং রহমত ও সন্তোষ দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন সে গৃহের কিভাবে মূল্য পরিমাপ করা যায়?

জান্নাতের নির্মাণশৈলী ও উপকরণ সামগ্রী:
আপনি যদি জান্নাতের নির্মাণশৈলী ও উপকরণ সামগ্রী সম্পর্কে জানতে চান তাহলে নিম্নে তা উপস্থাপন করছি:
🌼 জান্নাতের মাটি কুস্তরী ও জাফরান সমৃদ্ধ।
🌼 জান্নাতের ছাদে আল্লাহর আরশ অবস্থিত।
🌼 জান্নাতের নুড়ি পাথর গুলো এক একটি মহামূল্যবান মনি-মুক্তা।
🌼 প্রাসাদের প্রতিটি ইট স্বর্ণের তৈরি।
🌼 বৃক্ষরাজির গোড়া গুলো সাধারণ কাঠ নয় বরং স্বর্ণ ও রৌপ্যের তৈরি।
🌼 এগুলোর ফল-ফলাদি মটকার মত বড়, মাখনের চেয়ে নরম এবং মধুর চেয়ে মিষ্টি।
🌼 এগুলোর পত্র-পল্লব মসৃণ কাপড়ের চেয়ে সুন্দর।
🌼 এর নদী-প্রস্রবণ কোনটি দুধের, যার সাধ পরিবর্তন হয় না। কোনটি শরাবের যা পানকারীদের রসনা তৃপ্ত করবে। আর কোনটি পরিষ্কার-স্বচ্ছ মধুর।
🌼 এর খাদ্য সামগ্রী হল জান্নাতিদের পছন্দ মাফিক বিচিত্র ধরণের ফলমূল ও নানা জাতের পাখির মাংস।
🌼 পানীয় হল তাসনীম ( সুমধুর পানীয় বিশেষ) যানজবীল (আদা) ও কর্পূর মিশ্রিত।
🌼 জান্নাতের প্রাসাদগুলোর দুই দরজার চৌকাঠের মধ্যে চল্লিশ বছরের পথের ব্যবধান।
🌼 এর মধ্যস্থিত বৃক্ষরাজির ছায়ার দৈর্ঘ্য হচ্ছে, একেকটি বৃক্ষের ছায়াতলে একজন দ্রুত গতি সম্পন্ন ঘোড়া সওয়ার এক হাজার বছর ধরে দ্রুত বেগে ঘোড়া ছুটিয়েও অতিক্রম করতে পারবে না।
🌼 এর পরিধি হল, একজন নিম্ন মর্যদার অধিকারী জান্নাতী তার রাজত্বের পরিসীমা, খাট-পালং, প্রাসাদ এবং বাগ-বাগিচার ভিতর দিয়ে দু হাজার বছর চলতে পারবে।
🌼 জান্নাতের তাঁবু এবং গম্বুজগুলো মণি-মুক্তার তৈরি। প্রতিটি তাঁবুর ভিতরের প্রশস্ততা ষাট মাইলের পথ।
🌼 আর জান্নাতিদের পরিধেয় হল, স্বর্ণ খচিত রেশমি পোশাক।
🌼 তাদের স্ত্রীগণ হবে উন্নত বক্ষা, সমবয়স্কা তরুণী। যাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে যৌবনের সুধা প্রবহমান। গোলাপের পাপড়ি এবং আপেল সদৃশ গণ্ডদেশ। ডালিম সদৃশ উন্নত বক্ষদেশ। মনি-মুক্তা সদৃশ সারিবদ্ধ দন্তরাজি। পাতলা, কমনীয় ও আকর্ষণীয় কোমর। মুখ মণ্ডলের সৌন্দর্য ছটায় যেন চন্দ্র-সূর্য প্রবাহিত হয় আর মৃদু হাসিতে যেন বিদ্যুৎ চমকায়। এরা তারুণ্যে সকলেই সমবয়স্কা। তাদের সৌন্দর্য যেন আকাশের চন্দ্র-সূর্য কেও হার মানায়।

পরিশেষে দুয়া করি, মহান আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদেরকে তার প্রিয়ভাজন বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত করে চিরসুখের নীড় জান্নাতের অধিবাসী হওয়ার তওফীক দান করেন। তিনি সর্ব শ্রোতা ও দুয়া কবুল কারী।
———————
তওবা জান্নাতের সোপান
অনুবাদ ও গ্রন্থনা:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
(লিসান্স: মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব)।
দাঈ জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।