বিয়ের জন্য নারীর উপযুক্ত পাত্র বাছাইয়ের ব্যাপারে ভাইদের কটূক্তিমূলক কথার উত্তর

আজকে একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লিখতে বাধ্য হলাম। আমার পরিচিত এক ভাইয়ের একটি ম্যারেজ মিডিয়াতে আমি লাইক দিয়েছি। তাদের বিভিন্ন পোস্ট আমি প্রায়ই দেখি। সেখানে একটা অত্যন্ত নোংরা বিষয় আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বোনেরা যখনি বিয়ের ক্রাইটেরিয়া হিসেবে পেশাগত উৎকর্ষ প্রাপ্ত কোন পাত্রের কথা বলছে নিচে কিছু ভাই এসে তাদের নামে কুৎসা রচনা করছে। বিষয়গুলো এরকমঃ

১। দ্বীনদার কিভাবে মাদ্রাসার হুজুর (তাদের ভাষায় মুফতি, আলেম ইত্যাদি) ছাড়া অন্য কিছু চায়?
২। মেয়েটা যেহেতু ডাক্তার চেয়েছে তাই সে লোভী
৩। পাত্রীর পোস্টে উপহাস করে হাহা রিএকশন দেওয়া। তিন ধরণের মানুষ এ কাজ করে বলে লক্ষ্য করেছিঃ মাদ্রাসা পাস, বেকার যুবক অথবা দাড়িচাছা যুবক।
৪। মেয়েটাকে কেউ ডিফেন্ড করে কিছু বললে অশ্লীল অশ্রাব্য ভাষায় গালি গালাজ। অনেক সময় কিছু মাদ্রাসা পাসদের এই বিষয়ে পারদর্শিতা অত্যন্ত বেশী।
৫। তারা দাবীই করে দ্বীনদার ছেলের চাকরি থাকেনা। দ্বীনদার মানুষের টাকা পয়সা থাকেনা। (কতবড় ডাহা মিথ্যা কথা!)

আমি বিষয়টিকে প্রথমে ইসলামী পরে মনস্তাত্ত্বিকভাবে বিশ্লেষণ করব ইনশা আল্লাহ্‌।

বেকার যুবকের করনীয় কি?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

عن ابن مسعود قَالَ : ” كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَبَابًا لَا نَجِدُ شَيْئًا فَقَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنْ اسْتَطَاعَ منكُم الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ )

‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন,নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমরা কতক যুবক ছিলাম; আর আমাদের কোন কিছুছিল না। এই হালতে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেন, হে যুব সম্প্রদায় [1]! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিয়ে করে। কেননা, বিয়ে তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম পালন করে। কেননা, সওম তার যৌনতাকে দমন করবে।
(বুখারী ৫০৬৬)

এই হাদিস থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে বিয়েতে সামর্থ্যের বিষয় বিদ্যমান। আর এ সামর্থ্যের বিরাট একটা অংশই আর্থিক সামর্থ্য। ইবনু হাজার আল আসক্বালানী আন নাওয়াওয়ী থেকে উদ্ধৃতি দেন,

“আর যারা বিয়ের ব্যয় বহনের সঙ্গতি রাখে না তারা সওম পালন করবে। সওম পালন তাদের যৌন উত্তেজনা দমন করবে। কারণ পানাহারের মাত্রা কম হলে যৌন চাহিদা প্রদমিত হয়।”

অর্থাৎ আসল মূল কথা হচ্ছে আর্থিক সামর্থ্য না থাকলে দীনের আসল হচ্ছে রোজা রাখা।

হতদরিদ্র যে স্ত্রীকে খাওয়াতে পারবেনা, তাকে ইমোশনের কারণে হুট হাট বিয়ে করা ইসলামের আউলা ও উত্তম উপদেশ নয়, এমনকি সে অত্যন্ত জ্ঞানী উচ্চ শিক্ষিতও যদি হয়। দেখুন হাদিসঃ

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَعَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ أَبِي الْجَهْمِ بْنِ صُخَيْرٍ الْعَدَوِيِّ، قَالَ سَمِعْتُ فَاطِمَةَ بِنْتَ قَيْسٍ، تَقُولُ قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏”‏ إِذَا حَلَلْتِ فَآذِنِينِي ‏”‏ ‏.‏ فَآذَنَتْهُ فَخَطَبَهَا مُعَاوِيَةُ وَأَبُو الْجَهْمِ بْنُ صُخَيْرٍ وَأُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏”‏ أَمَّا مُعَاوِيَةُ فَرَجُلٌ تَرِبٌ لاَ مَالَ لَهُ وَأَمَّا أَبُو الْجَهْمِ فَرَجُلٌ ضَرَّابٌ لِلنِّسَاءِ وَلَكِنْ أُسَامَةُ ‏”‏ ‏.‏ فَقَالَتْ بِيَدِهَا هَكَذَا أُسَامَةُ أُسَامَةُ ‏.‏ فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏”‏ طَاعَةُ اللَّهِ وَطَاعَةُ رَسُولِهِ خَيْرٌ لَكِ ‏”‏ ‏.‏ قَالَتْ فَتَزَوَّجْتُهُ فَاغْتَبَطْتُ بِهِ ‏.‏

ফাতেমাহ বিনতে কায়েস (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেনঃ তোমার ইদ্দত পূর্ণ হলে আমাকে জানাবে। ইদ্দত শেষ হলে আমি তাঁকে অবহিত করলাম। এরপর মুআবিয়া, আবূল জাহ্ম ইবনু সুখায়র ও উসামাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) তাকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাকে) বলেনঃ মুআবিয়া গরীব লোক, তার কোন সম্পদ নেই। আর আবূল জাহম স্ত্রীদের অধিক মারধর করে। তবে উসামাহ। ফাতেমাহ (রাঃ) দু’বার হাত দিয়ে এভাবে ইশারা করে বলেন, উসামাহ, উসামাহ। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেনঃ আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের আনুগত্যই তোমার জন্য কল্যাণকর। ফাতেমাহ (রাঃ) বলেন, আমি তাকে বিবাহ করলাম এবং তার নেক আমল আমার জন্য ঈর্ষণীয় ছিল।

(ইবন মাজাহ ১৮৬৯)

বরং খাওয়াতে পারবে, চালাতে পারবে এমন ব্যক্তিকে বিয়ে করাই উত্তম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চোখে মুআওয়ীয়াহ ধর্মের দিক থেকে কোন অবস্থাতেই খারাপ ছিলেন না, আমাদের দৃষ্টিতেও নন। তাই নয় কি? বরং তিনি অত্যন্ত উচ্চশিক্ষিত সাহাবী। এতদসত্বেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অতি দরিদ্র বলে অপর সাহাবী উসামাকে দেখিয়ে দিয়েছেন। রাদিয়াল্লাহু আনহুমা।

দরিদ্রকে বিয়ে দেওয়ার কিছু হাদিসঃ

১।

قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا يَعْقُوْبُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ أَبِيْ حَازِمٍ عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ أَنَّ امْرَأَةً جَاءَتْ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ يَا رَسُوْلَ اللهِ جِئْتُ لِأَهَبَ لَكَ نَفْسِيْ فَنَظَرَ إِلَيْهَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَصَعَّدَ النَّظَرَ إِلَيْهَا وَصَوَّبَهُ ثُمَّ طَأْطَأَ رَأْسَهُ فَلَمَّا رَأَتْ الْمَرْأَةُ أَنَّهُ لَمْ يَقْضِ فِيْهَا شَيْئًا جَلَسَتْ فَقَامَ رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِهِ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنْ لَمْ يَكُنْ لَكَ بِهَا حَاجَةٌ فَزَوِّجْنِيْهَا فَقَالَ هَلْ عِنْدَكَ مِنْ شَيْءٍ فَقَالَ لَا وَاللهِ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ اذْهَبْ إِلَى أَهْلِكَ فَانْظُرْ هَلْ تَجِدُ شَيْئًا فَذَهَبَ ثُمَّ رَجَعَ فَقَالَ لَا وَاللهِ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا وَجَدْتُ شَيْئًا قَالَ انْظُرْ وَلَوْ خَاتَمًا مِنْ حَدِيْدٍ فَذَهَبَ ثُمَّ رَجَعَ فَقَالَ لَا وَاللهِ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَلَا خَاتَمًا مِنْ حَدِيْدٍ وَلَكِنْ هَذَا إِزَارِيْ قَالَ سَهْلٌ مَا لَهُ رِدَاءٌ فَلَهَا نِصْفُهُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا تَصْنَعُ بِإِزَارِكَ إِنْ لَبِسْتَهُ لَمْ يَكُنْ عَلَيْهَا مِنْهُ شَيْءٌ وَإِنْ لَبِسَتْهُ لَمْ يَكُنْ عَلَيْكَ شَيْءٌ فَجَلَسَ الرَّجُلُ حَتَّى طَالَ مَجْلِسُهُ ثُمَّ قَامَ فَرَآهُ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مُوَلِّيًا فَأَمَرَ بِهِ فَدُعِيَ فَلَمَّا جَاءَ قَالَ مَاذَا مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنِ قَالَ مَعِيْ سُوْرَةُ كَذَا وَسُوْرَةُ كَذَا وَسُوْرَةُ كَذَا عَدَّهَا قَالَ أَتَقْرَؤُهُنَّ عَنْ ظَهْرِ قَلْبِكَ قَالَ نَعَمْ قَالَ اذْهَبْ فَقَدْ مَلَّكْتُكَهَا بِمَا مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنِ.

সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, একদা একা মহিলা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসুল! আমি আমার জীবনকে আপনার জন্য দান করতে এসেছি। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকিয়ে তার আপাদমস্তক লক্ষ্য করে মাথা নিচু করলেন। মহিলাটি যখন দেখল যে নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ফয়সালা দিচ্ছেন না তখন সে বসে পড়ল। এমন সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহাবীদের একজন বলল, যদি আপনার কোন প্রয়োজন না থাকে, তবে এ মহিলাটির সঙ্গে আমার শাদী দিয়ে দিন। তিনি বললেন, তোমার কাছে কি কিছু আছে? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কসম কিছুই নেই।

তিনি বললেন, তুমি তোমার পরিজনদের কাছে ফিরে যাও এবং দেখ কিছু পাও কি-না! এরপর লোকটি চলে গেল এবং ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কিছুই পেলাম না। নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দেখ একটি লোহার আংটি হলেও! তারপর সে চলে গেল এবং ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম, একটি লোহার আংটিও পেলাম না; কিন্তু এই যে আমার তহবন্দ আছে। সাহল (রাঃ) বলেন, তার কোন চাদর ছিল না। অথচ লোকটি বলল, আমার তহবন্দের অর্ধেক দিতে পারি। এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ তহবন্দ দিয়ে কী হবে? যদি তুমি পরিধান কর, তাহলে মহিলাটির কোন আবরণ থাকবে না। আর যদি সে পরিধান করে, তোমার কোন আবরণ থাকবে না।

লোকটি বসে পড়লো, অনেকক্ষণ সে বসে থাকল। এরপর উঠে দাঁড়াল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ফিরে যেতে দেখে তাকে ডেকে আনলেন। যখন সে ফিরে আসল, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কুরআনের কতটুকু মুখস্থ আছে? সে উত্তরে বলল, অমুক অমুক সূরাহ মুখস্থ আছে। সে এমনিভাবে একে একে উল্লেখ করতে থাকল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এ সকল সূরাহ মুখস্থ তিলাওয়াত করতে পার? সে উত্তর করল, হাঁ! তখন নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও তুমি যে পরিমাণ কুরআন মুখস্থ রেখেছ, তার বিনিময়ে এ মহিলাটির তোমার সঙ্গে বিবাহ দিলাম।

(বুখারী ৫০৩০)

২।

حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ الطَّالَقَانِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدَةُ، حَدَّثَنَا سَعِيدٌ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: لَمَّا تَزَوَّجَ عَلِيٌّ فَاطِمَةَ قَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَعْطِهَا شَيْئًا، قَالَ: مَا عِنْدِي شَيْءٌ، قَالَ: أَيْنَ دِرْعُكَ الْحُطَمِيَّةُ؟

ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আলী (রাযি.) ফাতিমাহ (রাযি.)-কে বিয়ে করেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তাকে কিছু প্রদান করো। তিনি বললেন, আমার নিকট কিছুই নেই। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমার হুতামীয়া বর্মটি কোথায়? (সেটাই দাও)।

উপরোক্ত হাদিস দুটি আপাত দৃষ্টিতে আমাদের প্রথমে উল্লেখিত হাদিস দুটির বিরোধী মনে হয়। কিন্তু দ্বীন ইসলামের কোন নস্ব অপর নস্বের সাথে বিরোধিতা করে না।

উভয় প্রকার হাদিসের সমন্বয়ঃ

দু’ভাগে উল্লেখিত হাদিসসমূহের মধ্যে কোন মত বিরোধ নেই। শাইখ সালেহ আল মুনাজ্জিদ বলেনঃ

والحديثان ليسا بمتناقضين بحمد الله ، وإنما جاء كل منهما لمورد يخصه ؛ فحديث ابن مسعود خطاب لعموم الشباب وعموم الراغبين في النكاح ، لبيان أن النكاح لا بد له من مؤنة وكفاية حتى يستطيع الزوج القيام بما يجب عليه من النفقة والكسوة والسكنى .
والباءة هي مؤن النكاح ، فأراد الشارع أن يبين هذا الأصل ، وهو أن الزواج ليس مجرد عقد أو قضاء شهوة في حِلّها ، وإنما هو مسئولية وتكليف ومحط قوامة الرجال على النساء .

এই দুটি হাদিসের মধ্যে একে অপরের প্রতি কোন বিরোধিতা নেই। আলহামদুলিল্লাহ। বরং এদের প্রত্যেকটি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রের জন্যে প্রযোজ্য। ইবনু মাসউদের হাদিস যুবকদের উদ্দেশ্য করে এবং তাদের প্রতি যারা সাধারণভাবে বিয়ে করতে চান – এ বিষয়টিতে আলোকপাত করার জন্যে যে বিয়ের জন্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ সহায় সম্বল প্রয়োজন যাতে স্বামী সে সকল কর্তব্য নিভাতে পারবে যা তার উপর অবশ্যকর্তব্য – স্ত্রীর যাবতীয় খরচ বহন করা এবং তাকে বাসস্থান ও পরিধেয় পোশাকের ব্যবস্থা করা।

এখানে (ইবনু মাসউদের হাদিসে) الباءة শব্দটির অর্থ বিয়ের কারণে খরচাপাতি। শরিয়াত প্রদানকারী অর্থাৎ আল্লাহ্‌ এই মূলনীতিটিতে আলোকপাত করতে চেয়েছেন – যা হচ্ছে বিয়ে শুধুমাত্র কোন ব্যক্তির খায়েশ পূরণের চুক্তি নওয়, বরং এটি দায়িত্ব ও কর্তব্য। আর নিশ্চিতভাবে স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব পুরুষের উপরেই বটে!

শাইখ ইবনু বায বলেনঃ

ودل أيضا على أن من عجز عن النكاح يشرع له الاشتغال بالصوم ; لأنه يضعف الشهوة ويضيق مجاري الشيطان ، فهو من أسباب العفة وغض البصر

এটি এও নির্দেশ করে যে, যে ব্যক্তি বিয়ে করতে অপারগ, তার জন্যে এই যে সে যেন রোজা রাখতে মনোনিবেশ করে, কেননা তা শাহওয়া (কামের তাড়না) কে দুর্বল করে আর শয়তানের প্রভাবকে কম করে দেয়। এটি চরিত্র রক্ষা ও অক্ষি সম্বরণের কারণ হতে।

সৌদি আরবের পার্মানেন্ট ফাতাওয়া কমিটির বক্তব্যঃ

المبادرة بالزواج للشاب هو السنة لمن استطاع تكاليف

যুবকদের জন্যে যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে করা সুন্নাহ হতে – যারা এর ফলে যেসব তাকলিফ (দায়িত্বজনিত কষ্ট অর্থাৎ বিয়ের কারণে খরচ) বহন করতে সক্ষম।

(রেফারেন্সঃ https://islamqa.info/…/%D8%AD%D8%AF%D9%8A%D8%AB-%D9%85%D9%8…)

অর্থাৎ এ কথা পরিষ্কার যে পরবর্তিতে বর্ণিত হাদিস সমূহ বিশেষ ক্ষেত্রের বিষয়, যা কেবলমাত্র সম্ভব হয়েছে পাত্রী বা পাত্রীর বাবার ইচ্ছের কারণে। কিন্তু এ বিষয়ের আসল হচ্ছে প্রথমে বর্ণিত হাদিস সমূহ। যেগুলো আম তথা সাধারণভাবে সকলের জন্যে।

তাই কোন মেয়ে যদি বেকার কাউকে বিয়ে করতে রাজি না হয়, তার দুর্নাম করা যাবে না, তার ঈমান কম এই সব খারাপ কথা বলা যাবে না। কারণ মেয়ের বাবা হয়ত মেয়ে চালানোর খরচ মেনে নাও নিতে পারে আর দারিদ্রতা মেনে নেওয়ার যথেষ্ট কারণ পাত্রীর নাও থাকতে পারে। আর শরিয়াত এ বিষয়ে পরিষ্কার অনুমতি দিয়েছে।

মনোস্তাত্বিক বিশ্লেষণঃ

ফাতিমা রাদিয়াল্লাহি আনহা এর বাবা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অল্প খরচের বিষয়টা নিশ্চয়ই মেনে নিয়েছিলেন। তাই সমস্যা হয়নি। তাছাড়া বিয়েটা হয়েছিল আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে।আলী ছিলেন উচ্চ বংশীয়, হ্যান্ডসাম, জ্ঞানী, বুদ্ধিমান, শৌর্যে বীর্যে অসাধারণ। উচ্চ যোগ্যতা আর উচ্চ বংশীয় পাত্রের সম্পন্ন পাত্রদের আজকের জমানাতেও অনেক ঘরের মেয়ে দিয়ে দেয়। আপনি পাচ্ছেন না, হয়ত অন্য পরিবারটিতে আপনাকে সেভাবে ভাবছেনা। তাই অযথা ঐ পরিবারের বা ঐ পাত্রীর সম্পর্কে কুৎসা রটিয়ে গুনাহ কামাবেন না। আপনিই বরং শরীয়ত বিরোধী কাজ করছেন।

আরব দেশে মিসইয়ার বলে এক ধরণের বিয়ে আছে, যেখানে মেয়ে তার অধিকার ছেড়ে দেয়। মেয়ে যদি ছেড়ে দেয়, তাহলে বিয়েতে কি সমস্যা থাকবে?

এ ক্ষেত্রে অনেক মাদ্রাসা পাস ভাই ও বেকার যুবকেরা অথবা আর্থিকভাবে প্রান্তিক শ্রেণীর ভাইরা একটা বিষয় প্রায়ই বুঝতে চান না, সেটা হচ্ছে সব শ্রেণীর মানুষের সাথে সব শ্রেণীর মানুষের সব সময় খাপ খায় না। মাদ্রাসা পাস ভাইরা অনলাইনে নিয়মিত অভিযোগ করে যান, কেন উচ্চ বংশীয়া সচ্ছল ধার্মিক মেয়েরা বিয়ের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মাদ্রাসা পাস ভাইদের বেছে নেবে না। প্রিয় ভাইকে বলতে চাই, যে সবার জীবনের আর্থিক সক্ষমতা সমান না হওয়ায় সবার সাথে সবার খাপ খায় না। যে মেয়েটাকে আল্লাহ্‌ একটা অত্যন্ত সচ্ছল পরিবার দিয়েছেন, তার আর্থিক চাহিদা হয়ত আপনার চাইতে বেশী। কিন্তু সেটা মেটাতে পারবে, এমন ধার্মিক কেউ যদি তিনি তার নিজের মহলে পেয়ে যান, তাহলে তাদের দুজনের মধ্যে বোঝাপড়া আপনার চাইতে অনেক বেশী হবে। এ ক্ষেত্রে অসুবিধা কোথায়? আপনি যেমন ধনীর ধার্মিক মেয়ে আপনাকে বিয়ে করছেনা বলে রাগ অভিমান করছেন এবং নিয়মিত গালিগালাজ করছেন, হাহা রিএকশন দিচ্ছেন, তেমনি এই মেয়েরও কি ধনীর ধার্মিক ছেলে বিয়ে করার অধিকার নেই? ঘুরেফিরে আপনিও তো তাই চান যা ঐ বোন চায়।

তাছাড়া বাস্তবতা হচ্ছে এখন অনেক ইংরেজি শিক্ষিত স্বচ্ছল ঘরের ভাই বোনেরা মাদ্রাসা পাস ভাইদের চাইতে নানা রিসোর্স থেকে পড়ালেখা করে অনেক বেশী ইসলামিক জ্ঞানার্জন করছেন। তাই ধার্মিক বা ইসলামিক বিষয়ে জ্ঞানী বিয়ে করতে হলে শুধু মাদ্রাসা পাস ভাই বিয়ে করতে হবে এটা একদম ফালতু কথা। আমি নিজেই আমার দেশের বাড়ি চট্টগ্রামে কিছু ভাইকে চিনি যারা অনর্গল আরবি পড়তে আর বলতে পারেন, অনেক মাদ্রাসা পাস ভাইদের চাইতে আক্বিদাহ মিনহাজ উসুল ফিকহে অন এভারেজ অনেক বেশী জানেন আর তারা মাদ্রাসা পাস নন। কিছু নির্বোধ মাদ্রাসা পাস ভাইদের হীনমন্যতা বশতঃ ছড়ানো এই মিথ্যাচারটা কবে বন্ধ হবে আল্লাহ জানেন।

এছাড়া যেসব ভাইরা স্বল্প ইনকাম করেন কিন্তু স্বচ্ছল ঘরের মেয়ে পাচ্ছেন না, আপনারা কি কোনদিন মাদ্রাসার মেয়েদের কথা চিন্তা করে দেখেছেন? কেন খামাখা টাকার পিছনে দৌড়িয়ে সময় নষ্ট করছেন? যদি আপনার ডেস্পারেশন থাকে, সে ক্ষেত্রে গালিগালাজ না করে মাদ্রাসার আপুদের বিবেচনা করলে আপনাদের অনেকটাই সমাধান হয় বলে আমি মনে করি।

আমি অবশ্য এ পরিস্থিতির জন্যে মাদ্রাসা সিস্টেমকে কিছুটা দোষারোপ করি। তবে সে গল্প আরেক পোস্টে করব ইনশা আল্লাহ্‌।

আপাতত এ পর্যন্তই।

***লিখেছেনঃ উস্তাদ আবু হাযম***